বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তাড়াতাড়ি তপশিল ঘোষণা করাতে চাইবে। কিন্তু আপনি মনে রাখবেন, দেশের জনগণের যে দাবি সুষ্ঠু নির্বাচন, ভোটের অধিকার- এই দাবিকে অগ্রাহ্য করলে জনগণ সেটা মানবে না। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। বিশ্বের কোথাও সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নেই। দেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না। যেদিন তপশিল ঘোষণা করা হবে সেদিনই হবে এই সরকারের অন্তিম যাত্রা। জনগণের তীব্র আন্দোলনে নিশিরাতের সরকারের পতন ঘটবে। এখন প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি রাস্তাই খোলা, সেটি হলো অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত শুক্রবার রাজধানীতে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রলীগ নাকি মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাদের নেতা যদি একটু বলতেন তারা মহাকাশে গিয়ে কি করবে? হাতুড়ি ও চাপাতি বাহিনীর সেখানে কাজ কি? সেখানে তো বিশ্বজিৎ নেই। সেখানে তো আবরার নেই। তাহলে চাপাতি ও হেলমেট বাহিনী সেখানে গিয়ে কি করবে?
তিনি বলেন, গতকাল ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশে শেখ হাসিনা মনে মনে বলছে তার সোনার ছেলেরা ভালো কথা বলতে পারে। কিন্তু তিনি ভাবছেন না যে, তার পায়ের নিচে মাটি নাই। এতদিন তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। এক বছরে বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছে, চোখ চলে গেছে, হাত চলে গেছে। এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কাজ হয় নাই এখন ছাত্রলীগ দিয়ে করবে। সরকারের টাকা খরচ করে সারা দেশে অলিখিত হরতাল করে ঢাকায় নিয়ে আসার পরে অশ্বের ডিম ছাড়া আর কিছুই পাইনি।
রিজভী বলেন, ছাত্রলীগের সমাবেশ হয়েছে। আমাদেরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে এত লোকজন হয়েছে যে, সামনের রাস্তায় জায়গা হচ্ছিল না। আমাদের এক দিনের প্রস্তুতি ছিল। এই যে ২৪ ঘণ্টার প্রস্তুতিতে মানুষের এত উপচে পড়ার ঢল ব্যাপক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনোরকমে কষ্ট করে আমাদের অনুষ্ঠানে এসেছিল লোকজন। আর ছাত্রলীগের সমাবেশে আসার জন্য গাড়ি ফ্রি করে দেওয়া হয়েছিল। হোটেলের সিট ফ্রি করে দেওয়া হয়েছিল। লঞ্চ ফ্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের হলের খাবার বন্ধ করে দিয়ে সেই খাবার সোহরাওয়ার্দীতে আনা হয়েছিল ছাত্রলীগকে খাওয়াবে বলে।
তিনি বলেন, গতকাল ঢাকা শহরে এত বাস এসেছে যে, ঢাকা শহরে জায়গা হচ্ছিল না। ছাত্রলীগের সমাবেশে যে বাসগুলো এসেছে তার মধ্যে তিন চারজন করে লোক এসেছে। তার মানে হলো যত লোকজন এসেছে তার চেয়ে বাস বেশি। আর এজন্য ঢাকা শহরে জনগণের স্বাভাবিক চলাচলের বিঘ্ন হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে সমাবেশ করে জোর করে বাস এনে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো যাবে কিন্তু জনগণের সাড়া পাওয়া যাবে না। দেশের জনগণ বুঝে গেছে, জনগণের টাকা কীভাবে খরচ করছে তারা। জনগণের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে নিজেরা জমিদারের মতো চলে।
রিজভী আরও বলেন, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই তারিখ থেকে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মোট আহত ১৪৫০ জন, মোট মামলা ৩৩১টি, মোট গ্রেপ্তার ১৬৫০ জন এবং মোট আসামি ১৩,৯৩০ জন।
এ সময় গতকাল সারা দেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে হামলা ও মামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান রিজভী। সেইসঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন