ঈদের আনন্দ যাত্রা সবার জন্য বয়ে আনে না অনাবিল আনন্দ। কারও কারও ঈদযাত্রা আবার শবযাত্রায়ও পরিণত হয়। হাসি আনন্দের ঈদে কারও পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
মুসলমানদের বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ছেড়ে যান এক কোটির বেশি মানুষ। তাছাড়া আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো বা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঈদে যাতায়াত করেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ।
মূলত কোটি মানুষ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে ফিরে যান শেকড়ের কাছে। তবে আনন্দের এ যাত্রা সবসময়ই সুখকর হয় না; অনেক সময় তা পরিণত হয় বিষাদে। ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় পড়ে অনেকেই লাশ হয়ে ফেরেন নিজ পরিবারের কাছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে গত পাঁচ বছরে কেবল ঈদ মৌসুমে সড়ক, রেলপথ ও নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, ঈদে একসঙ্গে যে পরিমাণ মানুষ বাড়ি ফেরে, বাস্তবতা হলো পরিবহন মালিকদের নেই তত গাড়ি। তাই ঈদের আগে অধিক মুনাফার আশায় আনফিট গাড়ি কোনোমতে মেরামত করে নামিয়ে দেয় মহাসড়কে। রং করে পুরাতন নষ্ট গাড়ি সড়কে নামিয়ে দেয়, আর তাতেই ঘটে দুঘর্টনা।
দুর্ঘটনার আরও একটি বড় কারণ পরিবহন সংকটে সিটি সার্ভিসও উঠে যায় মহাসড়কে। যেসব চালক এসব গাড়ি চালায় তারাও মহাসড়কে চালানোর মতো দক্ষ নন। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা গাড়ি নিয়েও মহাসড়কে চলে যান চালকরা। তাতেও ঘটে দুর্ঘটনা।
বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, ঈদে সড়কে যে মৃত্যুর মিছিল নামে, তার আর্থিক ক্ষতির হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করছে, প্রতিটি ঈদে সড়ক-মহাসড়কে ৩শ থেকে ৫শ দুর্ঘটনা ঘটে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৪০০ এর বেশি মানুষের। পঙ্গু হয়ে পরিবারের বোঝা হয় কয়েক হাজার মানুষ। মূলত ঈদে অযান্ত্রিক যানবাহনের সঙ্গে যান্ত্রিক যানবাহন প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ঈদে গণপরিবহনের পাশাপাশি প্রায় ১২ লাখ রাইডার পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল আরোহীরাই বেশি প্রাণ হারায়।
মন্তব্য করুন