দেশনেতাদের যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সফরের পরে সাধারণত দেখা হয় সফরে কোন দেশ কী পেল। সে অর্থে একটি বিশেষ সফরে যে সবসময় কোনো একটি দেশ অনেক কিছু পেয়ে যায়, তা হয়তো নয়। কিন্তু সফরের ফলে নিঃসন্দেহে সম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং তাতে কিছুটা অগ্রগতিও হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের (২১-২২ জুন) নয়াদিল্লি সফরে খানিকটা সে রকমই হলো। তবে প্রাপ্তিযোগ উভয় দেশের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। কোনো দেশেরই সে রকম কিছুই যে হয়নি, তা-ও বলা যায় না। যদিও বাংলাদেশের কেউ কেউ এই সফরের পর তাদের নিজস্ব শব্দবন্ধে বলেছেন, ‘খাই খাতির’ খুবই হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ খুব কি হলো? এর আসল উত্তর দেবে সময়। তবে নিঃসন্দেহে দুই দেশেরই নতুন এমন কিছু প্রকল্প কার্যকর হওয়ার কথা ঘোষিত হয়েছে এই সফরে প্রকাশিত যৌথ ভিশন ডকুমেন্টে, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনার এই ভারত সফর ছিল এবারের বাংলাদেশের নির্বাচনে (জানুয়ারি ২০২৪) জয়ের পর তার কোনো দেশে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাঝখানে এখন চীনের অভিঘাত যে সুস্পষ্ট, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চীন চেয়েছিল শেখ হাসিনার প্রথম সফর হোক চীনে। কারণ কূটনীতির ভাষায় এই প্রথম-টা বিশেষ অর্থবহ। এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন যাচ্ছেন আগামী মাসে। ভারত যে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধুদেশ, এটা প্রমাণের জন্য ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকায় গিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন। নির্বাচনের আগে এটা একটু প্রথাবহির্ভূত লাগলেও প্রথম সফরটা নির্দিষ্ট করতেই এটা করা হয়।
গত এক বছরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের প্রায় বার দশেক দেখা হয়েছে। এ মাসেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সাম্প্রতিক ভারত সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কূটনৈতিক সাফল্য আরেকবার প্রমাণ করল। শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরই ছিল নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ গ্রহণ করার পর কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনায়কের প্রথম সরকারি ভারত সফর।
বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তিস্তার পানি বণ্টন। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন টালবাহানা চলছে। ভারতের একাংশের বক্তব্য, তিস্তায় এত বাঁধ রয়েছে, তাতে আবার বাংলাদেশে পানি বণ্টন হলে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানির পরিমাণ কমে যাবে। ফলে বিকল্প হিসেবে একটা বড় প্রকল্প গড়ার প্রস্তাব বেশ কিছুদিন ধরে উঠে আসছে, তা হলো তিস্তার যে অংশ বাংলাদেশের ভেতরে রয়েছে সেখানে অর্থাৎ ডালিয়ার কাছে একটি জলাধার নির্মাণ করে সেখানে রিভার ট্রেনিং বা সংস্কার করে বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানির পরিমাণ বাড়ানো যায় কি না এবং পানি ধরে রাখা যায় কি না? এই মহাপ্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ১০০ কোটি ডলার।
এবারের দ্বিপক্ষীয় সফরের পর যে ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এর জন্য ভারতের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ। তা ছাড়া, কূটনৈতিক দিক থেকেও এই পদক্ষেপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীন এই প্রকল্পে লগ্নি করবে বলে বসে আছে। ফলে ভারতের যোগদান এই প্রকল্প থেকে চীনকে দূরে সরিয়ে দিতে সক্ষম হলো।
আগামী মাসে শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় কূটনৈতিক বার্তা দেবে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে সবসময়ই একটা ভারতবিরোধী প্রচার থাকে, তা বেশি হোক বা কম। বর্তমানে এই প্রচারের অন্যতম মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টন। সেদিক থেকেও এই মহাপ্রকল্পে অংশ নেওয়ার ঘোষণাই শুধু নয়, ভারতের কারিগরি দল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোট ৫৪টি নদী প্রবাহিত। কিন্তু আলোচনায় সবসময় থাকে গঙ্গা আর তিস্তা। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তখনো এ নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়। আগামী ২০২৬ সালে এই চুক্তির পুনর্নবীকরণ হবে। ফলে এ বিষয়টাও দ্বিপক্ষীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট সাড়া জাগাচ্ছে। গঙ্গা চুক্তি নবীকরণের জন্যও উভয় দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠিত হবে বলে এই দ্বিপক্ষীয় সফরে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার জন্য ভিসা পেতে দেরি হয়, এই অভিযোগ সবসময়ই বাংলাদেশের নাগরিকরা করে থাকেন। এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো—বাংলাদেশের অসুস্থ নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য ভারতে আসার ক্ষেত্রে ই-ভিসার ব্যবস্থা চালু করার কথা এই সফরে ঘোষণা করা হলো। এটি কতটা ফলপ্রসূ এবং কার্যকরী হবে, এর পদ্ধতিতে কতটা স্বচ্ছতা বজায় থাকবে, তা সময়ই উত্তর দেবে। কিন্তু এটি চালুর ঘোষণা নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিনের একটি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতির এক উজ্জ্বল পদক্ষেপ।
দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের যাতায়াত খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য আকাশপথের বদলে ট্রেন বা বাস পরিষেবা বাড়ানো বিশেষ দরকার। কলকাতা-ঢাকা বাস ও ট্রেন, কলকাতা-খুলনা বাস ও ট্রেন, ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন, আগরতলা-ঢাকা বাস এবং ট্রেন ব্যবস্থার পর এবার রাজশাহীর সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ চালু হবে। আর সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম-কলকাতার মধ্যে চালু হবে সরাসরি বাস পরিষেবা।
এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ উপকৃত হবে। তা ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটের পর এবার রংপুরে খুলতে চলেছে উপদূতাবাস। এতে ওই এলাকার মানুষের সুবিধা হবে। আসলে এই সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই ভারতের গ্রিড দিয়ে বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ নেয় এবং এটা বাংলাদেশের কাছে খুবই প্রয়োজনীয়। এবার ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিতে পারবে বলে এই সফরে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আঞ্চলিক সহযোগিতা কিন্তু বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে এবং সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরাসরি কাজে লাগবে।
কয়েকটি ঘোষণায় ভারতের দিক থেকেও বেশকিছু সুবিধার কথা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের একটি নিজস্ব উপগ্রহ আছে বঙ্গবন্ধুর নামে। সেটি ফ্রান্সের সহায়তায় উৎক্ষেপিত। বাংলাদেশ এবার দ্বিতীয় উপগ্রহ আনছে এবং ফ্রান্স সেই প্রকল্পে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ এই কাজে ভারতকেই বেছে নিল। এই উপগ্রহের নামকরণ হয়েছে মৈত্রী উপগ্রহ। তা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অভিমুখ। সে ক্ষেত্রেও ভারতকেই অংশীদার হিসেবে নির্দিষ্ট করল বাংলাদেশ। এটাও ভারতের কাছে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই ঘোষণাপত্রে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের কথা ঘোষিত হয়েছে। এতে এই এলাকায় চীনের আগ্রাসন কিছুটা প্রতিহত করা যাবে বলে ধারণা।
সফর শেষের বিবৃতিতে বিগত দশককে উভয় দেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আগামী ২০৪৭ সালে বিকশিত ভারত ও আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলায় একে অপরকে সর্বক্ষেত্রে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং সে দেশের উন্নয়নের প্রধান অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবীকরণের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে করা হয়েছে বলে তৃণমূল কংগ্রেসের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। লোকসভার প্রথম অধিবেশনেই তারা এ নিয়ে সোচ্চার হবে বলেও জানিয়েছে। এর আগেও তিস্তা নিয়ে চুক্তি এগোয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায়। তা ছাড়া, ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করার সময় ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সম্মতি আদায় করেছিল কেন্দ্রের তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার।
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বৈদেশিক বিষয় কেন্দ্রের হাতে থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি, যার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপর পড়বে, তার জন্য রাজ্য সরকারের সম্মতি গ্রহণ একটা প্রথা। যে কারণে ২০১১ সালে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে চার সীমান্ত রাজ্য যথা—আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীরা যোগ দিলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাননি।
বলা হয়, ওই সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যায়ে কিছুই জানানো হয়নি। আর এরই প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ঢাকা যান। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার তথা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে বিদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করেন না।
সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট নদীতে পানির সঠিক পরিমাণ কত এবং পানি অন্যদেশে গেলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ক্ষতি হবে কি না—এ বিষয়টাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় তুলে ধরেছেন। ভারত এখন তিস্তার ব্যাপারে বাংলাদেশের ভেতরে জলাধার নির্মাণের মহাপ্রকল্পে ১০০ কোটি ডলার দিতে চাইছে। ভারত থেকে তিস্তার পানি দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা এটি। গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তি পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রাখাতেই এই প্রতিবাদ।
গঙ্গা ও তিস্তার ব্যাপারে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অন্ধকারে রাখার জন্য প্রতিবাদ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সোমবার একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু বলে বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়েছেন গঙ্গার পানি চুক্তির পর ভারত সরকারের পশ্চিমবঙ্গকে যে অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল, তা কেন্দ্র দেয়নি।
ফলে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা বেড়েছে। তিস্তা নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে এ বিষয় আগোনোর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করায় ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এখন দেখার গঙ্গার দ্বিতীয় চুক্তি, যা আগামী ২০২৬ সালে হওয়ার কথা, তার আগে গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে যায় আর তার কতটা কোন দিকে যায়।
লেখক: সভাপতি, কলকাতা প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন