কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংস্কারের ‘কলা’ দেখাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার : সালাহউদ্দিন আহমদ

সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি : সংগৃহীত
সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সংস্কারের ‘কলা’ দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীতে দুপুরে কৃষকদলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সংস্কার নিয়ে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো কম্পাইল করে জাতির কাছে প্রকাশ করেন। আগামী ২ জুন আবার ডেকেছেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা। ভাবটা আমরা বুঝছি এরকম আনুষ্ঠানিকতা-আয়োজনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু কাজের কাজের কোনো খবর নেই। আবার ডেকেছেন ২ তারিখে তৃতীয় পর্বের আলোচনার আবার শুভ উদ্বোধন হবে। কেনো? উদ্বোধন কয়বার করতে হয়। এই সংস্কার নিয়ে আর কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম পর্যায়ে একবার উদ্বোধন করেছেন আলোচনার, দ্বিতীয় পর্যায়ের আবার উদ্বোধন করলেন, তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে আবার আপনারা এটা একত্রিত করলেন… এভাবে আপনারা আমাদেরকে সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংস্কার আমাদের প্রধান অ্যাজেন্ডা তবে তার চাইতেও বেশি ফ্যাসিস্টদের বিচার। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে, এটা আমাদের সর্বোচ্চ অ্যাজেন্ডা। কিন্তু নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে এই ডিসেম্বরের মধ্যে দেবেন বলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের সামনে… পরবর্তীতে আপনি সরে গেলেন সেই কাজটি ঠিক করেননি।

‘সেটা দুঃখনজনক’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তো, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তো, বৈষম্যহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠান জন্য তো, একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক রাষ্ট্র পাওয়ার জন্যই তো, আমরা আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যই তো, আমরা রক্ত দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি, অবিরাম আমরা নির্যাতিত হয়েছি, কারাবাসে গিয়েছি, আয়না ঘরে গিয়েছি কীসের জন্য? এই অধিকার আদায়ের জন্যই তো। আর সেই অধিকার আদায়ের কথা বললেই যদি আপনারা নারাজ হন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সেটা খুব দুঃখনজনক। সংস্কারের কথা বলে আর কত বিলম্ব করবেন।

‘ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন কোন যুক্তিতে?’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়া একটিও কারণ নাই, আপনার সামনে যুক্তি নাই। কেনো আপনি ডিসেম্বরের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবেন, সেটার পক্ষে একটিও যুক্ত নাই। কিন্তু শুধু বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, ডিসেম্বর থেকে জুন যেন আছর করেছেন আপনারা যে, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’ এটা বলতে থাকতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে দেশের মানুষের দাবি। একটি কারণও নাই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাওয়ার। সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করবে যে, যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে একটি যুক্তিও তাদের কাছে থাকে তার সেটা যেন তারা প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, সংস্কার এবং নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া। যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক তারা প্রতিশ্রুত সেই সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাবে। বিচার এটা বিভাগের স্বাধীন এখতিয়ার। এটা তারা তাদের মতো স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করবে। আমরা শুধু সহায়তা করব। আর সংস্কার এটা কখনও শেষ হয় না… এটা পৃথিবী যতদিন থাকবে, দেশ যত দিন থাকবে, মানব যতদিন থাকবে ততদিন তাদের চাহিদা অনুসারে, দেশের চাহিদা অনুসারে সংস্কার হতেই থাকবে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আর ওনার ভাষ্য, সংস্কার সমাপ্ত করেই নির্বাচন হতে হবে… কেনো?

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

‘গণতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রিমহল তৎপর’

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় করবার জন্য সারাজীবন নির্যাতিত হয়েছি, নির্বাসিত হয়েছি, কারাবাসে থেকেছি এবং কোনো কোনো সময়ে আমরা আয়না ঘরে থেকেছি। নির্যাতনে-নির্বাসনে-কারাবাসে-আয়না ঘরে যার জীবন ১৬/১৭ বছরতাকে আজকে দেশদ্রোহী বনানো হচ্ছে, এটা হওয়া উচিত। এভাবে আমার নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা আমরা সংগ্রাম করেছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, বৈষ্যমবিরোধী সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য তারা সবাই আজকে দেশবিরোধী শক্তি হয়ে গেছি, এই হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে তকমা।

তিনি বলেন, কারা করছে? যারা আমরা নির্বাচন চাই, যারা আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঘটাতে চাই এবং গণতন্ত্রের কথা বলি… নির্বাচনের কথা বলি, গণমানুষের কথা বলি তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হয়ে গেছি কুচক্রী মহলের দৃষ্টিতে। কারণ তারা চায় না বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হোক, তারা চায় না বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তির ভিত্তি, তারা চায় এদেশ সবসময় বিদেশ নির্ভর হোক। তারা আমাদেরকে দেশদ্রোহী এবং অন্যান্য দেশের এজেন্ট বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন পর্যায় গিয়েছে যে, আমাদের ছেলে-সন্তানদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করছে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈমদ ইউসুফ আহমেদ সম্পর্কেও ‘কুচক্রী’ মহলের মিথ্যাচারের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কৃষকদলের নেতাকর্মীদের ‘অনলাইনে অ্যাক্টিভিটি’ বাড়িয়ে ‘কুচক্রীদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেন সালাহউদ্দিন।

‘ফ্যাসিবাদী বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র’

তিনি আরও বলেন, আমরা যে বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করেছি, আজীবন গণতন্ত্রের পক্ষে ত্যাগ স্বীকার করেছি, আজীবন সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সেই ঐক্যকে কেনো যেন নষ্ট করতে চাচ্ছি। কিছু কিছু শক্তি গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ বিদেশে থেকে, কেউ স্বদেশে থেকে। কেউ বুঝতে চাচ্ছে না গণতান্ত্রিক উত্তরণ কবে হবে, আমাদের সেই গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, আমাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে প্রধানত দাবি ছিল আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা ভোটাধিকার চাই, আমরা সাংবিধানিক অধিকার চাই, আমরা বাংলাদেশে রাইট টু স্পিচ, রাইট টু অ্যাসোসিয়েশন এবং ফ্রিডম অব প্রেস চাই সেজন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম।

তিনি বলেন, সেই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে অনেক বিষয় উল্লেখ করেছি। আমরা সেদিকে না গিয়ে পরস্পর আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কেনো জানি একটি গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য অথবা ফ্যাসিবাদী শক্তি এই সমস্ত কূটচালের মধ্য দিয়ে আবার পুনর্বাসিত হওয়ার ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করছে।

কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের আবুল বাশার আখন্দ, নাছির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, আসলাম মিয়াসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাস্তা থেকে আটা তুলে নিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিলেন এক মা

নিবন্ধনের জন্য ইসিতে ‘কলম’ প্রতীকে জাগ্রত পার্টির আবেদন

ব্যবসায়ীর গোডাউনে মিলল সরকারি ২০৬ বস্তা চাল

বাংলাদেশের যেসব খাতে সহযোগিতা করবে চীন

ইতালিতে নাহিদ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার

মধ্যরাত থেকে সোমবার পর্যন্ত কয়েক জেলায় বজ্র ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রাথমিকে হাওর, দ্বীপ ও চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য সুখবর

পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ লিটনরা

রাইড শেয়ারের নারী যাত্রীকে ধর্ষণ : আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি

পদ হারানোয় আইনি লড়াইয়ে ফারুক আহমেদ, হাইকোর্টে রিট

১০

রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

১১

কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি, অব্যহত থাকবে আরও দুদিন

১২

নদীতে আবর্জনা ফেলার অভিযোগে তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বরখাস্ত

১৩

কুড়িগ্রামে নজরুল ও ভাওয়াইয়া চর্চাকেন্দ্রের উদ্বোধন

১৪

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস, আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং

১৫

কে কখন নির্বাচন চায়, একান্তই দলীয় বিষয় : জনতা পার্টি বাংলাদেশ

১৬

সাভারে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

১৭

‘শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম সংস্কার শুরু করেছিলেন’

১৮

পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

১৯

পুকুরে গোসল করতে নেমে দুই শিশুর মৃত্যু

২০
X