সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ড. এ কে এনামুল হক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৬ এএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকার

দেশের ব্যাংক খাত দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে

ড. এ কে এনামুল হক। ছবি : কালবেলা
ড. এ কে এনামুল হক। ছবি : কালবেলা

ড. এ কে এনামুল হক; ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিজনেস ও ইকোনমিকস অনুষদের ডিন এবং অর্থনীতির অধ্যাপক। এ ছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন গবেষণা সংস্থা এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক হিসেবে। তিনি বিশ্বব্যাংক, আইইউসিএন, সেভ দ্য চিলড্রেন, আইএফসি, ইউএনডিপি, জিআইজেডসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। ড. এ কে এনামুল হক স্যান্ডিতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সক্ষমতা উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি -

কালবেলা: নতুন বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন দেখা যাবে বলে আশা করছেন?

ড. এ কে এনামুল হক: নতুন বছর বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যদি সরকার গঠন করা দল অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে এগোনোর চেষ্টা করে, তাহলে অর্থনীতির চিত্র একরকম হবে; আর যদি দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে অর্থনীতি আরেকরকম হবে। সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছর জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের সামনে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। অর্থনীতি ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু জুনের পর থেকে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসতে থাকে। অর্থনীতির এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। কারণ নির্বাচন হওয়া মানেই হচ্ছে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া। নির্বাচনে দলগুলো অনেক টাকা খরচ করে এবং এ টাকা বাজারে প্রবেশ করে। বাজারে টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে যথাযথ নীতি গ্রহণ করতে হবে।

কালবেলা: বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কোন বিষয়গুলো বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন?

ড. এ কে এনামুল হক: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্যতা আরও বাড়তে পারে। সরকারের সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে। নির্বাচনের জন্য তারা কিছুটা ছাড় দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা সেই ছাড়টি সম্ভবত আর দেবে না। ফলে সরকারের চাপ বাড়বে। ২০২৪ সালে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে গেলে সরকারের লক্ষ্য ৯ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন। যেখানে প্রতি বছর বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। প্রতি বছর ৯ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি না হলে ২০৪০ সাল নাগাদ সরকার যেখানে যেতে চায় সে টার্গেট অর্জন করা সম্ভব হবে না। ৯ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে টার্গেট রাখতে হবে ১০-১১ শতাংশ। আর এই ১০-১১ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি রাখার জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেটি নিয়ে আসা সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য মানুষের মধ্যে যে আস্থা তৈরি করা প্রয়োজন, সেটি তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আস্থা তৈরি করতে হবে।

কালবেলা: দেশে কর্মসংস্থানের সংকট রয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরিতে করণীয় কী?

ড. এ কে এনামুল হক: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো জোগানের দুর্বলতা। আমরা যেদিকেই যাব সেদিকেই কোনো না কোনো সংকট থাকবে বা রয়েছে। আমরা যদি রাস্তা খুঁজি সেখানেও দেখব রাস্তার সংকট রয়েছে। গাড়ি খুঁজলে দেখব গাড়ির অভাব। এ জোগানের সংকট দূর করার জন্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা এখনও রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতিতে রয়েছি। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ রয়েছে এবং দারিদ্র দূরীকরণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্যারামিটারগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় যে এখানে মূল্যস্ফীতি থাকবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ৭-৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক। কারণ বাংলাদেশে চাহিদার চাপ রয়েছে। বাংলাদেশ যদি উন্নত দেশ হতো তাহলে হয়তো চাহিদার চাপ থাকত না। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ২-৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। ফলে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জটি খুব বেশি গুরুতর মনে হয় না। মূল্যস্ফীতি কমবেশি সব সময় থাকবে। গত ২০ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। সুতরাং এটা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করা। চাকরির বাজারে নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। আগামী ১০ বছরে অনেক ধরনের চাকরির বাজার আর থাকবে না। কম্পিউটার অর্থাৎ অটোমেশন এবং এআই এর কারণে বাজার থেকে অনেক চাকরি চলে যাবে। নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অনেক চাকরি বাজার থেকে চলে গেলেও নতুন সুযোগও সৃষ্টি হবে। অনেক ক্রিয়েটিভিটির সুযোগ রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে আসা প্রয়োজন। শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে আসতে পারলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অনেক সহজ হবে। কিন্তু দেশের শিক্ষক এবং অভিভাবকরা নতুন ধরনের শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত নন। তারা নতুন ধরনকে গ্রহণ করতেও প্রস্তুত নন। তারা মনে করেন তাদের সময় যেভাবে পড়াশোনা করে এসেছেন সন্তানরা সেভাবেই পড়াশোনা করবে। আমরা সবাই মনে করি পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রদেরকে চেনার আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এরকম অনেকেই রয়েছেন যারা পরীক্ষায় ভালো করেননি কিন্তু জীবনে সফল। অথচ এটাকে আমরা এখনও মডেল হিসেবে দেখতে পারছি না।

কালবেলা: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কোনো দুর্বলতা রয়েছে কী?

ড. এ কে এনামুল হক: আমরা প্রত্যেকে মনে করি সবকিছু জানি। নীতিনির্ধারণে সরকার বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে না। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ ইকোনমি। এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ছাড়া কাজ করলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা জানি একটি দেশ রাজনৈতিকভাবে চলে। সামনে থাকে রাজনীতি এবং পেছনে থাকে অর্থনীতির নিয়ম-বিধিবিধান। রাজনীতিবিদ সংবিধান দেখে সেই অনুযায়ী চিন্তা করেন। কিন্তু এটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে কি না, সেটা বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ভারতে আজ থেকে ২০ বছর আগে থেকেই প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে একটি অ্যাডভাইজরি গ্রুপ রয়েছে। তাদের এই অ্যাডভাইজর গ্রুপের উদ্দেশ্য রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং সঠিক পরামর্শ প্রদান। কিন্তু দেশে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

আমরা বলি, আমেরিকায় যত প্রেসিডেন্ট বদলাক না কেন, তাদের সিস্টেম বা নিয়ম বদলায় না। আর এর কারণ হলো তাদের এসব সিস্টেম বা নিয়মের পেছনে কাজ করে অ্যাডভাইজরি গ্রুপ। সরকার কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তারা তাদের পরামর্শ জানায়—এটা করলে ভালো হবে নাকি খারাপ। এই টেকনিক্যাল চিন্তাটি জনগণের মধ্যে আজও গড়ে ওঠেনি।

কালবেলা: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। রিজার্ভ এত কমে গেল কেন?

ড. এ কে এনামুল হক: এক বছর আগেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। স্বপ্ন দেখছিলাম দেশের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। এরকম একটি জায়গা থেকে এক বছরের মধ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে গেছে। আমি নিজেও এই বিষয়ে হতভঙ্গ হয়েছি এবং রিজার্ভ হঠাৎ এতটা কিভাবে কমে গেল এই প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া উচিত। এজন্যই তাদেরকে উত্তর দেওয়া উচিত যে- এই সংকট যদি তারাই ঘটিয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের সামনে বিপদ রয়েছে।

এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক বিলিয়ন ডলারও ছিল না। আমরা তখন হাত পেতে চলতাম। সে জায়গা থেকে আমরা উঠে এসেছি। ২০২৬ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনা বিনষ্ট বা দুর্বল হলে লক্ষ্যগুলোর কোনটাই অর্জন করা সম্ভব হবে না। আমি রিজার্ভ সংকটের কোনো ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। কাউকে না কাউকে প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত।

কয়েকটি কারণে এরকম সংকটের জন্ম হতে পারে। কয়েক ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। একটি হতে পারে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এটাই যদি ঘটে থাকে তাহলে কাউকে না কাউকে তার দায় নিতে হবে। বাংলাদেশে যদি এক বিলিয়ন ডলার প্রবেশ করে তাহলে এই ১ বিলিয়ন ডলার আনুষ্ঠানিকভাবে বের করতে পারবে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সুতরাং আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার বাইরে যায় না। তাহলে এই ডলার গেল কিভাবে? কিভাবে গেল— এর উত্তর দিতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে আমদানি খুব বেশি বাড়েনি। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের চাহিদা বেড়েছে— এই তত্ত্ব বিশ্বাস হচ্ছে না। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে এই টাকা গেল কোথায়? এখানে যে রহস্যটা রয়ে গেছে তা জানবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাহলে কি রিজার্ভের যে তথ্য-পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছিল সেটা মিথ্যা ছিল? অর্থাৎ ৪০ বিলিয়ন ডলারের যে রিজার্ভ দেখানো হয়েছিল সেটা প্রকৃতপক্ষে ছিলই না? নাকি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ৪০ বিলিয়ন ডলারই ছিল। এই টাকা কোথাও না কোথাও সরানো হয়েছে। অনেক ধরনের আন্দাজ করতে পারে মানুষ। কিন্তু এই রিজার্ভ কোথায় কিভাবে খরচ হলো বা এই রিজার্ভের টাকা কোথায় কিভাবে গেল সেটির পরিষ্কার ব্যাখ্যা থাকা উচিত।

আমরা অনেক ধরনের আন্দাজ করতে পারি। আন্দাজ করতে পারি যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ডলারের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এটা একেবারে মিথ্যাও না। সরকার বলছে ডলারের চাহিদা রয়েছে। আমদানি বাড়েনি তাহলে এই চাহিদা কোথা থেকে আসলো? অতএব আমাকে বলতে হবে, যারা বাংলাদেশী বিনিয়োগ করেছে তারা প্রফিট সরিয়ে নিচ্ছে। সেটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে নীতি-পরিকল্পনা দেখতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে তোমরা প্রফিট কম নাও তাহলে তোমাদেরকে আমরা এক্সট্রা বেনিফিট দেব।

বিদেশি বিনিয়োগকারীর প্রফিট নেওয়া অন্যায় নয়। কিন্তু সে যদি অবৈধ পথে নিয়ে থাকে তাহলে তাকে ধরা উচিত অথবা ভবিষ্যতে অবৈধ পথে না যায় সেটার জন্য চিন্তা করা উচিত। এই বিষয়গুলো নীতি-নির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে। আরো একটি বিষয় রয়েছে এখানে। হতে পারে দেশীয় কোম্পানিগুলো বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটাও একটি গুরুতর বিষয়। দেশীয় কোম্পানি যারা বিদেশে বিনিয়োগ নিয়েছে তাদের হিসেবে এত টাকা নেওয়া হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে যদি এত টাকা নেওয়া না হয় তাহলে কি অবৈধভাবে টাকা নিয়ে গেছে সেটাও চিন্তা করা উচিত। টাকা [ডলার] নিয়ে গেলেই কেবল ডিমান্ড তৈরি হবে। যেহেতু ডিমান্ড তৈরি হয়েছে সুতরাং টাকা [ডলার] কোনো না কোনোভাবে বিদেশে গেছে। এই টাকা [ডলার] কোথায় কিভাবে গেল সেটা স্পষ্ট থাকা উচিত।

কালবেলা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও সম্প্রতি বলেছেন, তারা আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনা অবলোকন করেছেন। তারপরও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটছে না কেন?

ড. এ কে এনামুল হক: পুরোনো দিনের কথা। আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং নতুন করে হচ্ছে না। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও মানুষ এ কথাই বলত। আমরা এটা বন্ধ করতে পারিনি। তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি এটা বন্ধ হবে না। মানুষ আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং করে কারণ তারা দেশে টাকা নিয়ে আসতে চায় না অথবা তারা দেশে টাকা রাখতে চাচ্ছে না। এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি লুকিয়ে রয়েছে। প্রথমে এ প্রশ্নটাই করা উচিত যে, তারা কেন দেশে টাকা রাখতে চাচ্ছে না? ‘তারা কেন দেশে অর্থ রাখতে চাইছে না?’ শুধু এ প্রশ্নটির উত্তর যদি খুঁজে বের করা যায়, তাহলেই দেশ বদলে যাবে। মানুষের প্রবণতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, বরং এ প্রবণতার পেছনের সেই অদৃশ্য বিষয়টিই সবকিছুর মূলে।

কালবেলা: বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকে তারল্য সংকট প্রভৃতি সমস্যা সমাধান হচ্ছে না কেন?

ড. এ কে এনামুল হক: আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু অনেক ধরনের ত্রুটি রয়ে গেছে। সত্যি বলতে ব্যাংক খাতটি দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। ব্যাংক চলে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর নির্ভর করে। আমি যখন ব্যাংকে টাকা রাখি তার অর্থ আমি ব্যাংকের প্রতি বিশ্বাস রাখছি। সরকারি ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষ একসময় মনে করত সরকার তাদের সঞ্চয় দেখে রাখবে। একইভাবে বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালকদের বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এ বিশ্বাসে ধস নামছে।

ব্যাংকের আইনে ব্যাংকে ইনডিপেনডেন্ট পরিচালক বলে একটি বিষয় রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট দেখভাল করবেন। তাদের কাজ হবে স্বাধীনভাবে দেশের স্বার্থরক্ষা করে ব্যাংক পরিচালনা করা। বাংলাদেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টররা আসছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা থেকে। ফলে যখন তারা পরিচালনার দায়িত্বে আসেন তখন মনে করেন তারা মালিককে ‘ফেবার’ করতে যাচ্ছেন। এজন্য ব্যাংক খাত ভালো করতে হলে সর্বপ্রথম ভালো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর তৈরি করতে হবে। দরকার হলে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টররা ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এর দায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ওপরও বর্তায়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উচিত এখানে ভূমিকা রাখা। খতিয়ে দেখা উচিত কেন ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর থাকা সত্ত্বেও এ কোম্পানিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদেরকে চিন্তা করতে হবে তারা একটি ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্বে আসছেন মানুষের আস্থা তৈরি করার জন্য। সুতরাং এই বিষয়টাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া উচিত। আমরা যদি মালিককে বলি ব্যাংক ছেড়ে চলে যেতে সেটি কাজ করবে না। মালিকরা থাকবেন কিন্তু পরিচালনা পর্ষদে ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টরদের ভূমিকা বাড়াতে হবে এবং তাদের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। সমাজে এক ধরনের নৈতিক ইস্যু রয়েছে। আমরা কেউ যেন বিশ্বাস রক্ষা করতে পারছি না। সমাজের বিশ্বাস রক্ষা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব; কিন্তু এখানে ব্যর্থ হচ্ছি। আর অর্থনীতির জন্য একটি মূল শক্তি বিশ্বাস ও আস্থা। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি বড় অর্থনীতি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বড় অর্থনীতি চালাতে গেলে ট্রাস্ট বিল্ডিং অপরিহার্য।

কালবেলা: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের বেসিস পয়েন্ট বাড়ালে আমরাও বাড়াতে চাই। সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রেও আমরা বিদেশীদের অনুকরণ করতে যাই। এগুলোকে কীভাবে দেখেন?

ড. এ কে এনামুল হক: অর্থনীতির তত্ত্বকে অর্থনীতির দিক দিয়েই চিন্তা করা উচিত। ফিজিক্সের থিওরি এবং অর্থনীতির থিওরির মধ্যে একটি ফান্ডামেন্টাল পার্থক্য রয়েছে। ফিজিক্সের থিওরি বাংলাদেশ আমেরিকা বা বিশ্বের সব দেশে একই হবে। পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র পরিবর্তন হয় না। কিন্তু অর্থনীতির সামাজিক অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ অর্থনীতির যে নিয়ম আমেরিকাতে চলবে বাংলাদেশে সেটা নাও চলতে পারে। আমেরিকাতে যদি কেউ ব্যাংকে টাকা রাখে তাহলে কেউ প্রশ্ন করে না। কিন্তু বাংলাদেশে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে গেলে ১০০ টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

বাংলাদেশের নিয়মগুলো তৈরি করা হয় না বুঝে। আমরা ইনকাম ট্যাক্স এর দায়িত্ব দিই ব্যাংক কে। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স এর কাজ ব্যাংক কেন করবে! কেউ একজন ব্যাংকে টাকা রাখতে গেলে ব্যাংক কেন ইনকাম ট্যাক্স নিয়ে প্রশ্ন করবে! একজন দরিদ্র মানুষ এক লক্ষ টাকা জমিয়ে ব্যাংকে রাখতে গেলেও সে ইনকাম ট্যাক্স নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। নানা প্রশ্নের ফর্ম ফিলাপ করতে হয় যাতে স্পষ্ট হয় যে কেউ কাউকে ট্রাস্ট করে না। বাংলাদেশের বাজারে ধীরে ধীরে টাকা বাড়ছে। ইকোনমিক বৃদ্ধি পাওয়া মানে বাজারে টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এরকম একটি অবস্থায় মানুষ ব্যাংককে এড়িয়ে চলবে। অথচ আমরা চাইছি ক্যাশ লেনদেন কমাতে।

একটি দেশ চালাতে গেলে সরকারকে কিছু বিষয়ে একমত হতে হবে। আমরা অর্থনীতির রুলগুলো এমনভাবে নিয়ে আসবো যেন মানুষকে প্রত্যেক জায়গায় ধর্ণা দিতে না হয়। আমরা এমন জায়গায় হাত দেব না যেটা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম আমানতকারীর তথ্য গোপন রাখে না। বরং তারা আমানতকারীর তথ্য মাইকিং করে জানিয়ে দেয়। ব্যাংকে রাখা আমানত সুরক্ষিত এবং প্রাইভেট রাখতে না পারলে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে না। মানুষ যদি ব্যাংকে টাকা না রাখে তাহলে দেশের ইকোনমি সরকারের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

কালবেলা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ব্যাংকগুলোর একটি ছিল। সবচেয়ে বেশি আমানত রাখা হতো ইসলামী ব্যাংকে। সেই ইসলামী ব্যাংকের এই হাল কেন হলো?

ড. এ কে এনামুল হক: ইসলামী ব্যাংকের এ অবস্থা হয়েছে হস্তান্তরের কারণে। একটি ব্যাংকের মালিকানা যখন স্বচ্ছতার সঙ্গে না বদলায় তখন মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়। এটা স্বাভাবিক এবং আমি বলব এটা দেশের মানুষের জন্য সুলক্ষণ। সুলক্ষণ এ কারণে বলছি যে, বাংলাদেশের আমানতকারীরা বুদ্ধিমান হচ্ছেন। একসময় তারা বিশ্বাস করে টাকা রেখেছেন কিন্তু এখন চিন্তা করছেন এখানে টাকা রেখে ফেরত পাব কি না। মানুষের মধ্যে এ সচেতনতা ভালো। ভবিষ্যতে যারা অন্য কোনো ব্যাংক টেকওভার করবে তাদের জন্য এটা চিন্তার বিষয় হবে। আরেকটা দিক হলো, ব্যাংকের টেকওভার রুল পরিষ্কার হওয়া উচিত। মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এমডি বা পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। কিন্তু আমরা দেখেছি, ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে সব পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই ফেয়ার টেকওভার হতে পারে না।

কালবেলা: সরকারের বিদেশী ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার পার হয়ে গেছে। চলতি বছর থেকেই এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। অথচ আমরা এখনই ডলার সংকটে রয়েছি। আপনি বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

ড. এ কে এনামুল হক: বাংলাদেশের এখন ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। আমি এ পরিমাণ ঋণ নিয়ে ততটা চিন্তিত নই। যদি টাকা ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা থাকে তবে আরও ঋণ নেওয়া যেতে পারে, এটাতে তেমন কিছু আসে যায় না। অর্থাৎ ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না। যদি দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হবে। যদি প্রবৃদ্ধি কমে যায় তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ একটি সংকট হয়ে দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি চলমান রয়েছে। সুতরাং অভ্যন্তরে ঋণ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার ততটা কারণ নেই। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে বিদেশি ঋণ। আমরা বিদেশি ঋণ কীভাবে ফেরত দেব বা ফেরত দেওয়ার ক্যাপাসিটি আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এখানে দেখতে হবে বাংলাদেশের ডলারের জোগান ঠিক থাকে কি না। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি উৎস থেকে ডলার আসে। প্রথমত, রপ্তানি থেকে আসা ডলার। এরপর রেমিট্যান্স। কিন্তু এগুলো পুরোনো উৎস। এগুলো সামান্য বাড়াতে পারি; কিন্তু এগুলো দিয়ে অনেক বেশি এগোবে না।

এর বাইরে দেশে ডলার আসার আরো কয়েকটি উৎস রয়েছে। যদি বিদেশি বিনিয়োগ আসতে থাকে তাহলে ডলার জোগান থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি সুতরাং এখানে কমবেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। যদি বিদেশি বিনিয়োগ না আসে তাহলে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ আকর্ষণ নীতিতে ভুল হচ্ছে। সেই ভুলের সমাধান বের করতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে বিদেশ থেকে প্রচুর ডলার আয় করছে অনেকে। আমরা দেখছি অনেকে বিদেশে কোম্পানি খুলছে। বাংলাদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে দুবাইতে কোম্পানি খুলছে। তারা বাংলাদেশে কেন খুলছে না? এর কারণ দেশের নীতির মধ্যে সমস্যা রয়েছে, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। এই নিয়ম পরিবর্তন করতে পারলে তারা বিদেশে কেন কোম্পানি খুলবে! তারা বাংলাদেশে কোম্পানি খুলবে এবং ডলার বাংলাদেশে থাকবে। গতানুগতিক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের উৎস থেকে সরকারকে অন্যদিকেও দৃষ্টি ঘোরাতে হবে। নতুন সম্ভাবনার জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সেখানে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ ও রফতানি আয়ের ভবিষ্যৎ খুব বেশি ভালো বলে মনে হচ্ছে না। সুতরাং এখানে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরটি বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

কালবেলা: বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

ড. এ কে এনামুল হক: সরকারের টাকা ছাপানোর অর্থ হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা না নেওয়া। অতিরিক্ত টাকা ছাপলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। সরকার যখন বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছেপে দিতে বলছে, তার মানে তারা ব্যাংকে রক্ষিত অর্থে হাত দিতে চাচ্ছে না। টাকা ছাপানো নিয়ে আমি এতটা চিন্তিত নই তবে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোটা অবশ্যই চিন্তার। টাকা ছাপানো যদি অতিরিক্ত হতো তাহলে মূল্যস্ফীতি ১৫-২০ শতংশের বেশি হয়ে যেত। যেহেতু মূল্যস্ফীতি ততটা হয়নি, সুতরাং টাকা ছাপানো খুব বেশি অতিরিক্ত হয়েছে বলে মনে হয় না।

কালবেলা: কয়েক বছরে দেশে ধারাবাহিকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু মানুষের আয়ের বৈষম্য অনেক বেড়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

ড. এ কে এনামুল হক: যেহেতু অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেহেতু আয়বৈষম্য বাড়বে, এটা পরিষ্কার। আমি তখনই চিন্তিত হই যখন আয়বৈষম্য বাড়ার পর যারা অতিরিক্ত আয় করেন তারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করেন। এই মুহূর্তের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা ৬ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানটা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনাই লক্ষ্য। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জন করা কষ্টকর। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ করে। এই ৮০ শতাংশের বাইরে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে কিছু আছে শারীরিকভাবে অক্ষম অথবা বয়স্ক মানুষ। এ বয়স্ক শ্রেণিকে রক্ষা করতে হবে। সরকার এখানে একটি চমৎকার কাজ করেছে, তা হলো পেনশন স্কিম চালু। তারপরও যারা হতদরিদ্র শ্রেণি রয়েছে, তাদের জন্য আরও কাজ করতে হবে।

পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ আয় ২০ শতাংশ মানুষের হাতে। তাহলে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনের একজন করদাতা হওয়া উচিত। করদাতা যদি না বাড়ে তাহলে সরকার গরিবদের জন্য কিছু করতে পারবে না। তাই বাংলাদেশের কর আহরণের হার বাড়ানো জরুরি। আর রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। যারাই ক্ষমতায় থাকুক, করদাতা বাড়াতে না পারলে গরিবদের জন্য কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না।

শ্রুতিলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চবির হোস্টেলে আটকে রেখে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

হিট স্ট্রোকে করণীয় শীর্ষক আলোচনা / গরমে লবণ মিশিয়ে পানি-স্যালাইন খেতে হবে

তাজুল ইসলামের সঙ্গে চীনের মন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

দাবদাহে দশ শিক্ষার্থীসহ ১৩ জন হাসপাতালে

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে নাঙ্গলকোটের বাবুল নিহত

রাজনগরে সড়ক সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর করলেন জিল্লুর রহমান

জনগণের ওপর চেপে বসে আছে সরকার : আমিনুল হক 

বগুড়ায় বসতবাড়িতে বিস্ফোরণ

আরও প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

নওগাঁয় মাদক মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

১০

এক উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত

১১

গোপনে ছাত্রীকে বিয়ে করতে গিয়ে ধরা, ভিডিও ভাইরাল

১২

বিআরটিএর অভিযানে ২৮৯ মামলা 

১৩

বৃষ্টির দীর্ঘ প্রতীক্ষা, সুসংবাদ কবে?

১৪

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলবে কি না জানাল মন্ত্রণালয়

১৫

৩৫ বছরপূর্তি উদযাপন করবে দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র

১৬

হাওরে ৮০ শতাংশ ধান পাকলে কেটে ফেলার নির্দেশ

১৭

বড় হারে সিরিজ শুরু জ্যোতিদের

১৮

তিন ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

১৯

নানা কর্মসূচিতে শেখ জামালের জন্মদিন পালিত

২০
*/ ?>
X