তানজিনা তাবাস্সুম নোভা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রথমবার সৌদি ভ্রমণে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন

তানজিনা তাবাস্সুম নোভা
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হজ এবং ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সবার কাছে পরিচিত। তবে দেশটিতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। সৌদি ভ্রমণে দীর্ঘদিন বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পর্যটকদের জন্য এখন সেটি অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। ভ্রমণকারীদের জন্য দেশটি দুয়ার খুলে দিয়েছে, যাতে করে পর্যটকরা সেখানকার সব আকর্ষণীয় ও ধর্মীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।

অবকাশযাপন, বোমাঞ্চ বা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে দূর দূরান্তের মানুষ এখন সৌদিতে ভিড় জমাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি পর্যটকরাও। তবে আপনি যদি প্রথমবারের মতো সৌদি আরব বেড়াতে যেতে চান, তাহলে কিছু বিষয় জানা আপনার জন্য অতি আবশ্যক।

চলুন জেনে নেই, সৌদি ভ্রমণে যেসব বিষয় সম্পর্কে আপনার জানা দরকার ১। সৌদি ভ্রমণে সহজ ভিসা প্রক্রিয়া

বাংলাদেশিদের জন্য এখন সৌদিতে ওমরাহ, ট্যুরিজম বা স্টপওভার ভিসার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে সৌদি ভ্রমণ হয়ে উঠেছে আগের তুলনায় অনেক সহজ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও শেনজেন ভিজিট ভিসা আছে এমন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অন অ্যারাইভাল ভিসার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তাছাড়া, সম্প্রতি চালু হওয়া ৯৬ ঘণ্টার স্টপওভার ভিসা ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার আগে সৌদিতে ৯৬ ঘণ্টা সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে দেশটি স্টপওভার হিসেবে বাংলাদেশিদের জন্য চমৎকার।

২। বাংলাদেশ থেকে সহজলভ্য ফ্লাইট সৌদির বিমান চলাচল খাত বিশ্বে অন্যতম প্রধান স্থান অধিকার করে আছে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে এই খাত কাজ করে। নতুন নতুন এয়ারলাইনস সৌদির সাথে যুক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি দ্বিতীয় রুট হিসেবে চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত হয়েছে সৌদিয়া। এর আওতায় সপ্তাহে চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। জেদ্দা, মদিনা ও রিয়াদ থেকে ঢাকার বিদ্যমান রুটের সাথে এটি যুক্ত হবে। সৌদিয়ার এই নতুন ফ্লাইটের পাশাপাশি বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা পর্যন্ত সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে ফ্লাইনাস ও, ফলে বাংলাদেশ-সৌদির মধ্যে সংযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।

৩। পর্যটকদের কাছে সৌদির জনপ্রিয়তা ২০২৩ সালে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫৬% বেশি। এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের ৭ বছর আগেই ২০৩০ সালের মাঝে ১০০ মিলিয়ন পর্যটক নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনটিডব্লিউও) এর ২০২৪ সালের ব্যারোমিটার রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সৌদি।

৪। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আন্তর্জাতিক সূচক অনুসারে, জি২০ দেশগুলোর মধ্যে সৌদি সবচেয়ে নিরাপদ। এছাড়া টানা তৃতীয়বারের মতো মদিনা সারা পৃথিবীর মাঝে একা ভ্রমণকারী নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশের রেটিং দিয়েছে ইনশিওরমাইট্রিপ। ৫। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্থান ১০,০০০ এর বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৭টি স্থান আছে সৌদিতে। স্থানগুলো হলো: উরুক বানি মা’রিদ; হিমা সাংস্কৃতিক অঞ্চল, আল-আহসা মরুদ্যান, হাইল অঞ্চলের পাথর শিল্প; ঐতিহাসিক জেদ্দা, মক্কার প্রবেশদ্বার ; আদ-দিরিয়াহ্র আত-তুরাইফ জেলা , হেগরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

৬। ডাইভারদের জন্য স্বপ্নের জায়গা সৌদি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ডাইভিং স্পট। লোহিত সাগর উপকূল আর আরব সাগরের আদিম পানি, সাদা বালির সৈকত, সমৃদ্ধ প্রবাল প্রাচীর এবং চমৎকার কিছু জাহাজের ধ্বংসাবশেষ — দেখার মতো আছে অনেক কিছুই। সুন্দর ও দুর্লভ কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর দেখা মেলার সুযোগও থাকছে। পর্যটকদের হঠাৎ চোখে পড়ে যেতে পারে মিনিটে ১০৯ কিলোমিটার গতিতে চলা পৃথিবীর দ্রুততম মাছ ব্ল্যাক মার্টিন কিংবা বিপন্ন প্রজাতির নেপোলিওন ফিশ (কুইন অফ দ্য কোরাল রিফ নামেও পরিচিত)। লোহিত সাগর এলাকার আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল এবং তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে। ফলে সাঁতারু ও ডাইভাররা সারা বছর জুড়েই পাবেন উষ্ণ পানি।

৭। আতিথেয়তা আতিথেয়তাকে সৌদিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি এদেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষত পর্যটকদের সাথে উদার ও সদয় আচরণের জন্য সৌদির মানুষ পরিচিত। তাই ভ্রমণকারীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার আশা করতেই পারেন। এছাড়া দেশটিতে সুনির্দিষ্ট পোশাক পরার বিধান অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। আর নারীরা চাইলেই গলায় রঙিন স্কার্ফ কিংবা দেশটির ঐতিহ্যবাহী ঢিলেঢালা লম্বা পোশাক আবায়াও পরতে পারেন।

৮। ঐতিহ্যবাহী বাজার নামকরা ফ্যাশন ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ব্র্যান্ডসংবলিত আধুনিক ও বিলাসবহুল বহু শপিংমল সৌদিতে আছে। সেইসাথে আছে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী বাজার বা সুউক। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় আল বালাদের রাস্তাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। হিস্টোরিক নাইটস রুফটপ ক্যাফে থেকে উপভোগ করুন জেদ্দার আকাশ আর প্রদর্শিত শত শত প্রাচীন জিনিসপত্র। ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘ঐতিহাসিক জেদ্দা’ কিংবা পুরোনো শহর নামে পরিচিত জেদ্দার আল বালাদ জেলা। সপ্তম শতকের প্রাচীন ভবনের দেখা মিলবে এই জায়গায়। এর অসাধারণ স্থাপত্য দেখে দর্শনার্থীদের মনে হতে পারে যে, তারা অনেকটা সময় পিছিয়ে গিয়েছেন।

এছাড়া আগ্রহী ক্রেতাদের জন্য এর রাস্তায় রাস্তায় আছে অনেক পণ্য। আল বালাদের ভিড়ে ভরা বাজারগুলোতে মিলতে পারে অনেক গুপ্তধনের দেখা। পুরোনো শহরেই আছে সাতটি সুউক। সুউক আল আলাউয়ি নামক জেদ্দার সবচেয়ে পুরোনো সুউকটিও এখানেই অবস্থিত। চামড়ার জিনিস, আরবীয় সুগন্ধি, গহনা, পোশাকসহ আরও অনেক পণ্যসম্ভারের কারণে স্যুভেনির কেনাকাটার জন্য এই স্থানটি দারুণ।

তানজিনা তাবাসসুম নোভা : ফ্রিল্যান্স লেখক ও অনুবাদক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অহিংস ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শরীয়তপুর গড়ে তুলব : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

বাবা হওয়ার পর মেহরাবের নতুন গানের ঘোষণা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা

নির্বাচনের তপশিল নিয়ে সভা রোববার

পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হলেন ১২০ চিকিৎসক

ছেলেকে দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই চলে গেলেন গুম হওয়া ছাত্রদল নেতার বাবা

পূজা পরিষদ ও পূজা কমিটির মতবিনিময় / সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নির্বাচনের আগে-পরে এক মাস সেনা মোতায়েনসহ ৯ দাবি

‘এনসিপি সরকারে গেলে প্রাইভেট সেক্টরেও শুক্র-শনিবার ছুটি ঘোষণা করব’

নিজ ফ্ল্যাটেই মিলল নিখোঁজ স্কুল শিক্ষিকার লাশ

শিক্ষক সমাজই হচ্ছে একটি জাতির ভিত্তি : মান্নান

১০

কোন দেশের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চান গার্দিওলা?

১১

মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি, জাবি শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

১২

কড়াইলের দুর্গতদের পাশে আনসার-ভিডিপির ৯ দিনের মানবিক সেবা কার্যক্রম সমাপ্ত

১৩

স্টার্কের দাপটে ব্রিসবেনে হারের পথে ইংল্যান্ড

১৪

নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে ‘রোকেয়া রান’ অনুষ্ঠিত

১৫

ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

১৬

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

১৭

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যা বললেন জয়শঙ্কর

১৮

বাংলাদেশে আর কারও দাদাগিরি চলবে না : ডা. শফিকুর রহমান

১৯

যেভাবে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হলো ভারতীয় রুপি

২০
X