কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কবি রাধাপদ রায়ের (৮০) ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ২৫ বিশিষ্টজন। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ প্রতিবাদ জানান।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বিশিষ্টজনরা বলেন, বাংলাদেশের একজন কবির ওপর নির্যাতনের ঘটনায় আমরা লজ্জিত, বিব্রত ও ব্যথিত।
রাধাপদ রায়কে নির্যাতনের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়- এ কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সংস্কৃতিজনের ওপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাউলশিল্পী ও নাট্যকর্মীর ওপর হামলা, বাউলের বাদ্যযন্ত্র ও পাণ্ডুলিপিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, যার কোনোটিই রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা মনে করি, প্রতিটি ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেওয়ার প্রবণতা এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। আমরা রাধাপদ রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটিতে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ করে দেওয়ার যে আয়োজন দেশব্যাপী চলছে, তার সঙ্গে এ ঘটনাকে পৃথক করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো কারণ বা প্রকারেই এ ধরনের ঘটনা ঘটুক না কেন, এর পেছনে একটি বৃহৎ শক্তি রয়েছে, যারা দেশ থেকে সংস্কৃতিচর্চা নির্বাসনে পাঠাতে চায়, যারা রাধাপদ রায়ের মতো সংস্কৃতিসেবীদের একের পর এক আক্রমণ করে চলেছে।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকর্মী কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজন বাড়েনি বরং জাতীয় সাংস্কৃতিক আয়োজনকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে কুড়িগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী–নির্বিশেষে রাধাপদ রায়ের পাশে থাকবেন, এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
গত শনিবার নাগেশ্বরী উপজেলার গোদ্দারেরপাড় এলাকায় নিজ বাড়িতে রাধাপদ রায় হামলার শিকার হন। পাশের এলাকার দুই ভাই মো. রফিকুল ইসলাম ও কদুর আলীর বিরুদ্ধে এ হামলার অভিযোগ ওঠে। কবিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, খুশী কবির, রানা দাশগুপ্ত, এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সালেহ আহমেদ, জোবায়দা নাসরিন, পারভেজ হাসেম, দীপায়ন খীসা, জীবনানন্দ জয়ন্ত, সেলু বাসিত, এ কে আজাদ, জহিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, অলক দাস গুপ্ত, আবদুল আলীম, আবদুর রাজ্জাক এবং গৌতম শীল।
মন্তব্য করুন