ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সবার জেতার সুযোগ আছে

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ছবি : সৌজন্য
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ছবি : সৌজন্য

আন্দোলন-সংগ্রামই বাঙালি জাতির ইতিহাস এবং বাংলাদেশের ইতিহাস। এই আন্দোলন-সংগ্রাম কখনও মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে, কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামে, কখনও স্বৈরাচার নিপাতে, কখনও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে এবং কখনও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে।

প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম থেকেই বিজয় এসেছে এবং দেশ তার সুফল পেয়েছে। তবে, সঙ্গত কারণেই এসব ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ শক্তি পরাজিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের ছাত্র সমাজের কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে সবার জেতার সুযোগ আছে।

এবারের কোটাবিরোধী আন্দোলন বিদ্যমান কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র নিয়ে করা একটি রিটের পরিপেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও অজানা। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর তা যৌক্তিক মনে না হলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সরকারের আপিল করার সুযোগ আছে।

সরকার সে সুযোগ কাজে লাগালে এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করলে অথবা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলে দেশের বিচার বিভাগের লাভ ছাড়া ক্ষতির কিছু নেই। বরং এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের হারানো আস্থা কিছুটা হলেও ফিরে আসার সুযোগ হবে। ফলে দেশের বিচার বিভাগ জিতে যাবে।

এ আন্দলোন থেকে সরকারের বহুমুখী সুফল ঘরে তোলার সুযোগ আছে। এই শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস আন্দোলনে বাধা না দেওয়ায় আন্দলোন উৎসব মুখর হচ্ছে যা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর আর তেমন দেখা যায়নি। ফলে দেশে-বিদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। আন্দলোন-সংগ্রাম দমনে সরকারের বিরুদ্ধে যে পাহাড়সম অভিযোগ আছে তা কিছুটা হলেও কমতে পারে।

আর আপিলের রায় সরকার এবং ছাত্রসমাজের পক্ষে আসলে তো সরকার এবং ছাত্র সমাজ উভয়পক্ষই জিতে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের লাভের পাল্লাই বেশি ভারী হবে কেননা ২০১৮ সালে ছাত্রসমাজের আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিল করে সরকারের ভাবমূর্তি যতটুকু উজ্জ্বল হয়েছিল তা সমুজ্জ্বল হবে।

তাছাড়া, আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা তো বেশিরভাগ সরকার পক্ষের ছাত্র-সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অনুসারী। তাই তারা জিতলে তো সরকারই জিতে যায়।

অন্যদিকে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সাবেক এবং বর্তমান কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগের সংবাদ মূলধারা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে জায়গা করে নেওয়ায় সরকারের বিব্রত হাওয়া স্বাভাবিক ছিল। কোটাবিরোধী আন্দলোনের সংবাদ আপাতত সেই জায়গা দখল করে নেওয়ায় সে ক্ষেত্রে কিছু স্বস্তি আসা স্বাভাবিক।

এই আন্দোলনে বাক-শক্তিহীন বিরোধী দল নৈতিক সমর্থন দিয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে পারছে। তাই তাদেরও জিত আছে।তবে সবচেয়ে বেশি জিত আছে দেশের। শতভাগে বিভক্ত ছাত্রসমাজের একই প্লাটফর্মে এসে শান্তিপূর্ণভাবে টানা আন্দলোন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সত্যিই দেশের জন্য একটা বড় পাওয়া।

দেশের প্রয়োজনে ছাত্রসমাজের এই একতাবদ্ধতা ধরে রাখতে পারলে জাতি কখনও পথ হারাবে না। এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজের মধ্যে নেতৃত্বের বীজ বপন হচ্ছে যা দেশের আরেকটা বড় পাওয়া। আর সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে ছাত্রসমাজের বিলুপ্ত প্রায় কনফিডেন্স ফিরে পাওয়া যা এই সময়ে যুবসমাজের টিকে থাকার জন্য অতীব জরুরি।

এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বাতিল হলেও আন্দোলনরত ছাত্রসমাজের বৃহৎ অংশই হয়তো সরকারি চাকরি পাবে না। তবে এই ফিরে পাওয়া কনফিডেন্স তাদের জীবন চলার পথে একটি বিশাল পাথেও হিসাবে কাজ করবে যা কাউকে কাউকে বড় উদ্যোক্ততা হতেও সাহায্য করবে।

তাই চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্ততা হওয়ার বীজ ছাত্র থাকা অবস্থায় বপন করতে হবে। তবে কিছু শর্ত আছে। আর তা হলো নিজেদের মধ্যে একতা, সততা, সরলতা এবং অহিংসতা ধরে রাখতে হবে।

আরও শর্ত হলো- যে কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় শর্ত হলো অন্তরকে জটিলতা, কুটিলতা, প্রতিহিংসাপরায়নতা এবং পরশ্রীকাতরতা মুক্ত করে পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ এবং রেষারেষি-হানাহানি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে । এসব শর্ত মেনে অগ্রসর হলে তোমাদের শক্তি-সমাজ, দেশ এবং জাতি গঠনের আন্দোলনেও রূপান্তর হবে। এটিই ছাত্রসমাজের কাছে প্রত্যাশা।

লেখক : ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্তে ১২ রোহিঙ্গাকে পুশইন

৫ বছর পর এবি পার্টি থেকে আবার জামায়াতে ফিরলেন ৪০ নেতাকর্মী

প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করা হবে : আমিনুল হক

একটি মহল পিআরের নামে গণতন্ত্র নস্যাতের পাঁয়তারা করছে : টুকু

ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্র ফোরামের নবগঠিত কমিটি অনুমোদন

তিতুমীর কলেজ ক্যান্টিনে ফ্যান বসালেন ছাত্রদল নেতা রিমু

বগুড়ায় আগুনে নিঃস্ব তিন পরিবারের পাশে তারেক রহমান

শেষ হলো ঢাকা জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে ৩ দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলা

ট্রাম্পের হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ

এনসিপির সেই নেত্রীকে অব্যাহতি

১০

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য জবির বিশেষ পরিবহন সেবা

১১

ম্যাচ চলাকালীন হৃদরোগে লঙ্কান ক্রিকেটারের বাবার মৃত্যু

১২

বিদেশি ঋণে রেকর্ড, ১১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

১৩

‘শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমাদের সংগ্রাম চলবে’

১৪

দুই দফা দাবি / আন্দোলনস্থান ত্যাগে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

১৫

বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার আসামি টগর গ্রেপ্তার

১৬

শ্রীলঙ্কার জয়ে ভর করে সুপার ফোরে বাংলাদেশ

১৭

গাজায় ইসরায়েলের চার সেনা নিহত

১৮

রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে এক আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৯

ইন্দোনেশিয়ায় আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন / অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও সম্প্রীতিময় আন্তঃধর্মীয় সংলাপে গুরুত্ব

২০
X