জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে বন্যা নেই এখন। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে চার দফা বন্যায় সব হারানোর পর আবারও ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছে নদীপাড়ের চাষিরা।
যমুনায় ভেঙে যাওয়া বাড়ি এখন ধু-ধু বালুর চর। আর সেই চরেই সম্প্রসারিত কৃষির চাষ করে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছে বন্যায় সব হারার দল। নদীর চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে এখন আয়ের পথ দেখছেন। বিস্তীর্ণ বালুচরে শোভা পাচ্ছে নানারকম ফসলের সমারোহ। আর এই ফসল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চরের হতদরিদ্ররা এখন সুদিনের গল্প বুনতে শুরু করেছে।
জানা যায়, ইসলামপুর যমুনা নদী দিয়ে বেষ্টিত। গত কয়েক বছর ধরে যমুনায় ভাঙনে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে পলিমাটি পড়ে আছে। আর মাইলের পর মাইল পড়ে থাকা চরের জমিতে চাষ শুরু করেছে নদীভাঙনের কবলে পড়া চাষিরা। ভাগ্য বদলের স্বপ্নে ফসল বুনে ঘরে তুলে লাভবান হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চরাঞ্চলের জমিগুলোতে বন্যার কারণে পানি থাকে।
সম্প্রতি দীর্ঘায়িত বন্যার কারণে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি ছিল। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাষিরা নতুন করে উর্বর চরের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে। যমুনা নদীর তীরবর্তী বেলগাছা, চিনাডুলী ও নোয়ারপাড়ার মধ্যে সাপধরী চরাঞ্চল বেশি হওয়ায় ফসলও বেশি চাষাবাদ হয়। এ চরগুলোর মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান মাধ্যম কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। বংশ পরম্পরায় চরে থাকা এ চিরসংগ্রামী মানুষ নিজেদের পরিশ্রমে আর সরকারের সার্বিক সহায়তায় ধু-ধু বালিতে ফসলের করে যাচ্ছে।
ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরে এবার ৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে দেশি ও হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ মণ মরিচ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ইসলামপুর উপজেলা চরাঞ্চলের ফসল।
উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, তিনি কয়েক বছর ধরেই মরিচ চাষ করছেন। দেশি জাতের মরিচ প্রতি বিঘায় ৫০ মণ এবং হাইব্রিড জাতের প্রতি বিঘায় ৭০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মরিচ চাষে লাভ হওয়ায় এ এলাকার চাষিরা বেশি আগ্রহী হচ্ছে।
কাজলা কুড়িপাড়া চরের মরিচ চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, গত বছর চরের প্রতি বিঘা (প্রায়) জমি থেকে প্রায় ৫০ মণ কাঁচামরিচ পাওয়া গেছে। এ বছরের গাছে ভালোই মরিচ ধরেছে। সবেমাত্র মরিচ উত্তোলন শুরু হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এবারের সবচেয়ে বেশি আয় করতে পারবেন তারা।
ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএলএম রেজুয়ান কালবেলাকে জানান, চলতি বছরে জমিতে দীর্ঘ সময় বন্যার পানি থাকায় মরিচের গাছে রোগ জীবাণু কম। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে, উৎপাদন বেশি হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন চাষিদের। চরের চাষিরা চরাঞ্চলে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। চরে চাষের পর ফলনগুলো স্থানীয় হাটে বিক্রি করে তারা আবার ফিরে যায়। চরে যাওয়া-আসাটা নদী পথে বলে পরিবহন খরচও কম।
মন্তব্য করুন