

আজকের রায় পুরো বিশ্বের জন্য একটি নজির হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ওসমান হাদি বলেন, পৃথিবীতে কোনো ক্ষমতাই স্থায়ী নয়। কোনো স্বৈরশাসক চিরকাল মানুষকে নিপীড়ন করে টিকে থাকতে পারে না। এই রায় শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির।
তিনি বলেন, মামলায় কামালের ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। আর রাজসাক্ষী আইজিপি মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও মামুন আদালতকে সহযোগিতা করেছিলেন, আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডও হতে পারত। কিন্তু সহযোগিতার কারণে সাজা পাঁচ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে।
ওসমান হাদি বলেন, শহীদ পরিবারগুলো বলছিলেন, মামুনের অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে ভালো হতো।
মামলায় একইসঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হলো আজ।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা ছাড়াও জুলাই-আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। ৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩টি অভিযোগ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি অভিযোগ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মামলার শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ বারবারই অভিযোগ করেছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড অর্থাৎ পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার বা সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক আইজিপি মামুন এই মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি। তিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
মন্তব্য করুন