খেলাফত মজলিস আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, আগামী ২ জুন বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হবে। এই বাজেট নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। কেননা, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অপচয় ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছে। বিশাল ঋণের বোঝার মধ্যে দেশকে ডুবিয়ে তারা পালিয়ে গেছে। বাজেটে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বাজেট আলোচনা হয়।
খেলাফত মজলিসের নেতারা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। এ জন্য দেশি বিদেশি বিনিয়োগ, দুর্নীতির সকল পথ বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
সেজন্য ১. মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্যের দৃশ্যমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে দেওয়া যাবে না। ২. এডিপি বাস্তবায়নসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে হবে। বৈষম্যমুক্তভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় যাতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল ব্যয় বা বরাদ্দের মূল শর্ত হবে জনগণের কল্যাণ। ৩. সরকারের পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৪. দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাত ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। ৫. আর্থিক খাত পুনরুদ্ধার বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টর পুনরুদ্ধারে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি থাকতে হবে। ৬. ক্রিপ্টোকারেন্সির শোষণ ও বিদেশে অর্থপাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ৭. ঘাটতি/ বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। ৮. আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রভাব কমাতে হবে। বাজেটে বছরের পর বছর একই চিত্র; একটি বাজেটে ২২% ঋণ আর ঋণের সুদ ১৬ ভাগ এটা কোনোভাবেই স্বনির্ভর জাতি গড়তে পারে না। ৯. উন্নয়ন ব্যয় কোনোভাবেই যাতে ঋণ নির্ভর না হয়। প্রয়োজনে প্রাইভেট সেক্টর হতে এবং প্রবাসীদের বিশেষ সুবিধায় বন্ড দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ঘাটতির অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। ১০. করমুক্ত আয় আর ন্যূনতম কর আরোপের পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত হতে সরে আসলে কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়বে। কর রেয়াতের আওতা না কমিয়ে কর সম্পর্কে হয়রানি ও ভীতি দূর করে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো। ১১. চামড়া শিল্প এমন একটি শিল্প তার কাঁচামাল গার্মেন্টস এর মতো আমদানি করতে হয় না। বর্তমানে এই ২য় শীর্ষ রপ্তানি খাতের অবস্থা শোচনীয়। তাই সরকারি প্রচেষ্টায় এলডব্লিওজি এর সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ১০০ তে উন্নীত করা গেলে এটি গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১২. দক্ষ শ্রম বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় বিস্তৃত করার ব্যবস্থা করা। ১৩. ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণে প্রণোদনা দিয়ে হলেও তরুণদের ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে। নির্বিঘ্নে বিনিময় গ্রহণ করতে বাংলাদেশে পেপালসহ অপরাপর সার্ভিসগুলো চালু করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। ১৪. এফডিএ বৃদ্ধি করার চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো। ১৫. শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা। ১৬. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো। দেশের প্রতিটি সক্ষম নাগরিককে পর্যায়ক্রমে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন যুগ্ম মহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল। পরে আলোচনা পেশ বরেন যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, মাওলানা শায়খুল ইসলাম, তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, ডা. আব্দুর রাজ্জাক আসাদ, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, এইচ এম হুমায়ুন কবির আজাদ, কাজী আরিফুর রহমান, অ্যাডভোকেট এনায়েত রাব্বি একরাম।
মন্তব্য করুন