রাজধানীতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছেই। বিশেষ করে জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ এলাকায় এসব আন্দোলনের কারণে নগরজুড়ে যানজট লেগেই থাকে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আন্দেলনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকা ও আশপাশ এলাকায় দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন চালক, পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবারও (২২ মে) নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক কোথায় কখন কোন সড়কে আন্দোলন চলবে—
দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক ছেড়ে যাবেন না ইশরাক
বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন তার অনুসারীরা।
এর আগে নগর ভবনের সামনে আন্দোলন চললেও, বুধবার (২১ মে) দুপুর থেকে রাজধানীর মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এদিকে এই বিক্ষোভ সমাবেশে আজই প্রথম যোগ দিলেন ইশরাক হোসেন।
তিনি বলেছেন, মেয়র হওয়াই মূল লক্ষ্য নয়, পদ পেতে এ আন্দোলন না। এটা কোনো একজনের পদের আন্দোলন নয়, জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ছেড়ে কেউ যাব না।
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে রিট মামলার আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) দিন রেখেছে হাইকোর্ট।
তবে রায় ঘোষণা পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান চলতেই থাকবে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা যাতে ক্লান্ত হয়ে না পড়েন সে জন্য থানাভিত্তিক সময় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কিছু থানার নেতাকর্মীরা মৎস্য ভবন ও কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন। এরপর রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট থানার নেতাকর্মীরা কর্মসূচি চালিয়ে নেবেন।
ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে নতুন কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (২১ মে) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির ব্যাপারে জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলা একাডেমি-সংলগ্ন স্থানে কতিপয় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ওই হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সাম্য হত্যা : ক্ষুব্ধ ঢাবি শিক্ষার্থীদের লংমার্চের হুঁশিয়ারি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
দ্রুত সব আসামির গ্রেপ্তার এবং তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) অবস্থান কর্মসূচি ও লংমার্চেরও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থরা।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাম্য হত্যা মামলার মূল আসামি গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী গড়িমসি করেছে। মূল আসামির গ্রেপ্তার এবং তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচিসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। এ সময় সাম্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা রটনা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপপ্রচারে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
মন্তব্য করুন