ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

দুঃসংবাদ ধেয়ে আসছে, অনেকেই পালাবার চেষ্টা করছেন

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি : সৌজন্য
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি : সৌজন্য

চলতি বছরের ২৪ মে এক টুইট বার্তার মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের নিরিখে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের নিরিখে এ ভিসানীতি গ্রহণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নন্দিত সঞ্চালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় চ্যানেল আই প্রচারিত জনপ্রিয় আলোচনা অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় এসে ভিসানীতি বিষয়টিকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল লু। সেখানে ভিসানীতি কি এবং কেন সেটা বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেন তিনি।

গত ২০ সেপ্টেম্বর, মার্কিন মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানালেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের ঘোষিত সেই ভিসানীতি কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর কার্যকর করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটা এখন আর তাত্ত্বিক বিষয় নয়। এটা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

এরপর ঢাকাস্থ এক মার্কিন মুখপাত্র ব্রায়ান জানালেন, যে কেউ মার্কিন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন। যে বা যারা সুস্থ ও অবাধ নির্বাচন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বাধা সৃষ্টি করবে তারা এই ভিসা নীতির আওতায় পড়বেন।

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই এতসব আয়োজন। মার্কিন এই ভিসানীতির দ্বারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কতটা প্রভাবিত হবে সেটি মোটামুটি স্পষ্ট। শাসক দলের শীর্ষ নেত্রীবৃন্দ যা কিছুই বলুক না কেন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে মার্কিন ভিসানীতি এক ধরনের গভীর প্রভাব ফেলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য যারা ‘দুষ্টু’ আচরণ করবে তাদের জন্য এক ধরনের ভীতি তৈরি করেছে এই ভিসানীতি। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এই ‘দুষ্টু’ টার্মটি নিয়ে এসেছিলেন আমাদের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ মহোদয়। তিনি বলেছিলেন, আমরা যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি বা যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছি তাতে দুষ্টু লোকেরা পালিয়ে যাবে।

আমেরিকা অনেক ভেবেচিন্তে এবং অনেক গবেষণা করেই এই ভিসানীতি বাংলাদেশের জন্য নিয়ে এসেছে। মার্কিন সরকারের মধ্যে স্যাংশন নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের একজন সেরা গবেষক হলেন রিচার্ড নেফিউ। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশে এসে তিনি সরাসরি দুদক কার্যালয়ে যান। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিবকে সঙ্গে নিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন- দুর্নীতি নিরোধে স্যাংশন এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে মেজার এবং কাউন্টার মেজার গ্রহণ করা হচ্ছে তার পর্যবেক্ষণে আমার অনুমান ছিল বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। কালবেলায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে আমি বিষয়টি স্পষ্ট করি। আমি মনে করি, এর জন্য আগামী অক্টোবর একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।

চারদিক থেকে যেভাবে চাপ এবং দুঃসংবাদ ধেয়ে আসছে তাতে হয়তো আগামী অক্টোবর স্বাভাবিক সময় হবে না। আমরা যেহেতু সাংবিধানিক কাঠামোতে বিশ্বাস করি তাই হয়তো সংবিধান সম্মত একটি ট্রাম্প কার্ড জরুরি অবস্থাকেই গ্রহণ করা একমাত্র উপায় হতে পারে।

আগামী অক্টোবরের ১০ কিংবা ১২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গেছে। ওই বক্তৃতায় তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। আর এর পরপরই হয়তো জরুরি অবস্থার মতো কোনো ঘোষণা আসতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সব চাবিকাঠি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যে ধসটা নামতে যাচ্ছে তা আমাদের জন্য কঠিন সময় বয়ে আনতে পারে। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার যে সংস্কৃতি সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সেটি অনুবর্তী হয়ে হয়তো আমাদের ওপরই পড়বে।

আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেভাবে স্যাংশনকে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেটি কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। মার্কিন স্যাংশন মারাত্মক প্রভাব ফেলবে আমাদের অর্থনীতিতে, আমাদের সংস্কৃতিতে এবং আমাদের রাজনীতিতে। প্রভাব পড়বে আমাদের নির্বাচনী কাঠামোতেও।

মুখে যে যাই বলুক না কেন, ইতিমধ্যেই অনেকে ভড়কে গেছেন। অনেকেই পালাবার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তাদের রেটোরিকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখনই আমরা এই ভিসানীতির প্রভাব লক্ষ্য করছি।

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ : শিক্ষাবিদ; রাজনীতি বিশ্লেষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংগঠন জানিপপের চেয়ারম্যান

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ৫০ বছরের পুরোনো

মসজিদে ডুকে ইমামকে যুবদল নেতার বেধড়ক মারধর

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পরও বেঁচে ছিলেন এক আরোহী

ছেলের আত্মহত্যায় মায়ের বিষপান

অপু বিশ্বাসের অভিযোগে ৩ জনকে সতর্ক করল পুলিশ

চট্টগ্রামে সোর্সের তথ্যে বেপরোয়া পুলিশ!

মেয়রের সামনে কাউন্সিলর রতনকে জুতাপেটা করলেন চামেলী

স্ত্রীর মরদেহ বিছানায়, ফ্যানে ঝুলছিলেন স্বামী

বদলির প্রায় দুই বছরেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনি

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে টেনিস বল গ্রাউন্ড নির্মাণকাজে অনিয়ম

১০

বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের আহ্বান মহিলা ঐক্য পরিষদের 

১১

স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সম্মেলন শুক্রবার

১২

ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে বিয়ে, ডিভোর্স দিয়ে স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ভিডিও ফেসবুকে

১৩

বিএনপির হারানোর কিছু নেই : আমিনুল হক

১৪

টেকনাফে অপহরণ চক্রের প্রধান মোর্শেদ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

১৫

যাত্রীর ছুরিকাঘাতে অটোরিকশাচালক খুন

১৬

অটোরিকশা শ্রমিকদের অভিনন্দন শ্রমিক দলের

১৭

এটিএম বুথের সামনে মিলল মদ, অতঃপর...

১৮

‘জানাজায় যে শরিক হবেন তাকে ভোট দেবেন’

১৯

বনরক্ষীদের দেখে হরিণের মাংস ফেলে পালাল শিকারিরা

২০
X