পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না- এই বিষয়টির সংস্কার প্রশ্নে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ‘মেয়াদ’ ও ‘বার’ বিতর্কে না থেকে একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ কত বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সেটা তিনি প্রস্তাব করেছেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রোববার (২২ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপ শেষে তিনি এ কথা জানান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে (রোববার) আলোচনার জন্য তিনটি বিষয় নির্ধারিত ছিল। প্রথমটি- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, দ্বিতীয়টি সংবিধানের মূলনীতি সংক্রান্ত এবং তৃতীয় বিষয়টি হলো নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের জন্য আলাদা একটা অথরিটি গঠন। তবে তৃতীয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এ ক্ষেত্রে আমরা যার যার মতামত ব্যক্ত করেছি। আমরা লিখিত প্রস্তাবে এবং আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিখিত প্রস্তাবের মধ্যে যা ছিল সেটা আমরা পুনরায় উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। এখানে (সংলাপে) মেয়াদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা এসেছে। কারো কারো প্রস্তাবের মধ্যে দুইবার এসেছে।
‘বার’ এর ক্ষেত্রে একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে, যদি একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একবারের জন্য- ধরুন তিন মাস মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলেন, তিন মাস পর মেজরিটি পার্টি অন্য আরেকজনকে প্রধানমন্ত্রী করলেন। তারপর হয়তো আগেরজন আবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাহলে তো তার দুইবার পূরণ হয়ে যায়। এভাবে দুইবার, তিনবার বা পাঁচবারও এক বছরের ভেতরে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। সুতরাং ‘বার’ নিয়ে এই ব্যাখ্যাটা সঙ্গত কারণে যথেষ্ট নয়।
তিনি আরও বলেন, মেয়াদের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টা মাথায় রেখে কথা বলেছিলাম সেটা হচ্ছে, সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারিত। পাঁচ বছর সেই সংসদ বহাল থাকবে কিনা সেটা সংসদের ওপর নির্ভর করে। সেটা দুই বছর পরে বিলুপ্ত হতে পারে, বা সাড়ে চার বছর পরেও বিলুপ্ত হতে পারে- সেক্ষেত্রে মেয়াদ ওখানে শেষ।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে যে সংসদ পাঁচ বছরের জন্য হবে। সেই হিসাবটা মাথায় রেখে ‘যেকোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’, আমরা এটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। একই ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, তার মানে পরপর তিনবার হবেন না- সেটাও ঠিক।
পরপর দুই মেয়াদের পরে বিরতি দিয়ে যদি সেই একই পার্টি বা জোট ম্যান্ডেট পায়, তারা একই ব্যক্তিকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন- এমন ব্যাখ্যাও আছে। আমি প্রস্তাব করেছিলাম, ‘মেয়াদ’ ও ‘বার’ এই বিতর্কে না থেকে এক ব্যক্তি লাইফ টাইমে সর্বোচ্চ কত বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কিংবা প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকতে পারবেন- তিনবারে হোক, তিন মেয়াদে হোক, চার মেয়াদে হোক- কিন্তু সর্বোচ্চ বছরটা যদি আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি যে, একজন লোক লাইফ টাইমে এত বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমি স্পেসিফিক কোনো বছরের কথা উল্লেখ করিনি। কারণ, সেটা ডিসাইড করার ক্ষমতা এককভাবে আমার দলের পক্ষ থেকে আমার নেই।
যদি একটা মেয়াদ হাউস ডিসাইড করে, ধরুন- একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না; আমি বলেছি, এটা আমার প্রস্তাব নয়। তবে হাউজে যদি এটা ডিসাইড হয়, তাহলে আমাকে আমার দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে।
এ সময় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন