কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উদ্ধারের পর শিশুটিকে হাসপাতালে নেন দুই হিজড়া

শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান হিজড়া আমিনা ও বৃষ্টি। ছবি : সংগৃহীত
শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান হিজড়া আমিনা ও বৃষ্টি। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পর্শে শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে পরিবারটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ৭ মাসের শিশু হোসাইন। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন হাজী রোড ঝিলপাড় বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

নিহতরা হলেন, সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫), মেয়ে লিমা (৭) এবং তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া, মোহাম্মদ অনিক (২০)।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর হোসাইনকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। হোসাইন এখন ভালো আছে।

আহত হোসাইনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান হিজড়া আমিনা ও বৃষ্টি।

মর্মান্তিক এ ঘটনার বর্ণনায় বৃষ্টি শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা ঘটনার সময় বাসাতেই ছিলেন। একপর্যায়ে হইচই শুনে বাসা থেকে বের হয়ে শোনেন, কয়েকজন মারা গেছেন। তখন তারা একটি বাচ্চাকে পানিতে ভাসতে দেখেন। তাকে তুলে নিয়ে এসে একটি বাসায় নিয়ে তেল মাখানো হয়। পরে বাচ্চাটির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে তিনি ও আমিনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন।

তিনি আরও জানান, আশপাশের কয়েক হাসপাতালে ঘুরে কোথাও বাচ্চাটিকে ভর্তি করানো যাচ্ছিল না। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি করানো হয়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সকালে হোসাইনকে ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা।

বৃষ্টি জানান, হোসাইনকে সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মর্গে শিশুটির বাবা, মা ও বোনের লাশ রয়েছে। অন্য স্বজনেরা সেখানে এসেছেন। তবে পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রতিবেশীরা শিশুটিকে তাদের কাছে নিয়ে রেখেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমকে জানান, শিশু হোসাইনকে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বিপরীত পাশে বাবার ভাড়া বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন মুক্তা। তাকে নিতে শ্বশুরবাড়ি আসেন স্বামী মিজান। রাতের খাবার শেষ করে সাড়ে ৯টার দিকে ভারি বৃষ্টির মধ্যেই দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানা এলাকায় নিজেদের ভাড়া বাসার উদ্দেশে রওনা দেন মিজান ও মুক্তা। পথে বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিজান, মুক্তা ও তাদের কন্যা সন্তান লিমা মারা যান। তবে বেঁচে যায় শিশুপুত্র হোসাইন।

সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চোরাই লাইনের মাধ্যমে পাশের ঝিলপাড় বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার দেয়ালের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হয়েছে, যাতে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। তারের কিছু অংশ সেই প্রলেপের ওপরও বেরিয়ে রয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানিতে তারের এ অংশ ডুবে গিয়ে এখান থেকেই ঘটেছে বড় দুর্ঘটনাটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই রোডের ফুটপাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বাসায় যাচ্ছিলেন মো. মিজান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। মিজানের কোলে ছিল কন্যাসন্তান লিমা, আর মুক্তার কোলে ছিল সাত মাসের ছেলে হোসাইন। মাদ্রাসার দেয়ালের শেষপ্রান্ত ও ভাই ভাই সুপার কফিসপ অ্যান্ড কনফেকশনারির সামনে আসতেই তারা পানিতে ছটফট করতে থাকেন। দূর থেকে অনেকেই এ ঘটনার ভিডিও করতে থাকেন। সে সময় অনিক নামে একজন এগিয়ে আসলে পরে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।

সেখানকার দোকানদার মো. জামাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা ছটফট করতে করতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যান।

নিহত মিজানের বাবা নাছির হাওলাদার সংবাদমাধ্যমকে, গত বুধবার রাতে মিজান বরিশাল থেকে এসেছে। এরপর বউ-বাচ্চাদের নিয়ে শ্বশুরের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় ফিরছিল। নিজ গ্রাম বরিশালের ঝালকাঠি থানার বিকনার গ্রামে তাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

মিজানের শ্বশুর ও মুক্তার বাবা মো. লিটন মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে দুপুরে কথা হয়। তারা চিড়িয়াখানার দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাড়া থাকত। সেখানে যাওয়ার সময় আমার মেয়ে, জামাই ও নাতনি মারা যায়।

এদিকে এ দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি শিশুকে পানি থেকে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য এক জায়গায় ৩ জন পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। আর এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফলে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় ধীরগতি। যার পরিণতি ভয়াবহ যানজট। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষজন। লম্বা সময় ধরে একই স্থানে আটকে থাকে অসংখ্য যানবাহন।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি থাকবে আরও দুই দিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামীকাল শুক্র ও শনিবার রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নখসহ মানুষের আঙুল পাওয়া গেল চিকেন রোলে, অতঃপর...

সাড়ে ৩১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ আটক ২

স্পাইডারম্যান সেজে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন যুবক, বড় জরিমানা করল পুলিশ

বাড়ি ফিরেছেন ফারুকী, তিশা লিখলেন আলহামদুলিল্লাহ

শোকজের খবরে যা বললেন ফজলুর রহমান

বিএনপির এক নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার

হাতাহাতির ঘটনায় ইসিতে এনসিপির অভিযোগ

‘কী বিক্রি করে নায়িকা হয়েছ’ শ্বেতাকে কটাক্ষ অভিনেত্রীর

চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে হাত-পা ভেঙে কুপিয়ে জখম

ভারতে আটক পুলিশ কর্মকর্তা আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি

১০

ক্রিকেট ম্যাচে ওভার না দেওয়ায় গুলি, ২ ভাই নিহত

১১

জামায়াত আমিরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাসায় গেলেন ইসহাক দার

১২

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থীসহ দুজনের প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ

১৩

লাইনচ্যুত বগি রেখেই ছেড়ে গেল ট্রেন

১৪

‘এটা কি আমার বাপের টাকায় করেছে? আমার নাম কেন থাকবে’

১৫

রুমিন ফারহানার বক্তব্যের ‘কড়া’ জবাব হাসনাতের

১৬

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেন বিলম্বে যাত্রীদের বিক্ষোভ

১৭

খালেদা জিয়া নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য : বুলু

১৮

সিংহ শিকারের জন্য বেরিয়ে আসে, মোদিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ বিজয়ের

১৯

‘বাইরে থেকে লোক এসে দেশে সড়ক বানিয়ে দেয়, এটা লজ্জার’

২০
X