এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীর পথনকশায় বিশ্বমানের 'স্মার্ট পুলিশ' 

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবতায় ‘স্মার্ট পুলিশ’। এমন স্বপ্নের গোড়াপত্তন করেছেন স্বপ্নময়ী মহিয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দূরদর্শিতায় অতুলনীয় পাঁচবারের সরকারপ্রধানের হাত ধরেই সময়ের প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। বদলে যাওয়া অপরাধের ধরনের সঙ্গে মাঠ পর্যায়েও পুলিশের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সেবা। অপরাধ তদন্ত থেকে শুরু করে অপরাধী শনাক্ত, দ্রুত গ্রেপ্তার ও দুর্ঘটনায় জরুরি সেবা প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের ব্যবহার বেড়েছে পুলিশে। দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদ দমনে শান্তি শপথে আলোকোজ্জ্বল এক স্বপ্নের সরণিতে সম্ভাবনা ও সক্ষমতার প্রোজ্জ্বল প্রতীক ২৫ মার্চ কালরাতের প্রথম প্রহরে গভীর দেশপ্রেমের স্বাতন্ত্রিকতার চিহ্ন এঁকে পাকিদের হটাতে ‘থ্রি-নট-থ্রি’ রাইফেল হাতে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা পুলিশ।

বক্রকথন, সংকীর্ণতা বা শ্লেষ পেরিয়ে নিজেদের সোঁদা-মাটি ঘ্রাণে ধন্য সেই পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাশিত ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে রূপান্তরের স্বপ্নযাত্রায় দেদীপ্যমান করেছেন নিজেদের। শত সাফল্যের পথ পেরিয়ে নিজের আলোকদীপ্ত পথনকশায় একটি আধুনিক, পেশাদার ও চৌকস বাহিনী গড়তে বঙ্গবন্ধুর সুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানের স্মার্ট পুলিশের রূপকল্পে একটি স্বার্থক স্বপ্নের বাস্তবায়নে করেছেন আত্ম-নিবেদন। বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী গভীর দরদ এবং অনুভূতিশীল হৃদয়ে উষ্ণ স্পর্শে দেশবাসীর মরমে পৌঁছে দিয়েছেন জনবান্ধব ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন এক সমৃদ্ধ বাহিনীর মর্যাদাপূর্ণ এক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষার ব্যাপৃত পথচলার বার্তা। সততা, নিষ্ঠা ও মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উজ্জীবিত করেছেন প্রতিনিয়ত। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।’

জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ ভিশন বাস্তবায়নে প্রত্যয়দৃঢ় কাণ্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পুলিশ বাহিনীর ত্যাগ ও অবদানে বরাবরই নিজের মুগ্ধতার কথা উচ্চারণ করেছেন। পুলিশের প্রতি ‘জনগণের আস্থা’ অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালনে বিপদে-আপদে পুলিশই সবার আগে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়। অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা এবং মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সব সময়। নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তারা। যদিও একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের পেশাগত অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ নেতৃত্ব কখনো অসৎপ্রবণ পুলিশ সদস্যদের প্রশ্রয় দেয়নি। তারা এসব অপরাধের লাগাম টেনে ধরছেন শক্ত হাতেই। নিশ্চিত করছেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আবারও জানিয়ে দিয়েছেন- ‘আমাদের কেউ অপরাধ করলে তাকেও ছাড় দিচ্ছি না। পুলিশ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে মানুষের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জনবল বাড়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাড়ছে পুলিশের সক্ষমতাও। তৈরি হয়েছে বিশেষায়িত বিভিন্ন সংস্থা ও ইউনিট। এসব বিশেষায়িত ইউনিট ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনে যেমন সফলতার পরিচয় দিচ্ছে ঠিক তেমনি ভুক্তভোগী বা অপরাধীদের ডিএনএ পরীক্ষা, রাসায়নিক পরীক্ষা, বায়োমেট্রিক তথ্য, ফোনের আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্তে দূরনিয়ন্ত্রিত ড্রোন ও রোবট ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাব, সিআইডি, পিআইবি, সিটিটিসি, এটিইউ ও ডিএমপিকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছেন একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সরকারপ্রধান নিজেই উদ্যোগী হয়ে পুলিশের সমস্যা শনাক্ত; চাওয়া-পাওয়া পূরণ করেন। ‘পুলিশবান্ধব’ একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি গোটা বাহিনীতেই তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়েছেন। সম্প্রতি আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, 'আগে কোনো মামলা তদন্ত করতে হলে সোর্সের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, তদন্ত সংক্রান্ত আধুনিক প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জামের সংযোজন ও জনবল বৃদ্ধিসহ সবকিছু মিলে তদন্তে আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, পুলিশ এখন ৯৫ শতাংশ আনডিটেক্টেড কেস সলভ করে ফেলছে।'

