এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ‘টিপস’ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। তিনি এখন মোটামুটি ভালো আছেন। হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বেগম জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার লিভারে ‘টিপস’ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি সিসিইউতে মোটামুটি আছেন এবং ডাক্তাররা তার সঙ্গে কথা বলছেন। যে পোস্ট অপারেশন- এখন পর্যন্ত মোটামুটি আছেন।
গত বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন ঢাকায় আসেন। খালেদা জিয়া বসুন্ধরার ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন গত ৯ আগস্ট থেকে। গত আড়াই মাসে তাকে কয়েক দফা সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদরোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ‘টিপস’ এর পরে পেটে রক্তক্ষরণ ও পানি জমার উপশম হবে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ কালবেলাকে বলেন, ম্যাডামের লিভার সিরোসিসের জটিলতাকে এই টিপসের মাধ্যমে কিছুটা রহিত করা হলো। যাতে তার পেটে পানি, ফুসফুসে পানি ও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। টিপস করার ফলে উনি এখন কিছুটা সময় পাবেন। এতে করে চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ যেটা অর্থাৎ উনার লিভার প্রতিস্থাপন করার একটা সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে এটাও (টিপস) বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, লিভারের কাজ তো লিভার ছাড়া অন্য কোনো অর্গান করতে পারবে না।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের খবরগুলো পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। তার জন্য নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারকে উৎসাহিত করেছি এবং অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ায় এর বেশি বলার নেই। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের সফরের বিষয় তুলে ধরে করা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার ঢাকা সফরে এসে ‘৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন’– এমন একটি কথা এসেছে টেলিভিশনের আলোচনায়। এর সত্যাসত্য জানতে চাওয়া হয় মিলারের কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলব- না, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমরা কারও পক্ষ নিই না।’
২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক। উত্তরে মিলার বলেন, ‘আমাদের মন্তব্য হচ্ছে, যেটা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে সেটাই- আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ এবং এর বাইরে বাড়তি মন্তব্য আমার নেই।’
মন্তব্য করুন