

মুখস্থ নয়, দরকার বলিষ্ঠ যোগাযোগ ও আত্মপ্রকাশের শিক্ষা। বর্তমান বিশ্বে সফলতার জন্য শুধু জ্ঞান থাকা যথেষ্ট নয়। নিজের ভাবনা ও বক্তব্য স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রকাশ করতে পারা আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, বাংলাদেশে অধিকাংশ শিক্ষাব্যবস্থা এখনো মুখস্থভিত্তিক ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীরা বইয়ের তথ্য মুখস্থ করলেও, বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগে অক্ষম।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশই ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে না, এবং ফ্রিহ্যান্ড রাইটিংয়েও দুর্বল। এই পরিস্থিতি কেবল ভাষার অক্ষমতা নয়; বরং আত্মপ্রকাশের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বর্তমানে বিশ্বে যোগাযোগই হচ্ছে সফলতার মূল চাবিকাঠি। যে ব্যক্তি নিজের ভাবনা ও বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে, তারাই নেতৃত্ব, কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিক সংযোগে এগিয়ে থাকতে পারে। উন্নত দেশগুলো যেমন সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া এরই মধ্যে এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহারিক ও কার্যক্রমভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুরের শিক্ষা মন্ত্রণালয় (২০২১)-এর রিপোর্টে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে অন্তত দুবার ‘অরাল প্রেজেন্টেশন ও ফ্রি রাইটিং সেশন’ এ অংশগ্রহণ করে। এর ফলে তারা আত্মবিশ্বাস, ভাষাগত দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মুখের ভাষা দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে, যা ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশের জন্যও এ মডেলটি নেওয়া সম্ভব। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দৈনন্দিন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় স্পিকিং, ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং, এক্সটেম্পর স্পিচ ও ক্লাস প্রেজেন্টেশনের অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী বক্তা ও সৃজনশীল চিন্তাশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের শুধু ব্যাকরণ শেখানোর বাইরে গিয়ে বাস্তব কথোপকথন, প্রেজেন্টেশন ও ক্রিটিক্যাল রাইটিং শেখাতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্পিকিং ও প্রেজেন্টেশনের অভ্যস্ততা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও একাডেমিক পারফরম্যান্স ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি করে।
অতএব, এখনই এই দক্ষতাগুলো শেখা জরুরি। কারণ, এগুলো কেবল শিক্ষাজীবনে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাসী বক্তা ও সৃজনশীল লেখক প্রজন্ম গড়ে উঠলে তারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। প্রকৃত জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও স্পষ্ট যোগাযোগের দক্ষতা। মুখস্থের যুগ শেষ, এখন দরকার প্রকৃত বোঝাপড়া ও আত্মবিশ্বাস। এই দক্ষতাগুলো অর্জন ছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাই, এই পরিবর্তনের জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া সময়। কারণ, আগামী দিনগুলো শুধু জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে না, বরং আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার ওপর-ই সিংহভাগ নির্ভর করে।
লেখক : শাহরিয়ার ইমন, শিক্ষা উদ্যোক্তা, ফাস্টেস্ট ফ্লুয়েন্সির উদ্ভাবক ও ইংরেজি দক্ষতা উন্নয়ন গবেষক।
মন্তব্য করুন