বৈশ্বিক সমস্যা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও নির্মূলে দেশের পুলিশ বাহিনী বীরত্বের সঙ্গে কাজ করছে। ফলত বাবা বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতি নিজের অকৃত্রিম ভালোবাসার নানা উদাহরণও তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই এমন গুণাবলি পেয়েছেন তিনি। পুলিশ পরিবারেরও পরম আপন সরকারপ্রধান। ‘মানবতার জননী’ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সব সময়ই পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী চিন্তা-ভাবনা, কার্যকর উদ্যোগ, অভিভাবকত্ব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে পুলিশ। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালনে প্রযুক্তিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার টার্গেটে অবিচল থেকেছেন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময় দক্ষতার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলানো বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান। মানুষের দোরগোড়ায় নিষ্কলুষ পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে একাকার করেছেন নিজেকে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রেখে দায়িত্বশীল ভূমিকার পরিচয় দিয়েছেন। বুকের উত্তাপে পুলিশকে আগলে রেখে তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু আহ্বান করেছিলেন, বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হওয়ার জন্য। আজ পুলিশ সেই জায়গায় এসেছে। জনগণের আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গাটাতে পুলিশ এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুলিশ আজ জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে উঠেছে।’ সরকারের সফল এই মন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, ‘২০১৪-১৫ সালে আগুনসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করার দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখেছেন। তখন কাজ করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেকটা আন্দোলনে ও সংকটে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা এবং বীরত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই আজ বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও স্মার্ট ও আত্মমর্যাদাশীল পুলিশ বাহিনী গড়তে অবিরাম সংগ্রাম ও সংকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নপূরণের দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন প্রতিনিয়ত। বারবার তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলার কাজ চলছে। দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশ পুলিশকে একটি বিশ্বমানের আইনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মাদক নির্মূল, অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা ও পুলিশের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে পুলিশের সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন পুলিশপ্রধান। আইজিপির নানামুখী পদক্ষেপে প্রকৃত অর্থেই খোলনলচে পাল্টে পুলিশ আক্ষরিক অর্থেই গড়ে ওঠছে কার্যকর স্মার্ট। এজন্যই এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ।’

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ পুলিশ এমনটি জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পুলিশের সব সদস্য নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী স্মার্ট পুলিশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপরেখা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতেও সেবার ব্রত নিয়ে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার পাশপাশি জনমানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পেশাদার মনোভাব বজায় রেখে কাজ করবে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সংযোজন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক দুটি হেলিকপ্টার। পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, জনগণকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইন এবং ডিজিটাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা দেওয়ায় 'স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩-এ ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। মাস কয়েক আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর আগে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা জাতিসংঘের অধীনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার ২০১৮’ এ ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশের বিশেষায়িত এলিট ফোর্স র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থি, জলদস্যু, সন্ত্রাস দমন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, কিশোর গ্যাং নির্মূল, সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেপ্তারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত বছরের রোববার (১৯ মার্চ) র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিভাবকত্বে র‌্যাব ফোর্সেস অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি স্মার্ট, সুসংগঠিত, আত্মপ্রত্যয়ী, নির্লোভ ও অপরাধ দমনের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ত্রিমাত্রিক এই বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূলমন্ত্রকে বুকে লালন করে আগামীতে আরও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা তিনি যেমনি জানিয়েছেন তেমনি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরের অংশ হিসেবে র‌্যাব ফোর্সেস একটি স্মার্ট বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশে দৃঢ়প্রত্যয়ের কথাও।

অবারিত আনন্দের ফল্গুধারায় বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ৪৯টি বসন্ত পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সেদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সুধী সমাবেশ ও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ৫০টি থানা ও ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্যের বিশাল ডিএমপিকে নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএমপি অতি দক্ষতার সঙ্গে এসব অপরাধকে মোকাবিলা করেছে। অপরাধ দমনে ক্রাইম বিভাগের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগ জঙ্গিবাদকে সফলতার সঙ্গে দমন করেছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। এ ছাড়া গুজব ও সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধ ডিএমপি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ডিএমপি ওয়ান স্টপ সাইবার সেন্টার চালু করতে যাচ্ছে।’ সকলের সহযোগিতায় স্মার্ট ডিএমপি গড়তে নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি। আগামীতে 'স্মার্ট ডিএমপি’ গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর।’

বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মতো বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করেছে সরকার। পার্বত্য জেলাগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিনটি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ইতোমধ্যে পুলিশে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে। পুলিশে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করা হবে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সিআইডিতে একটি সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন করেছে সরকার। এ ছাড়া ডিএমপির সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। অচিরেই বাংলাদেশ পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপন করা হবে। জেলা পর্যায়েও এই ইউনিটের শাখা রাখা হবে- গত বছরের পুলিশ সপ্তাহে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

স্মার্ট পুলিশ বিনির্মাণে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সিআইডি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে নিজেদের দৃঢ় প্রত্যয়ের বিষয়টিও উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিট স্মার্ট পুলিশিং সেবা নিশ্চিত করেছে। দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রম ও সেবা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ আরও অধিক সক্ষমতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট সিআইডি ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং হবে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বিপণন থেকে শুরু করে সেবা প্রদান সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। পরিবর্তিত এ প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে স্মার্ট পুলিশিং হবে একমাত্র নিয়ামক। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে একটি আধুনিক, দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পুলিশ গঠনে বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তদুপরি আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বাহিনীর সদস্যদের অধিকতর প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।’

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান : গণমাধ্যমকর্মী ও বিশ্লেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী শনিবার

ইতিহাসে এই দিনে কী ঘটেছিল?

অস্ট্রেলিয়ায় উদ্ভাবিত বিশ্বের প্রথম টাইটানিয়াম হার্ট মানবদেহে প্রতিস্থাপন

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

শক্তিশালী পাসপোর্টে শীর্ষে সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশের অবস্থান কত?

২৭ জুলাই : নামাজের সময়সূচি

যে ভুলে মরতে পারে টবের গাছ

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে ২৪ বছর ধরে চাকরি, অতঃপর..

ঝিনাইদহে ২৪ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট বানাচ্ছেন ৩ ভাই

জামালপুরে ১০ মামলায় আসামি ২৩০৫, গ্রেপ্তার ৩২

১০

আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়

১১

যাত্রী পারাপার কমেছে আখাউড়া স্থলবন্দরে

১২

সিলেটে ৭ চোরাই সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭

১৩

‘সাংবা‌দি‌কের ওপর হামলা নিঃস‌ন্দে‌হে ছাত্র‌দের কাজ নয়’

১৪

রাজশাহীতে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার ১১৬৩

১৫

ছাত্রলীগের রাজনীতি ছাড়ার ঘটনা নিয়ে সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১৬

তিন সমন্বয়ককে আটকের কারণ জানালেন ডিবিপ্রধান

১৭

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আল জাজিরাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার

১৮

পাকিস্তানের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

১৯

ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা-মারধর

২০
X