কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সমন্বিত উদ্যোগই পারে রাজধানীর তাপমাত্রা কমাতে

পিআইবি, ক্যাপস এবং বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এর যৌথ আয়োজনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক। ছবি : কালবেলা
পিআইবি, ক্যাপস এবং বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এর যৌথ আয়োজনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক। ছবি : কালবেলা

এলনিনো বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এ বছরের তুলনায় পরবর্তী বছরের গ্রীষ্মকাল আরও বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সমন্বিত উদ্যোগই পারে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে। ‘শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি : কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন মতামত তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, শহর উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি মাথা রাখা হচ্ছে না। তাই অনেকাংশেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিনদিন তাপমাত্রা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে বস্তি ও পথের মানুষ।

বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এর যৌথ আয়োজনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে রাজধানীর তাপমাত্রা কমাতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, এ জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। শহরের তাপমাত্রা কমাতে নীতিগতভাবে যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন তার জন্য সংসদে তিনি কথা বলবেন।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম বলেন, গাছ কাটলে তার পরিবর্তে গাছ লাগাতে হবে। জলাধার গুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে আশার আলো জাগিয়েছে ছাদ বাগান সেক্ষত্রে সকলকে ছাদ বাগানের জন্য উৎসাহী করতে হবে।

মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক অনেকগুলো কারণ থাকলেও স্থানীয় কারণগুলো মুখ্য। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্থানীয় কারণগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। তিনি ঢাকা শহরের এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শহরের প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগানো এবং ছাদ বাগান বৃদ্ধি। রাস্তার বিভাজনে ফলজ, বনজ, ঔষধী গাছ রোপণ। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গাছ নিধন নয় বরং গাছকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকায় জলাধারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে ও দখলকৃত জলাধার ও জলাভূমি উদ্ধার করতে হবে। রাস্তা, বিল্ডিং ও স্থাপনার ছাদ, দেওয়াল, ছাদ এবং যানবাহন ইত্যাদিতে আলো ও তাপ প্রতিফলন করে রং করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময়ও সচেতন হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শহরাঞ্চল থেকে মানুষের আধিক্যতা কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে এই তাপ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। চরম গরমের সময় ব্যস্ততম এলাকা গুলোতে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পানি ছিটানো যেতে পারে, এতে বায়ুদূষণও কমে যাবে তাহলে শহরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং এসির ব্যবহার কমিয়ে মেকানিক্যাল ও প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন পদ্ধিতিতে বিল্ডিং এর তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর ইমেরিটাস প্রফেসর অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, শহর উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি মাথায় রাখছি না, তাই অনেকাংশেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার বাংলাদেশ এর চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা মানুষের শারীরিক মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি করছে। এলনিনো আসতেই থাকবে এবং এ বছরের তুলনায় পরবর্তী বছরের গ্রীষ্মকাল আরও বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। আমরা প্ল্যান করছি সিটি নেটওয়ার্ক গড়ার, ক্লাইমেট মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করছি। সমন্বিত উদ্যোগই পারে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) এর আবহাওয়াবিদ এস. এম. কামরুল হাসান বলেন, পৃথিবী তার নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়মে একবার উত্তপ্ত হয় আবার আবাস শীতল হয়। তবে কিছু মানুষ সৃষ্ট কারণে পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। এভাবে এলনিনো বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাই সর্বপ্রথম আমাদেরকে নিজেদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সর্বস্তরের মানুষদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে।

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, বর্তমান সময়ে যে সকল সৌন্দর্য বর্ধনকারী দালান নির্মাণ করা হচ্ছে তার অধিকাংশ দেয়ালই কাচের তৈরি যা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

গ্রীন সেভারস এর প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি বলেন, ঢাকা শহরে যদি গাছকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তাহলে, এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।

কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবাকা সান-ইয়াত বলেন, শহরের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বস্তিবাসীরা।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবি) পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমরা কংক্রিটের শহর চাই না, চাই বাসযোগ্য শহর, তার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, প্রাণ প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে নগর পরিকল্পনা করা।

অধ্যাপক মাহমুদা পারভীন বলেন, গবেষণার মাধ্যমে টেকসই সমাধান বের করে নিয়ে আসতে হবে।

প্রকৌশলী নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, ঘন-গিঞ্জি সু-উচ্চ দালানকোঠার কারনে ঢাকা শহর বায়ুপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে। যদি ভবনের মাঝে ফাঁকা স্থান রাখা যেত তবে স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ পাওয়া যেত এবং ঢাকার তাপমাত্রা কমে যেত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন, বিস্ফোরক মন্তব্য নুরের 

আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ওয়ানডে লড়াই শুরু আজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মরুর ফল চাষে সাফল্য

সালমানের ফার্ম হাউস নিয়ে যা বললেন রাঘব

ইরানের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলের বিস্ফোরক দাবি

বদলে গেল আর্জেন্টিনা-পুয়ের্তো রিকো ম্যাচের ভেন্যু

ভাত-ভর্তা প্রিয় বাঙালিদের জন্য ১১ পদের রেসিপি

চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ

অ্যান্টিভেনম দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি সোহেলের

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য যে উদ্যোগ নিল বিসিবি

১০

কমলালেবু কাণ্ডে বিতর্কে অক্ষয়

১১

৮ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

ভারতীয় আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তেই কপাল পুড়ল বাংলাদেশের

১৩

পুকুরে মিলল ভাই-বোনের মরদেহ, মায়ের দাবি হত্যা

১৪

হার্ট ব্লকের ঝুঁকিতে যারা

১৫

দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণে বাধা, ঘুরিয়ে দেওয়া হলো ১৫ ফ্লাইট

১৬

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

১৭

বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান কত

১৮

রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছড়ে পড়ল বিমান, পাইলটও নিহত

১৯

ঝোপে পড়ে থাকা ড্রাম খুলতেই দেখা গেল লোমহর্ষক দৃশ্য

২০
X