ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে অনলাইনে যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে পেরেছেন তারাই বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন আজ। আজ তারা কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।
তবে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও এবার যাত্রীদের সে রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যাত্রীরা নির্ধারিত নিয়মে টিকিট পেয়েছেন আবার নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে ট্রেনও। দু-একটি ট্রেন কয়েক মিনিট দেরি করলেও সেটা যাত্রীরা মানিয়ে নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনে প্রবেশের জন্য আলাদা গেট করা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা এসব অস্থায়ী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা। সেখানেই ঈদযাত্রার জন্য স্টেশনে আসা যাত্রীর টিকিট চেক করে ভেতরের দিকে প্রবেশ করানো হচ্ছে। টিকিট ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। এদিকে ভেতরে প্রবেশ করেও টিকিট স্কান করে যাত্রা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীরা। কেউ মোবইল নিয়ে ব্যস্ত, কেউ গল্প করছেন, কেউবা তসবি জপছেন আবার কেউবা পত্রিকা পড়ছেন।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় অভিযোগ নেই ঈদযাত্রার যাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই রেলস্টেশনে পৌঁছে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আসছে। সবমিলিয়ে এবারের ঈদ যাত্রায় এখনও ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ নেই।
পরিবার নিয়ে ঈদে গ্রামে যাচ্ছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি রংপুর এক্সপ্রেসে কুড়িগ্রাম যাচ্ছি। টিকিট পেতে বা স্টেশনে কোনো ঝামেলা নেই। তেমন একটা ভিড়ও নেই। ট্রেন নির্ধারিত সময়েই ছাড়ছে।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, ট্রেনের টিকিট আমার মেয়ে অনলাইনে কেটে দিয়েছে। লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ঈদে ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি যাচ্ছি। ট্রেন কয়েক মিনিট দেরি করে ছাড়লেও এটা তেমন সমস্যা না। বাসে গেলেও এমন ১০ থেকে ৩০ মিনিট দেরি। সবমিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে।
রংপুর এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী ছাবিকুন্নাহার সোমা বলেন, এবার ঈদে এত সহজে বাড়ি যেতে পারছি ভাবতেই ভালো লাগছে। কোনো বিড়ম্বনা নেই। পরিবারের সবাইমিলে ট্রেনে যাওয়ায় আনন্দই আলাদা।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটি পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে ১৫টি ট্রেন। এছাড়া সকাল ১০টায় ছেড়ে যাবে জামালপুর এক্সপ্রেস, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে একতা এক্সপ্রেস, সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১১টায় তারাকান্দির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, এবারের ঈদযাত্রায় এখনও কোনো শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। আজ কোনো ট্রেন দেরিতেও ছাড়েনি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত খুবই ভালো অবস্থা। আশা করছি, যাত্রীরা এবারের ঈদযাত্রা উপভোগ করবেন।
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ ৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে আর ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৬ মার্চ। ঈদের আগে ২৮ মার্চ আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ এপ্রিলের টিকিট, ২৯ মার্চ ৮ এপ্রিলের টিকিট ও ৩০ মার্চ ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।
এছাড়া চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীদের অনুরোধে যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে ২৫ শতাংশ টিকিট পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন