বিটিআই (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস সেরোটাইপ ইসরায়েলেন্সিস) কয়েক দশক ধরে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি ব্যাকটেরিয়া যেটা মশার লার্ভা মারতে সক্ষম। জমাটবদ্ধ পানিতে যেখানে লার্ভা দৃশ্যমান সেখানে বিটিআই প্রয়োগ সম্ভব। সম্প্রতি মশক নিধনের জন্য সিটি করপোরেশন বিটিআই প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। বিটিআই জলাশয়ে যেমন : পুকুর, হ্রদ, নদী এবং স্রোতের ওপর স্প্রে করা যেতে পারে। এমনকি বাড়ির আশপাশে ফুলের পাত্র, টায়ার, অব্যবহৃত পাত্র যেখানে বিকাশমান মশার লার্ভা দৃশ্যমান সেখানেও প্রয়োগ সম্ভব।
লার্ভিসাইড হিসেবে বিটিআই এর কোনো Resistance-এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মানুষের জন্য কোনো বিষাক্ততা নেই এবং জৈব চাষের কাজে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার অনুমোদিত। বিটিআই খাদ্যশস্য বা পানি সরবরাহের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই মশার আবাসস্থলে নিরাপদে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে। ভেক্টর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির হিসেবে গত কয়েক দশক ধরে ফগিং ব্যবহৃত হয়ে আসছে যা ইতোমধ্যে এর কার্যকারিতা হারিয়েছে। আমরা এটাও দেখছি, কিউলেক্স এবং এডিস এই দুই ধরনের মশা নিধনের জন্য একই ফগিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অতএব, কার্যকর পরিবেশবান্ধব নিয়ন্ত্রণ এজেন্টের প্রয়োগের সময় এসেছে। প্রতিটি ডেঙ্গুর হটস্পট এলাকার মশার ঘনত্ব পরিমাপ করে এই লার্ভিসাইডিং এজেন্টের ব্যবহার করতে হবে।
বিটিআই বিভিন্ন ফর্মুলেশনে আসে যেমন- ভেজা পাউডার, ধানের ভুসি এবং জলের ট্যাবলেটের আকারে। এটি মিস্ট ব্লোয়ার, চাপযুক্ত স্প্রেয়ারের মাধ্যমে সরাসরি প্রয়োগ করতে হবে, তাই কোনো প্রয়োগ পদ্ধতি এডিস মশার কার্যকারিতা ধ্বংস করতে সক্ষম তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন দেশ বিটিআইয়ের প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের মশার প্রজনন ক্ষেত্র আর অন্যান্য দেশের মশার প্রজনন ক্ষেত্র এক নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি বেছে নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যারা মশা নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের দিয়ে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি তারপর এর প্রয়োগ করা উচিত। বিপরীতে, ডেঙ্গু রোগের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, লার্ভার প্রজনন স্থান হ্রাস করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম।
যাইহোক, বিটিআই-এর কার্যকারিতা এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ ব্যবস্থার সাথে কীটতাত্ত্বিক ফলাফলগুলো যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রের ওপর পরিবেশগত এবং খাদ্য-জাল সম্পর্কিত প্রভাব নিয়েও গবেষণা করতে হবে। বিটিআই ফর্মুলেশন এবং হারের পাশাপাশি অ্যাপ্লিকেশনের ফ্রিকোয়েন্সিগুলো একটি স্বচ্ছ উপায়ে ব্যবহার করার পরামর্শ রইলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি। তাহলে মশা নিয়ন্ত্রণের সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের সময় বাঁচবে এবং সরকারের অর্থের অপচয় ও হ্রাস পাবে।
লেখক : কীটতত্ত্ববিদ ও মশক গবেষক সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
মন্তব্য করুন