কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কে এই এমপি আনার, কেন এত আলোচনা?

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। পুরোনো ছবি
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। পুরোনো ছবি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। কয়েক দিন আগেই চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন এই এমপি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয়েছে তার মরদেহ।

কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। রহস্য দেখা দিয়েছে তার মৃত্যু ঘিরে। উঠছে নানা প্রশ্নও। তবে সব প্রশ্নের ভিড়ে একটি বিষয় সবাই জানতে চায়। কে এই এমপি আনার, তাকে ঘিরে এত আলোচনা কেন?

আনোয়ারুল আজিম আনারের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এক সময়ের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ করতেন আনার। অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের হোতা হিসেবেও পুলিশের খাতায় নাম ছিল তার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পান।

আনারের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও স্বর্ণ চোরাচালান, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি এবং চরমপন্থিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ৯টির বেশি মামলা ছিল।

ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে পুলিশ একবার তাকে আটক করলেও তার ক্যাডাররা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল।

ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের সময় আত্মগোপনে ছিলেন আনার।

ঝিনাইদহের রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আনার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে চোরাচালান করতেন তিনি।

ওই সময় কালীগঞ্জ থানাসহ মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে ‘টোকেন’ তৈরি করে তার বাহিনী। ওই টোকেন দেখালেই প্রশাসনের লোকজন মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি ছেড়ে দিত। এই টোকেন বাণিজ্য থেকে আনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

এই মাদক কারবারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিকও বনে যান। ১৯৯১ সালে আনার ঝিনাইদহের আরেক চোরাকারবারি পরিতোষ ঠাকুরের সঙ্গে মিলে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। স্বর্ণের বড় বড় চালান রাজধানী থেকে বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশে পাচার করতেন তারা।

১৯৯৬ সালে আনার বিএনপি থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের কারবারের সঙ্গে কালীগঞ্জ পৌরসভার এক কমিশনারের হাত ধরে অস্ত্র চোরাকারবারে জড়ান তিনি। তার অবৈধ অস্ত্রের চালান চরমপন্থি ক্যাডার সামসেল ওরফে রবিনের কাছে বিক্রি হতো।

কথিত আছে, সরকারের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ ভারতে আত্মগোপন করার পর তার মাধ্যমে অস্ত্র চোরাকারবার চালিয়ে যান আনার। বাগদা এলাকার মাদক সম্রাট জয়ন্ত কুমার, কার্তিক, গৌতম সাহা ও বনগাঁর দেবদাসের সঙ্গে আনারের মাদকের কারবার ছিল।

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে চুয়াডাঙ্গার লোকনাথপুর এলাকা থেকে ১২ কেজি ৯৫০ গ্রাম স্বর্ণ আটক করে তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর। চোরাকারবারিরা নিশ্চিত হয় যে, দর্শনা শ্যামপুরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম স্বর্ণগুলো ধরিয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনায় টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন সাইফুল।

তিনি নিজেও স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটে যুক্ত ছিলেন। ওই হত্যা মামলায় আনারসহ আসামি করা হয় ২৫ জনকে। কুষ্টিয়ার চরমপন্থি নেতা মুকুল, শাহীন রুমী, ঝিনাইদহের চোরাকারবারি পরিতোষ ঠাকুর, আনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিতোষ, আনারসহ বেশ কয়েকজন মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এ মামলায় আনারকে গ্রেপ্তারে ২০০৯ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন চুয়াডাঙ্গার বিশেষ আদালত।

এর দশ দিন পর ওই বছরের ২১ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তারের জন্য নিশ্চিন্তপুর গ্রামে তার বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে আনারের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো কমে যেতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলে ক্ষমতার দাপটে বেশিরভাগ মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন আনার।

উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টিভি নাইন বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ মে কলকাতায় যান আনার। একজন অফিসারের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। বরানগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম তার নাম গোপাল বিশ্বাস।

গত ১৩ মে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে ওঠেন আজিম। তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিজ সন্তানকে কোলে নিতে আদালত প্রাঙ্গণে বাবার কান্না

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘কাজিকি’, সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে

সরকারি নিয়োগ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা 

প্রাণ ফিরছে সাদাপাথরে, বাড়ছে পর্যটকের ভিড়

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ১১ দেশের

নির্বাচনে নয়, দায়িত্বে থাকতে চান বিসিবি সভাপতি বুলবুল

ভিকারুননিসা-হবিগঞ্জের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের ক্ষোভ প্রকাশ

সিলেটে কুরিয়ার ভ্যানে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে করতে কুষ্টিয়ায় চীনা যুবক

গুণী অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়ার ইন্তেকাল

১০

ইতিহাস আমাদের বিচার করবে : মুসলিম দেশগুলোর উদ্দেশে ইরান

১১

‘ক্যানসারে আক্রান্ত তৌহিদ আফ্রিদি’

১২

ফজলুর রহমান চাইলেন ৭ দিন, বিএনপি দিল ২৪ ঘণ্টা

১৩

বাস-প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪

১৪

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে বরিশাল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা

১৫

চিকুনগুনিয়া টিকার লাইসেন্স স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

১৬

সারা দেশে একযোগে ১৮৯ বিচারককে বদলি

১৭

জেলা-উপজেলায় আনসার বাহিনীর নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু

১৮

ওজন কমাতে ৭ প্রচলিত ধারণা ভুলে গেলেই ফল আসবে আরও সহজে

১৯

হিজাববিদ্বেষী শিক্ষিকার শাস্তি চাইল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস 

২০
X