শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
আনন্দ কুমার
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ট্রিবিউন ইন্ডিয়ার নিবন্ধ

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ?

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগও ততই বাড়ছে। ছবি: বিবিসি
নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগও ততই বাড়ছে। ছবি: বিবিসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগও ততই বাড়ছে। সম্প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সত্ত্বেও দেশটি এখন নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন যেসব সমস্যার মোকাবিলা করছে তার বেশিরভাগই বাহ্যিক কারণে সৃষ্ট। যদিও বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাহায্যের ফলে এ সংকট কিছুটা বিলম্বিত করা গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় দেশটি ক্ষুদ্র আকারের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হোঁচট খাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত তিন মেয়াদে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বর্তমানে এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাংলাদেশ। দেশটি শুধু ভারতের পরে রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও দেশটি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

যদিও দেশটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করছে। এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে। যখন বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তখন বাংলাদেশও রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ হ্রাসের মতো সমস্যায় পড়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মকভাবে পলিসি রেট বাড়িয়ে দেয় তখন বাংলাদেশের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতির অবনমন ঘটে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা এশিয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন, যা উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর বেশ কয়েকটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মুদ্রার এমনতর অবমূল্যায়ন সাধারণত আমদানিকৃত খাদ্য ও জ্বালানির বর্ধিত খরচের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। এটি বাণিজ্য ভারসাম্যে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে। এ কারণে দেশগুলোর জন্য জরুরি আমদানি ও বাহ্যিক ঋণ পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশও এর ফল ভোগ করছে যেমন, টাকার মূল্য ডলারের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমেছে।

৬ জুলাইয়ে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। পতনের কারণ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার অস্থির থাকায় বিগত বছরে প্রায় ২৮ শতাংশ রিজার্ভ ধরা হয় এবং এটি সৃষ্টি হয়েছে প্রাথমিকভাবে ঘাটতির কারণে। বাংলাদেশে ডলার সংকট শুরু হয়েছে আমদানি করা পণ্যের দামের সঙ্গে রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের পার্থক্যের কারণে। ফল হিসেবে বাংলাদেশকে তার জ্বালানি আমদানির চাহিদা মেটাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

করোনা মহামারির সময়ে ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করা অব্যাহত রাখে এবং জরুরি জিনিসপত্র এবং শিল্পকারখানার কাঁচামাল সরবরাহ করে। তবে একই সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছিল যা বাংলাদেশের উপরেও প্রভাব ফেলে। এসব তখনই ঘটছে যখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এবং আরও শক্তিশালী নিরাপত্তা বন্ধনের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ফ্রিগেট ও সামরিক যোগাযোগে সক্ষম যুদ্ধবিমান দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়। একটি হলো সামরিক তথ্যচুক্তি এবং আরেকটি হলো অধিগ্রহণ ও ক্রস সার্ভিস চুক্তি। এই চুক্তিগুলো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলো স্বাক্ষর হলে প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত বাণিজ্য, তথ্য বিনিময় এবং দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। তবে এসব চুক্তি চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ তাড়াহুড়ো করেনি।

জবাবে, ভারত বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা শঙ্কিত যে, এতে প্রতিবেশী দেশ ও বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সীমানা হিসেবে ভারতের সামগ্রিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে । বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার বর্তমান পদক্ষেপে ভারত অসন্তুষ্ট। ভারত সরকার আশঙ্কা করছে যে, যদি জেইআইকে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকায় মৌলবাদ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে।

জবাবে ভারত মার্কিনিদের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী দেশটির নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আমেরিকার নাক গলানোতে অখুশি ভারত। ভারতীয় সরকার এটা নিয়ে সন্ত্রস্ত যে, জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনের উত্থানের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকায় মৌলবাদের বিস্তার ঘটাবে।

তবে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের মৌসুম চলছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর একটি সুষ্ঠু বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে যার ফলে এই দুই দেশই চায় সাধারণ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়। দুই দেশই এটা মনে করে আওয়ামী লীগের এখন চীনা ও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আগামী মাসে এই বার্তাগুলোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সামিটে জানানো হবে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে হাসিনা সরকার মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। অবশ্য সেসব ভূমিকা এখন জামায়াতের পুনর্জাগরণে কিছুটা ম্লান হতে শুরু করেছে।

তদুপরি, আশঙ্কা রয়েছে চীনের মতো দেশ যাদের এশিয়ার অনেক দেশে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে, তারা বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে পুঁজি করতে পারে। যদিও চীনের সীমিত ঋণের কারণে বাংলাদেশের ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি কম। তবে অন্যান্য কৌশলগত বিষয় রয়েছে। চীন, বাংলাদেশের একটি প্রধান রপ্তানিকারক এবং বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহকারী। এরই মধ্যে দেশটি বিভিন্ন জায়গায় তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় তাদের ভূমিকাও সবার জানা। শ্রীলঙ্কায় সামরিক তৎপরতা তারই উদাহরণ। বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।

আনন্দ কুমার: অ্যাসোসিয়েট ফেলো, ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস

ভাষান্তর: সরকার জারিফ

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাস্তায় ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেত্রীকে মারধর  

এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

সেমিনারে ঢাবি অধ্যাপক  / পুলিশ রিমান্ডে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচারিক প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত সহিংসতা

ইসরায়েলকে ঠেকাতে ছেলেকে পাঠিয়ে ইরানকে সতর্ক করল সৌদি বাদশা!

হৃদরোগ সচেতনতা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি : ডা. জুবাইদা রহমান

এসএ গেমসে ৬৫০ জনের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট চূড়ান্ত

কাবাডির ফাইনালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ

ভূপাতিত ৫ ভারতীয় যুদ্ধবিমান, স্বীকারোক্তি বিজেপি নেতার!

ছাত্রাবাসে ৫ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, ছাত্রলীগ নেতা আটক

পালিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হলো না রাকিবের

১০

সাকিব ইস্যুতে যা বললেন বিসিবির নতুন সভাপতি

১১

সিরিজ বাঁচাতে রানের পাহাড় টপকাতে হবে বাংলাদেশকে

১২

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের মাঝে খাবার বিতরণ

১৩

যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হচ্ছে ‘বার্থ ট্যুরিজম’

১৪

১০ দিনের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে বৃদ্ধার মৃত্যু

১৫

পোস্টিং পছন্দ হয়নি তাই হাসপাতালে আসেন না চিকিৎসক

১৬

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি চলতি বছর

১৭

‘চিকেনস নেক’-এ রাফাল জেট ও এস-৪০০ বসাল ভারত

১৮

জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, নেপথ্যে কারা

১৯

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌকায় আগুন

২০
X