কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২২ পিএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
একান্ত সাক্ষাৎকারে মাহিয়া মাহি

‘কেউ ঝাঁড়ু দিয়ে দৌড়ানি দিলে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরব’

একান্ত সাক্ষাৎকারে মাহিয়া মাহি। ছবি : কালবেলা
একান্ত সাক্ষাৎকারে মাহিয়া মাহি। ছবি : কালবেলা

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) হিসেবে লড়ছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। নির্বাচনী এলাকায় মাহি এখন গণসংযোগে তুমুল ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। জনপ্রিয় এই নায়িকাকে এক পলক দেখতে তানোর-গোদাগাড়ীবাসী তার গণসংযোগে ভিড় করছেন। মাহি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটারদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে চাচ্ছেন দোয়া আর ভোট। ভোটাররাও তাকে দিচ্ছেন আশ্বাস। মাহি জয়ের ব্যাপারে এতটাই ডেডিকেটেড, তিনি বলেছেন, ‘আমাকে কেউ ঝাঁড়ু দিয়ে দৌড়ানি দিলেও আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করব।’

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর তানোরের উত্তর মুন্ডুমালা এলাকার নিজ বাসভবনে দৈনিক কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে এমন কথাই উচ্চারণ করেন। মাহির একান্ত এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আমজাদ হোসেন শিমুল। কালবেলার পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

কালবেলা : তানোর-গোদাগাড়ীতে ভোটের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

মাহিয়া মাহি : ভালো আলহামদুলিল্লাহ। মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। সাধারণ জনগণের যে রেসপন্স সেটি খুব চোখে পড়ার মতো। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

কালবেলা : আপনি সিনেমার মানুষ। আস্তে আস্তে রাজনীতিতে আসা এবং এখন রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন, কো জার্নিটা আসলে কীভাবে হলো?

মাহিয়া মাহি : আমি সিনেমার মানুষ। তবে রাজনীতির জার্নিটাতে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। কারণ, যে মানুষগুলো টিভি স্কিনে আমাকে দেখেছে সেই মানুষগুলোর কাছাকাছি আমি যেতে পারছি। তাদের ভালোবাসার হাতগুলো আমার মাথার ওপর রাখতে পারছি। বয়স্ক-বৃদ্ধ যারা আছেন, আমার দাদি-নানি টাইপের তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, তারা এখানে পরিবর্তন চায়। তো এটি আসলে অনেক ভালো লাগার একটি জায়গা।

কালবেলা : আপনি তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তো স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মাহিয়া মাহি : স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাড়া তো পাচ্ছি ভালো। সবাই তো আসলে ওপেন... করতে পারে না। বিকজ একটি দলীয় বিষয় আছে। কিন্তু আমার মনে হয় একদম কাছাকাছির মানুষও আসলে পরিবর্তন চায়।

কালবেলা : পদধারী আওয়ামী লীগের নেতা কেউ আপনার সঙ্গে আছে কি না?

মাহিয়া মাহি : হ্যাঁ আছে। প্রকাশ্যে ওভাবে কেউ না থাকলেও আত্মিকভাবে অনেকেই আছে।

কালবেলা : ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আপনি কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?

মাহিয়া মাহি : ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তারা যে পরিবর্তনটা চায়, তারা যে শাসককে চায়, তারা যে ভালোবাসার মানুষ চায় আমি তেমনটিই হওয়ার চেষ্টা করব। আসলে মানুষ চায় তাদের একটা সেবক পাশে আসুক-বসুক, তাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলুক। আমি আসলে এটারই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি তাদের কাছাকাছি থাকব সবসময়। আরেকটি হচ্ছে সারা বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নের ধারাটি আমি অভ্যাহত রাখব, কন্টিনিউয়েশন যাতে এখানেও থাকে। আর বরেন্দ্র অঞ্চলের বড় যে সমস্যা তা হলো পানির সমস্যা। এই পানির সমস্যাটা নিয়ে আমি কাজ করব।

কালবেলা : বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি বণ্টন পদ্ধতিটি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু এখানেও যে দলীয়করণ সেটি সম্পর্কে আপনি কী জানেন?

মাহিয়া মাহি : হুম, আমি তো বললাম। এই অঞ্চলের মানুষ একটি খাঁচার ভেতরে বন্দি। তাদের কোনো বাক-স্বাধীনতা নেই। তাদের কোনোকিছু সমস্যা হলে কাউকে বলার নেই। তো এই ডিপ টিউবওয়েলও সেইম। তার (ওমর ফারুক চৌধুরী) যে স্বজনপ্রীতি এবং তার যে একটা গণ্ডি, এই গণ্ডি থেকে মানুষ আসলে বাঁচতে চায়।

কালবেলা : আপনি কি মনে করছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন? আপনার কী মনে হয়- কেন উনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন?

মাহিয়া মাহি : উনি মানুষকে সম্মান করেন না। আপনার মাধ্যমেই আমি দেখেছি, তিনি শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন, শিক্ষককে সম্মান করেন না। কোনো একটা মিটিংয়ে ৫০ জন শিক্ষক ছিলেন, জুতা ছুড়ে মেরেছেন। কোথাও কোথাও দেখলাম, নেতাকর্মীর মোবাইল আছাড় মেরে ভেঙে ফেলা হয় সবার সামনে। আসলে তারা কাউকে সম্মান করে না। এসব কারণেই তো আমার মনে হয় জনপ্রিয়তার একটা বিষয়...। আর ওই যে বললেন, ডিপ টিউবওয়েল। এই এলাকা কৃষিবান্ধব এলাকা। এই এলাকার বিরাট অংশ কৃষক। তারা যদি এই কৃষি ব্যবস্থা ভালো না পায়, যদি তারা দেখেন যে, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে একটা সিন্ডিকেট হয়ে আছে। এখান থেকে তারা কষ্ট পাচ্ছেন। এসব কারণেই তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন।

কালবেলা : নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কেমন দেখছেন?

মাহিয়া মাহি : এখন পর্যন্ত ভালো। যিনি এমপি ছিলেন, তার জনপ্রিয়তা নেই। যেহেতু আপনারা আছেন আমার পাশে, যে কোনো ঘটনাই আপনারা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন সেজন্য হয়তো তিনি আমাকে কোনোকিছু বলতে পারছেন না। অথবা তিনি কোনো স্টেপ নিতে পারছেন না আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু আমি যতটুকু নিউজ পেয়েছি, সে তার লোকজনকে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে বলছে, মাহি যেদিকে যাবে তাকে যেন হেনস্তা করা হয়। তিনি যেহেতু ফেসবুকের মাধ্যমে দেখছেন বা খবর পাচ্ছেন জনসাধারণ আমাকে অনেক ভালোবাসছে, মহিলারা আমাকে ভালোবাসছে।তার নেতাকর্মীদের দিয়ে আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। যদি এগুলো আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমি যদি কোনো এলাকায় গেলে হেনস্তাও হই তাও আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমাকে কেউ ঝাঁড়ু দিয়ে দোঁড়ানি দিলেও আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করব। আমাকে এখন আমার প্রতিপক্ষ সর্বোচ্চ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, বিভিন্নভাবে অপমান করার চেষ্টা করবে। এটা আমি আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে বলতে চাই যে, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। জনগণ আমাকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যেই কিন্তু কিছু দুস্কৃতিকারী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারাই উল্টা-পাল্টা করার চেষ্টা করবে।

কালবেলা : আপনি বললেন যে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তো আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন কিনা?

মাহিয়া মাহি : আমি আইনের আশ্রয় নিচ্ছি। গতকাল তানোর থানায় আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। এখন বাকিটা তারা কী স্টেপ নেবে তারাই জানে।

কালবেলা : জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

মাহিয়া মাহি : জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ। কারণ পরীক্ষা দিতে নেমেছি পাশ করার জন্যই। শুধু আমার নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ জনগণ আমাকে ভালোবাসে। আমি সেই ভালোবাসাটুকু পেতে চাই।

কালবেলা : নির্বাচিত হলে প্রায়রিটির ভিত্তিতে আগে কোন কাজ করবেন?

মাহিয়া মাহি : নারীদের নিয়ে কাজ করব। প্রথমত আমি বরেন্দ্র ভূমির পানি নিয়ে কাজ করব। রাস্তাঘাট যেগুলোতে সমস্যা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। প্রত্যেকটি ঘরে যাতে স্বাবলম্বী নারী থাকে আমি সেটি নিয়ে কাজ করব। নারীরা যাতে সমাজে বোঝা না হয় এবং তরুণরা যাতে মাদকাসক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। এই ঋণের মাধ্যমে একেকটা তরুণ স্বাবলম্বী হতে পারবে, উদ্যেক্তা হতে পারবে, ব্যবসা শুরু করতে পারবে। একজন একটা কোম্পানি শুরু করতে পারবে আমি সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। তারা যেন উদ্যোক্তা হয়, তারা যেন জজ, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, টিচার এগুলোর পেছনে না ছোটে।

কালবেলা : ভোটের এই মূল্যবান সময় কালবেলাকে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাহিয়া মাহি : আপনাকে ও কালবেলাকেও ধন্যবাদ।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যু

গরমে অস্বস্তি, বৃষ্টি হতে পারে ঢাকায়

আজকের নামাজের সময়সূচি

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

আজ যেসব অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

প্রভাবশালী প্রার্থীর পছন্দের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগের অভিযোগ

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

জুমার দিন যেসব আমল করবেন

নির্বাচনী শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু 

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

১০

১ মণ ধানের দামেও মিলছে না দিনমজুর 

১১

বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক

১২

সিলেটে ফের বিরতি ফিলিং স্টেশনে আগুন

১৩

এক হাজার সফল সার্জারি সম্পন্ন করেছে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল

১৪

আলুর হিমাগারে মিলল লাখ লাখ ডিম

১৫

শিক্ষার্থীদের বাস নিয়ে প্রোগ্রামে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ

১৬

মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

১৭

যুদ্ধ শেষে গাজায় যে পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র

১৮

দেড় শতাধিক লোকসহ টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ

১৯

স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে নাদিমের বাড়ি ৪৩ বছরের নারীর অনশন

২০
X