‘নিখোঁজ’ ছেলেকে কলিজার টুকরা আখ্যা দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মা মমতাজ বেগম।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এ দাবি জানান তিনি।
‘মায়ের ডাক’ সংগঠনটি ২০০৯ সাল থেকে নিখোঁজ ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত আনুমানিক ১২টার সময় র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাক পরিহিত লোকজন ঢাকার ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালগ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছোট ছেলে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রহমাতুল্লাহকে (২০) তুলে নিয়ে যায়। এরপর গত পাঁচ মাস ধরে র্যাব কার্যালয়, বিভিন্ন ডিবি অফিস, বিভিন্ন থানা ও হাসপাতাল ঘুরেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘নিখোঁজ’ রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা মমতাজ বেগম বলেন, আমি এখন কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস রহমাতুল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল সে। কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল, আমার পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আজও ফিরে এলো না। প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন, আমি কোথায় কার কাছে গেলে আমার সন্তানকে ফিরে পাব।
এ সময় রহমাতুল্লাহ’র বড় বোন রাজিয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সংসারে আমি বড় মেয়ে, আমার মেঝ ভাই ওবায়দুর বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছে। তার স্ত্রী সাথী আক্তার, আমার মা মমতাজ বেগম ও আমাদের সবচেয়ে ছোটভাই রহমাতুল্লাহ একই বাড়িতে থাকে। গত ২৯ আগস্ট রাতে আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা আমাদের বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ে। আমার মা ঘরের দরজা ও মূল ফটক খুলে বাইরে বের হলে তাদের কয়েকজন ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে এবং আমার ভাই রহমাতুল্লাহকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। কী কারণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরের দিন আমার মা মানিকগঞ্জ ও ধামরাই গেলে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। পরবর্তীতে গত ৭ অক্টোবর ধামরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়, যার নং-৩২৪। গুম হওয়ার পাঁচ মাস পরেও আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমার মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলাও ছিল না। তারপরও সে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, দেশের প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারত, আমরা জানতে পারতাম সে কী অপরাধ করেছে। কিন্তু এখন আমরা কিছুই জানি না।
রাজিয়া আক্তার বলেন, সারা দেশে আমার ভাইয়ের মতো শত শত মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। আমি সবাইকে ফেরত চাই।
মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমরা চাই না কেউ গুম হোক। আমার মা হাজেরা খাতুনের কান্না গত ১১ বছর শুনেছি। আজ আরেকজন মা মমতাজ বেগমের কান্না শুনতে পেলাম। আমাদের মায়ের ডাকের মিছিলে আরেকটি ছবি যোগ হলো। আমরা কখনো চাই না নতুন কোনো ছবি যোগ হোক। আমরা চাই, নিখোঁজ-গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরে যাক।
তিনি অবিলম্বে রহমাতুল্লাহসহ গুমের শিকার সকল সদস্যকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রহমাতুল্লাহ’র বড় খালা সায়রা খাতুন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, অন্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝুমুর আক্তার, বেবি আক্তার, মিনু আক্তার, ইমন ওমর, হ্যাপি আক্তার সুমনি, লামিয়া আক্তার মিম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন