

সাভারে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই ইউনিভার্সিটির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলের সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল থেকে থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে হামলা চালান। এতে কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর হয়।
পরে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হলে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘর্ষ।
চোখে মুখে আতঙ্ক, চারদিক জ্বলছে আগুন—এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় ড্যাফোডিলের প্রক্টরিয়াল টিম। একপর্যায়ে রাত ১২টার পর ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। লুট করা হয় কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, পুড়িয়ে ফেলা হয় তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার। আরও পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর হয়।
সংঘর্ষের সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ভোররাত পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহায়তা পাননি শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
এ ঘটনায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব) নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা লেখেন, ‘এটা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের আচরণ হতে পারে না। প্রতিবেশী দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঝগড়া হতে পারে, তর্ক হতে পারে, বিবাদ হতে পারে! তাই বলে এভাবে হাজারে হাজারে গিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ধ্বংস করা, সম্পদ ধ্বংস করা, নিজের ভাই-বোনদের মেরে আহত করা কোনোভাবেই কাম্য না! এটা অসভ্যতা, এটা উগ্রতা, এটা হিংস্রতা! কী করতেছো তোমরা! নিজেদের রক্ত নিজেরাই খাচ্ছো?’
পুসাব আরও জানিয়েছে, রাতে ড্যাফোডিলের কিছু শিক্ষার্থীকে সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়! যা ঘটনাকে আরও উস্কে দেয়। এখানে ক্ষমতা প্রদর্শনের রেষারেষি পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই ভবনের মালিক আর এরপর একটা বিশ্ববিদ্যালয়! আহত হয়েছে ড্যাফোডিলের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী, একই সঙ্গে আহত হয়েছে সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও অনেক শিক্ষার্থী! এর শেষ গিয়ে ঠেকেছে রাতের ভয়াবহতায়। সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর যেমন ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে ড্যাফোডিলের মতন আপরাইজিং একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামেরও।
‘কোনো অবস্থাতেই নিজেদের রেষারেষিতে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা স্বাভাবিক সমাধান না করে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থনের সুযোগ নেই। সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছৃঙ্খল যে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাদের কেউ যেমন আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, একই সঙ্গে ড্যাফোডিল এর যে সকল উগ্র উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উভয়পক্ষের কারও অন্যায় কর্মকাণ্ডকে ন্যূনতম বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এরা উভয়পক্ষই উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।’
এ বিষয়ে সাভার থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনা যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন