ফয়সল আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৮ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বসন্তের দেশে চোখ থেকে শীতঘুম খসে পড়ার দিন আজ

পহেলা ফাল্গুনের এক অনুষ্ঠানে শিল্পীরা। পুরোনো ছবি
পহেলা ফাল্গুনের এক অনুষ্ঠানে শিল্পীরা। পুরোনো ছবি

তারপর, শীত-হেমন্তের শেষে বসন্তের দিন...। শাখে শাখে আজ পহেলা ফাল্গুন। শত বাহারি ফুলের ভিড়েও আজ বাঙালির নাক ঠিক আলাদা করে চিনে নেবে আম্রমুকুলের গন্ধ। জীবনানন্দের মতো আজ বহুকাল আগের কোনো এক রূপকথা মনে পড়ার দিন। আজ বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বসন্তের দেশে চোখ থেকে শীতঘুমও খসে পড়বে।

বসন্ত কবে থেকে বসন্ত হলো? বাংলার এই অঞ্চলে প্রাচীন আমল থেকেই বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার চল আছে নানা রূপে, নানা আচারে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে নৃত্যগীতের বসন্তোৎসবের রীতি চালু করেছিলেন। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে হয় প্রথম বসন্ত উৎসব। তবে ইতিহাস আরও প্রাচীন। পৌরাণিক কাল থেকেই আলাদা সমাদর ছিল বসন্তের। পৌরাণিক মতে মহাদেব শিবকে উদ্বেলিত করতে মদনদেবের আয়োজনে তৈরি এ ঋতুর সমীরণ তো এখনকার তরুণ-তরুণীর মনও মাতাল করে চলেছে।

প্রকৃতি যারা হৃদয়ে ধারণ করেন, তারা কিছুদিন থেকেই পেতে শুরু করেছেন মলয়পর্বত থেকে ছুটে আসা মলয়পবন। এ বাতাস যে কেমন কেমন, সেটা দুই লাইন কবিতা-না-লেখা মগজও চট করে ধরে ফেলে। ১৩ হোক আর ১৪ ফেব্রুয়ারি, তারিখ তো একটা উপলক্ষ মাত্র!

পঞ্জিকা শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে দুই বাংলায় খানিকটা রগড়া-রগড়ি চলেছে বটে। তবে দখিনা হাওয়ার কি আর তারিখ গোনার দায় পড়েছে! সে তার মতো কদিন ধরেই ফুটিয়ে চলেছে পলাশ-শিমুল। কিন্তু ঘটা করে ক্যালেন্ডারে এই বসন্ত উৎসব কে শেখাল? কে চালু করল পঞ্জিকা? শশাঙ্ক না আকবর? তর্কে ভারাক্রান্ত মনে বিকেলের আলো ঝলমলে মিঠাই রোদখানা ছিটকে এসে পড়লে মনে হয় তর্কই সার। কোনো কোনো ঋতু ঘোর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বটে, বসন্ত কিন্তু স্বমহিমায় উদ্ভাসিত সৃষ্টির সেই শুরু থেকেই।

তবে শুরুতে যা-ই ঘটুক, বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের বাঙালি সত্তায় বসন্ত-বন্দনার মূলে আছেন একজনই মলয়পর্বত—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বসন্ত নিয়ে যত লিখেছেন, তাতে জীবদ্দশার যাবতীয় বসন্ত কাটিয়ে দেওয়া যায় নির্বিঘ্নে—বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়, ওরে ভাই ফাগুন, রাঙিয়ে দিয়ে যাও, রং লাগল বনে বনে; রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বসন্ত দারুণ অসম্পূর্ণ। খরতাপেও যখন মন হর্ষে মেতে ওঠে, তখনো ভেতরের সত্তা গেয়ে ওঠে—আহা আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে!

বসন্ত বন্দনা বারেবারে এসেছে নজরুলের সৃষ্টিতেও—সহসা খুলিয়া গেল দ্বার/আজিকার বসন্ত প্রভাতখানি দাঁড়াল করিয়া নমস্কার। লিখেছেন—এলো বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায়, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত। বোঝা যায়, নজরুলের সঙ্গে বসন্তের বোঝাপড়া ছিল আরেকটু ঝাঁজাল, আরেকটু বেশি সৃষ্টিসুখের উল্লাসময়। কারণ, তিনি নিজেই ছিলেন ‘বাংলার বসন্ত’। তাকে এ বরমাল্য পরিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ! তিনিই তো নজরুলকে ‘জাতির জীবনে বসন্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন!

এদিকে, পহেলা ফাল্গুনে ভালোবাসারও দিন। এখানেও ঘুরেফিরে রবীন্দ্রনাথ—‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে।’ এতে ঋতুর আবেদন কমে গেল নাকি উৎসবে ভাটা পড়ল, এ নিয়ে উদ্বেগে নেই প্রকৃতি। যে মানবহৃদয় প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হওয়ার সূত্র জানে, তার কাছে বসন্ত যা, ভালোবাসাও তা।

আবার ধরুন, যারা ভালোবাসতে জানে, তাদের চেয়ে ভালো কি আর কেউ ত্যাগের মহিমা বোঝে! তারাই জানে, দেশ ও দেশের মানুষকে ভীষণরকম ভালোবাসলেই কেবল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কেউ প্রাণ দিতে পারে। ১৯৮৩ সালের এমনই এক মাতাল করা বসন্তের দিনে স্বৈরাচারের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেলরা। আজকের বসন্তময় ভালোবাসা দিবসে তাদের জন্য সভা-সমিতি না হোক, কেন ও কীভাবে তারা প্রাণ দিয়েছিলেন, চুপিসারে সেই আবেগখানা উপলব্ধি করলেও সমৃদ্ধ হবে নতুন যৌবনের দূতের মন। সেই মনে ঠাঁই পাবে না নিন্দুকের হীনম্মন্যতা কিংবা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো অসামাজিক বিষবাষ্প। আর কে কী বলল, তাতে কোনো স্থান-কালের প্রেমই তো কান দেয়নি কোনোকালে। জীবননান্দ তো বলেই গেছেন—প্রেমের পায়ের শব্দ আকাশে বেঁচে আছে! সুতরাং এই বসন্তে হৃদয়ও প্রস্ফূটিত হোক। অধিবর্ষ ছাড়াও বেড়ে যাবে ফাগুনের মেয়াদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে গণপিটুনি

সেই তন্বীর বিরুদ্ধে লড়বেন জান্নাতুন নাহার

দুই বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সিইউজে’র শোক

রাজধানীর পান্থপথে দেয়াল ধসে নিহত ১

কালকিনিতে আনিসুর রহমান খোকন / মায়েদের পাশে থাকবে বিএনপি

দিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত, জানালেন বিশেষজ্ঞ

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস কেমন হবে, জানা গেল

শান্ত-সৌম্যর বাদ পড়ার কারণ জানালেন গাজী আশরাফ

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১০

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

১১

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

১২

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

১৩

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৪

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

১৫

চট্টগ্রামে শিল্পী সম্মিলন ও আর্ট ক্যাম্পে মিলন মেলা

১৬

যে কারণে এশিয়া কাপ দলে সোহান-সাইফ, জানালেন প্রধান নির্বাচক

১৭

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে, জানালেন প্রশাসক

১৮

ভারতে মোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন থালাপতি বিজয়

১৯

‘নির্বাচনে কাজ করবে সাড়ে ৬ লাখ আনসার-ভিডিপি’

২০
X