‘থামছে না ডেঙ্গুতে মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা’ এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে আরও ২ হাজার ৪৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরজুড়েই এমন মৃত্যু ও আক্রান্ত দেখল দেশ। এক সময় শুধু রাজধানী ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ থাকলেও বর্তমানে তা সারা দেশে ছড়িয়েছে। এ অবস্থা নিয়ে রিয়াজ মাহমুদ নামের এক পাঠক লেখেন, ‘যেখানে সেখানে ময়লা জমে থাকা এবং ময়লা পানির প্রভাবে ডেঙ্গু প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এসবের সমাধান সিটি করপোরেশন কত দিনে শেষ করবে।’
এটিএম সাজ্জাদুল হক লেখেন, ‘নিজে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে। আপনার বাড়িঘরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখুন।’
দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া যাক। শনিবার (১৩ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ হাজার ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৬০ এবং সারা দেশে ১ হাজার ৫৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ১ হাজার ৯৪৯ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৪৮৪ এবং সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে এক হাজার ৪৬৫ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন ঢাকায় এবং পাঁচজন সারা দেশে মারা যান।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১ হাজার ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭২২ এবং সারা দেশে ৪৩৬ জন মারা যান।
চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৯১ হাজার ৪৬৮ ও সারা দেশে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৮৮ হাজার ২৩৭ এবং সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫২০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
বর্তমানে সারা দেশে মোট ৮ হাজার ৩৩৬ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকায় ২ হাজার ৫০৯ এবং সারা দেশে ৫ হাজার ৮২৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার হার শতকরা ৯৬ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি থাকার হার চার শতাংশ এবং মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।
গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬২ হাজার ৩৮২ এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যায়।
এ তথ্য থেকে সারা দেশে ডেঙ্গুর ভয়বহতা অনুমেয়। বছরের শুরু থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীর চাপ বাড়ছিল। সে সময় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা উঠে আসে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জোরালো হয়। কিন্তু এডিসের প্রকোপ তেমন করেনি। নুর আহমেদ সিদ্দিকী লেখেন, ‘দেশে কেউ ভালো নেই। কেউ ক্ষমতায় থাকতে এবং কেউ ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। ডেঙ্গু এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। একে তো দেশে ভোট ও ভাতের অধিকার নেই, তার ওপর সাধারণ নাগরিক আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। অন্য দেশে হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী লজ্জায় পদত্যাগ করতেন। স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে অযোগ্যদের অপসারণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এ পাঠক।
এদিকে ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যে এক শ্রেণির হাসপাতাল ব্যবসায়ী রোগীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পাঠক মো. স্বাধীন মালিক। তিনি লেখেন, ‘প্রশ্ন হলো জ্বর হলে যারা হাসপাতালে যায় তাদের সবাই কি ডেঙ্গু রোগী? সাধারণ জ্বর হলেও তারা কিন্তু ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যান। আর এই সুযোগে কিছু হাসপাতাল নিজেদের স্বার্থে সাধারণ জ্বরকেও ডেঙ্গু রোগী বলে চালিয়ে দেয়। সাধারণ জ্বরের রোগীকে যদি ডেঙ্গু চিকিৎসা দেওয়া হয় তখন তো ওই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। ডেঙ্গু হলে সচেতনতাই মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারে।
নুর মোহাম্মদ সবুজ লেখেন, ‘সরকার ও সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই এই রকম অবস্থা।’
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন