কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০৬:১৫ পিএম
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উড়ালপথের নিচের জমি অপব্যবহারে বছরে ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি : সংগৃহীত
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার যানজট নিরসনে গত দুই দশকে উড়ালসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, ইউলুপ ও মেট্রোরেলসহ নানারকম উড়ালপথ নির্মিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এসব উড়ালপথের নিচে দখল-বেদখল, ব্যবহার-অব্যবহার ও অপব্যবহারে পড়ে আছে প্রায় ২০৭ একর জমি।

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় এটি মূল্যবান নগর-সম্পদের অপচয়, যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রতিবছর সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা অন্তত ২১ হাজার কোটি টাকা।

সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের (সিআইএইউ) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে সিআইএইউ বলছে, ঢাকার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে জনকল্যাণমুখী ও জনস্বাস্থ্যবান্ধব পরিকল্পনার মাধ্যমে উড়ালপথের নিচের এই মূল্যবান নগর-জমিকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। উড়ালসড়কের গতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই তা ‘সবুজ’ অবকাঠামোয় পরিণত করে বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা যাবে। এতে নগরের বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পথচারীবান্ধব নগরায়ন ত্বরান্বিত হবে।

রোববার (২৫ জুন) বিকেলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিআইএইউ-এর সেমিনার রুমে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সিআইএইউ-এর নির্বাহী পরিচালক স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন—সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান, ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হকসহ। এ ছাড়া পরিকল্পনাবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কয়েকজন সাংবাদিক এতে অংশ নেন।

সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের নির্বাহী পরিচালক স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ জানান, ফ্লাইওভার যেমন নগরের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল করছে, তেমনি এর নিচের জায়গাগুলোও গণপরিসর তৈরিতে ও জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে বেশকিছু জায়গায় পার্কিং, পাবলিক টয়লেট, পুলিশ বক্স, মসজিদ, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, ময়লা ফেলার ভাগাড় এবং ছোট দোকান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষের থাকার জায়গা চোখে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় নিম্নবিত্ত ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন ও পথশিশুদের খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করছে। অনেকসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোতে মাদকসেবন ও মাদক কেনাবেচা হয়। পথচারীদের জন্যও এটি নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সবুজায়ন করতে দেখা গেছে। মূল বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে এ নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বেশিরভাগ জমির সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি।

ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড স্ট্রাকচারের নিচের অংশে জনবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি জোন তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে থাকছে হাঁটাচলার পথ ও সাইকেলের লেন, নগর-কৃষি, বাগান, বনায়ন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। কিছু জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও শরীরচর্চা কেন্দ্র, সুইমিং পুল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পথনাটক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা নিম্নআয়ের মানুষেরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন। উড়ালসড়কের মতো অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা। এ বিষয়ে নগর প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং পরিকল্পনাগত ঘাটতি পূরণে অবদান রাখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজম (সিআইএইউ) জানিয়েছে, এই গবেষণা প্রকল্পের পদ্ধতি হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন ফ্লাইওভার-সংলগ্ন এলাকার স্থানীয়দের মাঝে নৃতাত্ত্বিক জরিপ করা হয়েছে, যেখানে ব্যবসায়ী, অস্থায়ী দোকানদার, বাসাবাড়িতে বসবাসকারী মানুষ, পথচারী এবং সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। জরিপের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাদের প্রতিদিনকার জীবনে ফ্লাইওভার ও এর নিচে ঢাকা পড়া জায়গার প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এর পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ, পরিবহন বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাগণ ও আইনবিদদের সহায়তায় সার্বিক নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ব্যাপারে নতুন কিছু ধারণা পাওয়া গেছে।

উড়ালসড়কের নিচের অব্যবহৃত জমির কার্যকর রূপান্তরের এই গবেষণায় ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদের নেতৃত্বে কাজ করেছেন স্থপতি শাফায়েত মাহমুদ, ওয়াসিলা ফাতিমা নিলিয়া এবং মো. ফাহিম হাসান রিজভী। এ ছাড়া বিভিন্ন ধাপে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী খান, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, অর্থনীতিবিদ ড. সৈয়দ আখতার মাহমুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, সওজ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. ওয়ালিউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিনুল হক মোল্লা এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক তানভীর সোবহান।

ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ আরও বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের শহরগুলো যেন জনকল্যাণে নগর-জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারে, যা আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে লাভজনক হবে। তবে ঢালাওভাবে কোনো রৈখিক পরিকল্পনা না করে স্থানীয় এলাকার আর্থসামাজিক চরিত্র ও বর্তমান ব্যবহারের ধরন বুঝে উড়ালপথের নিচের জায়গাগুলোর সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নিম্নবিত্তের মাথা গোঁজার ঠাই থেকে তাকে উচ্ছেদ না করে, অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা এবং সকলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে সৃষ্টিশীল পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরের বসবাসযোগ্যতা এবং জীবনযাত্রার মান বাড়ানো যায়।

‘উড়ালপথের মাধ্যমে সৃষ্ট নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের উপায়কে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এমনটা করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে এখন নগর প্রশাসন, পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও নগর-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন ধারণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা, জামিন দেওয়ায় বাদীর ক্ষোভ

রাশিয়ার পারমাণবিক প্লান্টে আগুন

এশিয়া কাপের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা করল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ

মেডিকেলে ‘আনফিট’ রিপোর্টে ভেঙে গেলে নবদম্পতির সংসার

যুদ্ধ সক্ষমতা ও বিশেষ প্রযুক্তি দেখাল উত্তর কোরিয়া

জঙ্গলে রহস্যময় জ্বলন্ত গাড়িতে পাওয়া গেল ২ পুরুষের মরদেহ

ডাকাতি করে পালানোর সময় ২ জনকে গণপিটুনি

দুঃসময় যেন পিছুই ছাড়ছে না পাক তারকা ক্রিকেটারের, এবার যেন হারাবেন পদটাই

হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে যা জানা জরুরি

বিপাকে স্বরা ভাস্কর

১০

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১১

মাঝ আকাশে নগ্ন অবস্থায় ধরা বিমানবালা

১২

মরদেহ দাফনের পর জীবিত ফিরে এলো রবিউল!

১৩

সারাক্ষণ চার্জার প্লাগে রাখেন? জেনে নিন কী হতে পারে

১৪

এশিয়া কাপে ভারতের একাদশ কেমন হবে, জানালেন তারকা ক্রিকেটার

১৫

বায়ুদূষণের শীর্ষে দুবাই, ঢাকার অবস্থান কত

১৬

মোদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন বিজয়

১৭

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

১৮

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৯

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

২০
X