কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি : রাশেদ খান 

বক্তব্য রাখছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান। ছবি : কালবেলা
বক্তব্য রাখছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান। ছবি : কালবেলা

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি, বৈষম্যমূলক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

বুধবার (০৪ জুন) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মো. রাশেদ খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে ঘোষিত আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগের আমলের বাজেটের ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট, যা ব্যাংক ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান থেকে পূরণ করা হবে। অর্থাৎ এবারের বাজেটেও বিদেশ নির্ভরতা কমানো হয়নি। চলতি অর্থবছরে NBR থেকে ৪ লাখ ৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থাকলেও তা পূরণ হয়নি। আসন্ন বাজেটেও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নেই কোনো নতুন প্রস্তাবনা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে টানাপড়েন, দলগুলোর সাথে সরকারের দূরত্বের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা আরও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে সুদ ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫০০ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ দেশি ও বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই সুদ ব্যয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ২৯৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসন্ন বাজেটের জন্য আবারও নতুন করে টাকা ছাপানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এতে ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। আসন্ন বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যেটা বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। কারণ বর্তমান গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

রাশেদ বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার কর্মসংস্থান নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা প্রকাশ করবে বলে সবার ধারণা ছিল। কারণ চাকরিতে কোটা সংস্কার বা বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন থেকেই গণঅভ্যুত্থান রচিত হয়। কিন্তু সেই হাজারো বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী ও ২৭ লাখ শিক্ষিত বেকারের জন্য আলাদা কোনো ঘোষণা নেই। মানুষের আয় ও ব্যয়ের তারতম্য কমানো, বেকারত্ব- দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

রাশেদ আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করতে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্য প্রতিষ্ঠায় সরকারের চিন্তা এই বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

তিনি বলেন, যেখানে বাজেটে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা। স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার কমিশন বাজেটের ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছে। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নামে মাত্র বাড়ানো হয়েছে (৪.১৯ থেকে ৫.৩ শতাংশ)।

আরও বলেন, শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য সাড়ে ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট জাতীয় বাজেটের ১২ দশমিক এক শতাংশের মতো। কিন্তু শিক্ষাবিদদের মতে এই খাতে ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা জরুরি।

শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চিন্তা আওয়ামী সরকারের চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাহলে এই সরকার কীভাবে এই দুই খাতে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে সেটিও বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি ও বৈষম্যমূলক। এছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট কেনাকাটায় ও ভবন নির্মাণে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার এমন নীতি বিবর্জিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলে টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বাজেটে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ইতিবাচক দিক। তবে ১০ মাসেও যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ না হওয়ায় সন্দেহ-সংশয় থেকে যায় যে, এই বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে কি না! জুলাই যোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫২৫০০০ টাকা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল নিঃসন্দেহে পজিটিভ দিক। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু মোট ভাতা বর্তমানে যা আছে, তা খুবই অপর্যাপ্ত। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে মোট ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। পাচার অর্থ ও সম্পদের উপর করারোপ পজিটিভ দিক। কিন্তু পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

রাশেদ বলেন, কৃষিতে তরুণ বেকারদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি আয়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকা পজিটিভ দিক। বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিও ইতিবাচক দিক। বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা নেই। বিশেষ করে একেরপর এক শেয়ারবাজারে লোকসান অনেককে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকরী পরিকল্পনা দরকার ছিল। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২০ শতাংশ, তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার ২৭ শতাংশ তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করবে।

তিনি বলেন, বাজেটে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমানো ইতিবাচক। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

১০

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

১১

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

১২

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১৩

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১৪

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৫

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৬

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৭

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

১৮

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

১৯

থানায় জিডি করলেন সালাউদ্দিন টুকু

২০
X