রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ১৩ বছর আগে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতের অন্ধকারে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ‘শাপলা হত্যাকাণ্ডের এক যুগ : বিচার, সুষ্ঠু তদন্ত, শহীদদের স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণে রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।
আলোচনা সভায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের এই নির্মম ঘটনায় এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের যারা জড়িত আছেন তাদের প্রত্যেককে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ঘটনায় শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সময় যেসব পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন এদের প্রত্যেককে বিচার আওতায় আনতে হবে। শাপলা হত্যাকাণ্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য, সম্মতি উৎপাদন করার জন্য বুদ্ধিজীবীর বেশে যারা শাপলা হত্যাকাণ্ডে সম্মতি উৎপাদন করেছে, এই হত্যাকাণ্ডকে লঘু করার জন্য যারা বয়ান তৈরি করেছে সেসব বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু বুদ্ধিজীবী বা বিশিষ্ট নাগরিক না তাদের বলতে হবে উগ্রবাদী নাগরিক। এছাড়া সে সময় যারা এটি আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল এবং বিএনপি-জামায়াতসহ সেসময়ের বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে রাজনৈতিক বোঝাপড়া তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কেননা তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পেরে তাদের বিনা প্রস্তুতিতে একটি রাষ্ট্রের মুখোমুখি করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তে শত শত মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে।
যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ২০১৩ সালের শাপলা হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ দমন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টিকেছিল, তাদের ফ্যাসিবাদ টিকে ছিল। যেসব হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন গত ১৫ বছরে ঘটেছে। এসব আমাদের বারবার স্মরণ করতে হবে এবং বিচারের দাবি জানাতে হবে। সে সময় এসব হত্যাকে সেলিব্রেট করা হয়েছে, কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিরোধী দলগুলোকে গুম-খুন করা হয়েছে। যার সর্বশেষ ফলাফল জুলাই। তখন যদি প্রতিবাদ জানানো হতো তাহলে এত হত্যাকাণ্ড ঘটত না। অবশ্যই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তারা রাজনৈতিক দল কিনা সেটা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কা নামে কিছু থাকবে না।
যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত বলেন, পৃথিবীর কোথাও হুট করে অভ্যুত্থান তৈরি হয়নি। প্রত্যেক গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে মুক্তিকামী জনতার রক্তের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯-এর পিলখানা, শাপলা হত্যাকাণ্ডসহ নানা আন্দোলনে জনতার রক্তের মধ্য দিয়ে রাজপথ উর্বর হয়েছে। তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল ২৪-এর জুলাই। গত এক যুগে আমরা এর প্রতিবাদ করিনি, টুঁ শব্দ করিনি। এই হত্যাকাণ্ডকে আমরা মেনে নিয়েছিলাম। এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। সেসময় বিভিন্ন মিডিয়ার তারা লিখেছে হেফাজত এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কোরআন পুড়িয়ে দিয়েছে, গাছ কেটে ফেলেছে। তারা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আলাদা করেছে, তাদের মৃত্যুকে বৈধতা দিয়েছে। বিচার না হওয়ার পেছনে এই মিডিয়ারও দায় আছে।
মন্তব্য করুন