

চীনের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ঈসা (আ.)-এর জন্মের ৩ হাজার বছর পূর্বে। ঐতিহ্য অনুসারে, চীনা প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা এর উৎপত্তি হোয়াংদির মতো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে। যিনি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়ে হুয়াংদি নেইজিং দ্য ইয়েলো এম্পায়ার ইনার ক্লাসিক লিখেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
তবে, এই বইটি সম্ভবত অনেক পরে, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে রচিত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, হুয়াংদি নেইজিং ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সম্মানিত কর্তৃত্ব হিসেবে কাজ করে আসছে, যা চীনা চিকিৎসা পদ্ধতির তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রদান করে। ফুশি ও শেনং-এর মতো অন্যান্য সম্রাটরাও অবদান রেখেছিলেন। ফুশিকে ব্যাগুয়া আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যা চিকিৎসা ও দার্শনিক চিন্তাভাবনার প্রতীকী ভিত্তি তৈরি করে।
চীনাদের মধ্যে প্রথম উদ্ভিদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন শপন নং। তিনি বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের প্রভাব নিজের ওপর পরীক্ষা করে দেখতেন। শারীরবৃত্তীয় ও দেহের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানার আগ্রহই দেহের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাচীন চীনা চিকিৎসকদের অগ্রসরতার প্রধান কারণ। তারা শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন কায়দা কৌশলও আয়ত্ত করেছিলেন। প্রাচীন চীনে চিকিৎসার প্রচলিত পদ্ধতি ছিল গাছ, লতা-পাতার ওষুধ, গরম শিক দ্বারা দহন, মক্সিবিউশন এবং আকুপাংচার।
আহমদ শওকত তাশি তারিখে তিব ওয়া আদাবুহু ওয়া আলামুহু গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে আকুপাংচার নামে যে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে সেটাই মূলত প্রাচীন চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি।
ফিজিওলজির তথ্য অনুযায়ী, মানুষের শরীরের মধ্যেই সব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে গোলযোগ হলেই আমরা আক্রান্ত হই বিভিন্ন রোগে। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর শরীরের ঘাটতিগুলো অনুসন্ধান করে ওষুধ প্রয়োগ করে শরীরের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করে। আকুপাংচার চিকিৎসার পদ্ধতিও তাই। পার্থক্য একটাই- এখানে ঔষধ খেতে হয় না। নার্ভ স্টুমুলেন্ট করে শরীরের ভেতরে থাকা ক্যামিকেলগুলোর পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে তথা দেহের সাম্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখাই আকুপাংচার চিকিৎসার কাজ। যাকে বলা হয় জীবনীশক্তি বা চী। যা সুস্থ অবস্থায় ইন এবং ইয়াং-এর সাম্যাবস্থার বহিঃপ্রকাশ।
আকুপাংচার সব রোগেই ভালো ফলাফল প্রদান করে। নিম্নে কিছু রোগ উল্লেখ করা হলো- মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, অনিদ্রা, স্মৃতিভ্রংশ, ভুলে যাওয়া, মুখের পক্ষাঘাত, গলা ও চোয়ালের জড়তা, বেলস পালসি (মুখের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া), মৃগী রোগ, পারকিনসন্স রোগ, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, ডিস্ক প্রলেপ্স, সায়াটিকার ব্যথা, গেটে ব্যথা, গেটে বাত, দ্রুত বীর্যস্খলন, শুক্রস্বল্পতা, শুক্রমেহ, ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম, বদহজম, উচ্চরক্তচাপ, মাথা ঘুরা, অটিজম, মনযোগে সমস্যা ও ওভার একটিভিটি, ঘাড় শক্ত হওয়া ইত্যাদি। ডা. মো. মোশফিকুর রহমান আকুপাংচার স্পেশালিস্ট ও ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন এক্সপার্ট চিফ আকুপাংচারিস্ট ও কনসালটেন্ট আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা।
মন্তব্য করুন