অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৯ এএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে পলিসি বিভ্রান্তিতে সরকার

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। ছবি : কালবেলা
অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। ছবি : কালবেলা

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম; জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কালবেলা: আপনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের একজন বিশ্লেষক ও গবেষক। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পলিসি নিয়ে আপনার মতামত কী?

ড. শামসুল আলম: সরকার দেশের বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাত পলিসি নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তিতে আছে। দেশের চলমান জ্বালানি (বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি) রূপান্তর পর্যালোচনায় তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। একটি জ্বালানি নীতি (পলিসি) প্রণীত হয় এবং ১৯৯৬ সালে গেজেটে প্রকাশিতও হয়। কিন্তু এ খাত পরিচালনা ও উন্নয়নে সে পলিসি কোনো কাজে আসেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়ন ও পরিচালিত হলে ২০২১ সালে বিদ্যুতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের পরিমাণ দৃশ্যমান হতো এবং তা হতো ১০ শতাংশ।

পারসপেকটিভ প্ল্যান, মাস্টার প্ল্যান, পঞ্চবার্ষিকী প্ল্যান, উপ-খাতভিত্তিক নানা নীতিমালাগুলো অনুশীলনে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই একটির সঙ্গে আরেকটি সামঞ্জস্যহীন এবং জনস্বার্থের পরিপন্থি। সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রের দর্শনের ভিত্তিতে সরকারের আদর্শ নির্ধারিত হয় এবং সে আদর্শের ভিত্তিতেই সরকার খাতভিত্তিক পলিসি তৈরি করে। বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাত উন্নয়ন ও পরিচালনায় এমন কোনো পলিসি নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো আইনের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক। ১৯৯০ সাল থেকে দেশের বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতে যেসব সংস্কার তথা রূপান্তর হয়েছে এবং হচ্ছে, সেসবে রাষ্ট্রের নীতি বা আদর্শ না থাকায় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অর্থবহ না হওয়ায় ‘সবার জন্য লোডশেডিং মুক্ত বিদ্যুৎ’ অবশেষে লোডশেডিং যুক্ত বিদ্যুতে পরিণত হয়েছে। এখানেই সরকার পলিসি বিভ্রান্তির শিকার। এসব ক্ষেত্রে কারা নেতৃত্ব দিল? কাদের কর্তৃত্বে এমন কাজ হলো? জনস্বার্থে তা না হলে, কোন স্বার্থে হলো? এসব প্রশ্নের জবাবেই রয়ে গেছে সরকার—কেন পলিসি বিভ্রান্তির শিকার হলো।

পলিসি তৈরির আইনি এখতিয়ার সরকারের। বিগত ৩৩ বছরে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি উপখাতসমূহ পরিচালনা ও উন্নয়নে বহু নীতি বা পলিসি তৈরি করা হয়েছে। সেসব পলিসির কোনোটি ক্যাবিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এসব পলিসি মূলত তৈরি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উভয় বিভাগ। বাস্তবায়নও করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারাই। ফলে পলিসি স্বার্থসংঘাত যুক্ত। পলিসি আইনের আওতায় বাস্তবায়িত না হলে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা যায় না। তাছাড়া পলিসি প্রণেতা যদি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হয়, তাহলে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণহীন হয় এবং সরকার বিভ্রান্তিতে পড়ে। এভাবেই সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পলিসি বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে।

কালবেলা: আমরা জানি একটি সুষ্ঠু বাজারের জন্য সেটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হওয়া আবশ্যিক। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজার কতটুকু প্রতিযোগিতাপূর্ণ?

ড. শামসুল আলম: মোটেও প্রতিযোগিতাপূর্ণ নয়, বরং অলিগোপলির শিকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর আওতায় বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ কার্যকারিতা হারায়। ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা, তরল জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন/আমদানি, সঞ্চালন/পরিবহন ও বিতরণে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ অব্যাহত আছে।

বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকলে বাজার প্রকৃতপক্ষে মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারায়। বাজার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় অলিগোপলির শিকার হয়। বাজার তাদের একক কর্তৃত্বে চলে আসে। অর্থাৎ বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা (প্রতিযোগিতা কমিশন, বিইআরসি, মন্ত্রণালয়…) তথা রাষ্ট্রের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর যদি মন্ত্রী-এমপিরা ব্যবসায়ী হয়, তাহলে তো আর কোনো কথাই থাকে না। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণের সুযোগ নেয় এবং জনগণের ওপর এক ধরনের লুণ্ঠন চালায়।

ব্যবসায়ীরা এখন বাজারের ওপর সেই একক কর্তৃত্ব চালাচ্ছে। বাজারকে অলিগোপলি প্রতিষ্ঠিত করে তারা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করছে। তেল-লবণ-চাল-আটা-ডালসহ যে কোনো ভোজ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি দেখে বোঝা যায়, কী হবে তারা তা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমদানিকৃত পণ্য বা দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য অথবা সেবা সবই নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। আর তারা তাদের ইচ্ছেমাফিক মূল্য বাড়াচ্ছে।

জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিপিসি সরকারি মালিকানাধীন তরল জ্বালানি ব্যবসায়ী এবং বিইআরসির লাইসেন্সি। আইন অনুযায়ী সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার ছিল বিইআরসির, তা সত্ত্বেও বিপিসি নিজেই ফার্নেস অয়েলসহ অন্যান্য তরল জ্বালানি এবং ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিনের মূল্যহার জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে দিয়ে যখন-তখন ইচ্ছেমাফিক বৃদ্ধি এবং নির্ধারণ করত। এখনো করে। আইনানুযায়ী এই মূল্যহার সরবরাহ ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়। বিনিয়োগ ব্যয় সমন্বয়ে সরবরাহ ব্যয় নির্ধারিত হয়। বিনিয়োগ প্রতিযোগিতাহীন হওয়ায় ন্যায্য ও যৌক্তিক ব্যয় অপেক্ষা সরবরাহ ব্যয় অনেক বেশি হয়। আর এই বেশি ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে বিপিসি নিজে এবং ক্ষেত্র বিশেষে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে দিয়ে ইচ্ছেমাফিক মূল্যহার বৃদ্ধি করে। এতে বোঝা যায়, তরল জ্বালানির বাজার কীভাবে সরকারি মালিকানাধীন ব্যবসায়ী বিপিসির কাছে জিম্মি তথা অলিগোপলির শিকার। এই একই কথা বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা, এলপিজি, এলএনজি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে কম-বেশি প্রযোজ্য।

কালবেলা: জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কি কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না? দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকারের অগ্রগতি কেমন বলে মনে করেন?

ড. শামসুল আলম: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩-এর আওতায় জ্বালানির মূল্যহার গণশুনানির ভিত্তিতে নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের একক ক্ষমতা দিয়ে সরকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বিইআরসি’ প্রতিষ্ঠিত করে। জ্বালানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/কোম্পানিগুলোকে বিইআরসির লাইসেন্সি হিসেবে বিইআরসির নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা হয়। আবার ২০২৩ সালে ওই আইন সংশোধন করে মূল্যহার গণশুনানি ব্যতীত নির্ধারণের ক্ষমতায় মন্ত্রণালয়কে আনা হয়।

আমরা যদি ভোক্তাদের দিক থেকে দেখি—রাষ্ট্র আমার এই অধিকারটুকু নিশ্চিত করবে, আমি যদি বাজার থেকে কোনো পণ্য বা সেবা কিনতে চাই, তাহলে সেই পণ্য বা সেবার মূল্য যেন ন্যায্য ও যৌক্তিক হয়। সেজন্য বাজার প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে এবং সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রতিযোগিতা কমিশনের। অথচ এখানে কমিশন নিষ্ক্রিয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিইআরসির। কিন্তু বিইআরসি সেই প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। হাইকোর্টের রায়েও বিআরসির নিষ্ক্রিয়তাকে বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত বলা হয়েছে।

সরকারের দাবি, তারা দেশের বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতে অনেক উন্নয়ন করেছে। তা আসলে কতটা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য—এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়, যখন দেখা যায় প্রতিযোগিতাবিহীন বাজার সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় এবং মুনাফা সমন্বয় করে অন্যায় ও অযৌক্তিক মূল্যহার বৃদ্ধি অব্যাহত। আবার প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ সংকটের কারণে সিংহভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা অব্যবহৃত থাকায় প্রতি একক বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয়বৃদ্ধিতে মূল্যহার বৃদ্ধি ঘটে। যে রূপান্তরের পরিণতিতে জনগণ এমন পরিস্থিতির শিকার হয়, আমার বিবেচনায় তাকে কোনোভাবেই উন্নয়ন, কিংবা সঠিক ও যৌক্তিক রূপান্তর বলা যায় না।

কালবেলা: দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়েছে। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ড. শামসুল আলম: দেশে অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিতরণ ক্ষমতা। অর্থাৎ নতুন নতুন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে হাজার হাজার কিলোমিটার। সে সময় এ নিয়ে অনেক কথা হয়। বিদ্যুৎ নেই। হাজার হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন দিয়ে কী লাভ? আসলে লাভ হয়েছিল লাইন নির্মাণকারী ঠিকাদার ও কমিশন ভোগী অদৃশ্য প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশেষের। বিদ্যুতের তার ও পিলার বেচা-কেনায় লাভ হয়েছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মতো বিদ্যুৎ যদি উৎপাদন না হয়, তাহলে বিদ্যুৎলাইন নির্মাণ তথা বিদ্যুৎ বিতরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাকে উন্নয়নের নির্দেশন হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বরং বলা যায়, এটি একটি অপচয় ছাড়া অন্য কিছু নয়। অপচয়কে উন্নয়ন হিসেবে চালানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা বিভিন্নভাবে বলে থাকেন, আমরা পাঁচ হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি করেছি। এই বৃদ্ধিকে তারা অর্জন হিসেবে দেখেন। অথচ বৃদ্ধিজনিত উৎপাদনক্ষমতা যদি সমানুপাতিক হারে সরবরাহ বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের জোগান দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে আসলেই সে বৃদ্ধি অর্জন নয়, বিসর্জন বা অপচয়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহার করার মতো প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত হতে হবে। এই জ্বালানি সরবরাহ সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করাই হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন। এর পরিবর্তে কেবলমাত্র বিদ্যুতের অভিক্ষিপ্ত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন বলা চলে না। আবার বিদ্যুৎ চাহিদা নির্ধারণেও গলদ রয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকাকে দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনাগুলো তৈরি করা হয়। এসব মহাপরিকল্পনা সেভাবেই তৈরি করা হয়, যেন বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসা সমৃদ্ধ এবং সম্প্রসারিত হয়। আবার এই সব মহাপরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ যদি প্রতিযোগিতাবিহীন হয়, তাহলে বিনিয়োগকারী মনোনয়ন মহাপরিকল্পনা তৈরি আগেই নিশ্চিত হতে এবং মহাপরিকল্পনায় তারই স্বার্থ-সুরক্ষা প্রাধান্য পেতেই পারে।

কালবেলা: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মূলনীতি কি? এই খাতের পলিসিগুলো কীভাবে গ্রহণ করা হয়?

ড. শামসুল আলম: অভিযোগ রয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়ায় এডহক-ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পলিসি নেওয়া হয়। তাতে বিদেশি সাহায্য সংস্থারও প্রভাব থাকে। ফলে মহাপরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট জনস্বার্থবিরোধী হয়। বাজেটে উৎপাদনক্ষমতা ও সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধিতে অর্থ বরাদ্দ থাকে। অথচ কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে বজায়যোগ্য প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে না। এই অসংগতির কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই।

১৯৯০-এর দশকে বিদেমি বিনিয়োগে পিএসসির আওতায় দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। পাইপলাইনে গ্যাস রপ্তানির তোড়জোড় শুরু হয়। এ শতাব্দীর প্রথম দশকে এলএনজি হিসেবে গ্যাস রপ্তানির সুযোগ থাকায় পিএসসির আওতায় সাগরের গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে আইওসিগুলোর কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। সে সঙ্গে কয়লা রপ্তানির উদ্দেশ্যে ব্যাপক পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগে কয়লা উত্তোলনের চেষ্টা চলে। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে জ্বালানি সম্পদ রপ্তানির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণের আন্দোলনের মুখে পরিশেষে গ্যাস ও কয়লা রপ্তানির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ উত্তোলনের পরিবর্তে সরকারও বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানি বেশি বেনি আমদানিতে মনোযোগী হয়।

দেশি-বিদেনি ব্যক্তি খাত বিনিয়োগে আইপিপি পলিসির আওতায় ’৯০ দশক থেকে সরকার প্রদত্ত জ্বালানি দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পরে বিদ্যুৎ আমদানিও শুরু হয়। গ্যাসের অভাবে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা কম ব্যবহার হওয়া স্বল্প ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। অথচ ব্যক্তিখাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বজায় রেখে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। প্রথমে দিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ প্রতিযোগিতাপূর্ণ হলেও দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ বিধান) ২০১০ বলবৎ হওয়ার পর সিংহভাগ বিনিয়োগই ছিল প্রতিযোগিতাবিহীন। বর্তমানে প্রতিযোগিতাবিহীন ব্যক্তিখাত বিনিয়োগে মেগাপ্রকল্পের আওতায় সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়ন হচ্ছে। সে উন্নয়নেও ‘লুণ্ঠনমূলক’ ব্যয়বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নে যেসব বিষয় বিবেচনা করার কথা সেগুলো বিবেচনা করা হয় কি না। যদিও বাংলাদেশে কোনো স্ট্যান্ডার্ড এনার্জি পলিসি তথা জ্বালানি নীতি নেই। ১৯৯৬ সালের জ্বালানি নীতি অকার্যকর। ২০০৪ সালে একটি নীতি তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটা অনুমোদন পায়নি। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়ন কোনো পলিসির আওতায় হয়নি। যেহেতু পলিসি নেই, সেহেতু পলিসিবিহীন অপরিকল্পিত এই উন্নয়ন আসলেই ‘লুন্ঠনমূলক’ ব্যয় ও মুনাফাবান্ধব, জনবান্ধব নয়- সেই প্রমাণই দৃশ্যমান।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে বাংলাদেশের মূলনীতি: ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু চলমান উন্নয়ন বা রূপান্তর এই মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকার যে কাজই করুক না কেন, তাতে পরিশেষে জনকল্যাণই নিশ্চিত হতেই হবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিই হোক বা অন্য কোনো পন্য বা সেবাই হোক, জনগণ যেন তা ন্যূনতম ব্যয়ে পায়, সেটিই নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেবল বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রেই নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সরকার সে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বিভ্রান্তির শিকার হওয়ায় জনসাধারণ অধিক মূল্যহারের শিকার।

কালবেলা: সরকার কী তাহলে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা করেনি?

ড. শামসুল আলম : চীন এবং ভারত, এই দুই দেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারক দেশ। ভারতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, তাদের মোট বিদ্যুতের ৬৪ শতাংশই হবে কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ। চলতি শতাব্দীর ৩-৪ দশক ধরে ভারত ও চীন নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার অব্যাহত রাখবে। এই পলিসি ও প্লানিং মূলত: ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা। অন্যদিকে সরকার কোন বিবেচনায় ন্যুনতম ব্যয়ের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রসর হলো? ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি মূলত- নির্ভরশীল ছিল ব্যয়বহুল তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। হিসাবে দেখা যায়, ২০২১ সালে মোট উৎপাদিত গ্রিড বিদ্যুতের প্রায় ৩৫ শতাংশই ছিল তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ। পরে দেশীয় কয়লা ও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির পরিবর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানিকৃত কয়লা ও এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি দ্বারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়ন চলছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর যে কোনো চিন্তাই কাজ করুক না কেন, কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে হবে সরকারের এমন চিন্তা যে কাজ করেনি, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

কালবেলা: সরকার বলছে তারা জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ের জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভর করেছে...

ড. শামসুল আলম : জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ের জন্য ফার্নেস অয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়েছে—এ কথার সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই একমত হতে পারি না। জরুরি বিদ্যুতের জন্য সরকার নির্ভর করেছে স্বল্পমেয়াদি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর। সেগুলোও দীর্ঘমেয়াদে চালানো হচ্ছে। তাহলে সরকারের ম্যাসিভ প্ল্যান/ইমারজেন্সি প্ল্যান আর শর্ট টার্ম, ও লং টার্ম প্ল্যানগুলো কি? ইমারজেন্সি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন তো লং টার্ম প্ল্যানকে কাভার করে না।

এসপিপি পলিসির আওতায় স্মল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ২০০১ সালের দিকে এসেছে। সামিট গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানিকে সেসব টেন্ডারের ভিত্তিতে দেওয়া হলো। অথচ পরবর্তীতে অবৈধভাবে সম্পূরক চুক্তি আওতায় বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার বৃদ্ধি করে তাদের লাভবান করা হয়। তাদের সেসব প্ল্যান্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তারপরেও তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে এবং সেই বিদ্যুৎ তারা উৎপাদন করছে সরকারি গ্যাস দিয়ে অর্থাৎ কম খরচে। কিন্তু সে বিদ্যুৎ সরকার কিনছে উচ্চ দামে। যে গ্যাস আইপিপি, এসপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হচ্ছে, সেই গ্যাস পিডিবিকে দেওয়া হলে সরকারি মালিকানাধীন অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার বৃদ্ধি দ্বারা অধিক বিদ্যুৎ স্বল্প ব্যয়ে সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব হতো। বেজলোড বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ বিলম্বিত করে একদিকে দফায় দফায় নির্মাণ ব্যয়বৃদ্ধি দ্বারা বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে স্বল্প ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট এবং তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বছরের বছর উপাদনে রেখে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ খাতে ক্রমাগত আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে ভর্তুকি ও মূল্যহার বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তারপরও বিদ্যুৎ ঘাটতি ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা যায়নি। সংকটের অভিঘাতে জনজীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত। জাতি জ্বালানি নিরাপত্তাহীন। জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাপ্লাইয়ের এই পরিণতি।

কালবেলা: রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে তা কি আমরা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করতে পারতাম না?

ড. শামসুল আলম: এসব নিয়ে অনেক ধরনের খোঁড়া ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। বলা হয়, আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর কাছাকাছি রয়েছে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকা অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে দূরে হওয়ায় গ্যাস সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া দুরূহ। এসব যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি বলাই সংগত। সরকারি মালিকানাধীন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যেসব গ্যাসক্ষেত্র গ্যাস দেওয়া হয়, সেসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে রেন্টাল-কুইকরেন্টল বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও গ্যাস দেওয়া হয়।

আবার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় তাদের অনেক বেশি গ্যাস দেওয়া হয় এবং তাদের তুলনায় সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা অনেক কম ব্যবহৃত হয়। সুতরাং নিজস্ব গ্যাসই হোক আর আমদানিকৃত এলএনজি হোক সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আপেক্ষা ব্যক্তিখাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বেশি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সরকারিখাতে বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিখাতে কমানো হয়। এটি ব্যক্তিখাত বিদ্যুৎ কেনার যৌক্তিকতা প্রমাণ একটি কৌশল।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা কয়লার অভাবে গড়ে অর্ধেকও ব্যবহার হয়নি। অথচ বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা খোলা ও কালোবাজারে বিক্রি হয়েছে মুড়ি-মুড়কির মতো। আবার কয়লা সরবরাহ বৃদ্ধি না করে সেখানে আরও অতিরিক্ত ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো হয়েছে। দেখা গেল, দেশীয় কয়লায় সেখানকার বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় আমদানিকৃত কয়লায় উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা অধিক। ব্যক্তিখাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেসওয়েল আমদানি ওই বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় ২০২২ সালে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়। বিপিসির দ্বারা ফার্নেসওয়েল আমদানি করা হলে ওই পরিমাণ ব্যয় কম হতো। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার যে পলিসি বিভ্রান্তির শিকার- এই সব অসংগতিই কি তার বড় প্রমাণ।

সর্বোপরি এই সকল অসঙ্গতিগুলো চিহ্নিত করা হলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো এনার্জি জাস্টিস তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাষ্ট্র সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্নই হচ্ছে- ভোক্তার জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা, অর্থাৎ মানুষ ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পাচ্ছে কি না। বিদ্যুৎ ও/বা জ্বালানি ন্যূনতম ব্যয়ে মানুষের কাছে সরবরাহ নিশ্চিত করায় হলো মানুষের জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত করা। সেই জায়গা থেকে দেখলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আমরা জ্বালানি অধিকার বঞ্চিত। কারণ সরকার ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ পলিসি গ্রহণ করেনি। জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় যদি সে-পলিসি গৃহীত হতো, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বর্তমানের তুলনায় অনেক কম হতো। আরও অনেক কম ব্যয়ে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ করা হতো- এই সত্য কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জনগণের নিকট ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু তা হয়নি। কারণ সরকার পলিসি বিভ্রান্তির শিকার হওয়ায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজার আজ প্রতিযোগিতাহীন এবং ওলিগোপলির শিকার হওয়ায় জনগণ লুণ্ঠনমূলক মূল্যহার বৃদ্ধির শিকার।

সর্বোপরি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে মূল্যসংযোজনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বড় বড় অসংগতি বিদ্যমান। এই অসঙ্গতিগুলোই পলিসি বিভ্রান্তির ফল এবং লুণ্ঠনমূলক মূল্যহার বৃদ্ধির নিয়ামক। সুতরাং সেসব অসংগতি নিরসন ব্যতিত জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করা বা হওয়া সম্ভব নয়। (১ম পর্ব)

শ্রুতিলিখন – মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদি পৌঁছেছেন ২৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী

গণতন্ত্র-উন্নয়নে শেখ হাসিনা বিশ্বে রোল মডেল : রাষ্ট্রপতি

ঢাকার যেসব এলাকায় শনিবার গ্যাস কম থাকবে

৬ তারিখে বাজেট দেব, বাস্তবায়নও করব : প্রধানমন্ত্রী

দেবরের হাতে ভাবি খুন

বীজতলা ফেটে চৌচির, কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

যারা একবেলা খেতে পারত না, তারা চারবেলা খায় : প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ সরকার টেলিযোগাযোগ খাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করেছে : প্রধানমন্ত্রী

ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধর, থানায় অভিযোগ

১০

জমির বিরোধের জেরে মসজিদে তালা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, নিহত ১১

১১

সবজির বাজারে উত্তাপ, চড়া দাম

১২

ইতালিতে বাড়ছে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা

১৩

ফের পেছাল কঙ্গনার ‘ইমার্জেন্সি’

১৪

৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে ২ এজেন্সি মালিক উধাও 

১৫

কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষে সফলতা

১৬

অসহায় ও পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটাল চবির তরুণ দুই উদ্যোক্তা

১৭

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ / ২ বছর পর ফ্রান্স দলে কান্তে

১৮

তীব্র গরমে ঢাকার বাতাসের কী খবর?

১৯

বর্ষা গেল, বর্ষা এল তবু ব্রিজ হলো না

২০
X