বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এনসিপির এক প্রতিনিধি দল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যায়। তারা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব ও মাইনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি ও এনসিপির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা বলতে চাই, যে উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা যেন বাস্তবায়িত হয়। বিশেষ করে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করা। সেটার চর্চার জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা তিনি নিয়ে এসেছিলেন। যেখানে সব জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্ম-বর্ণের মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। যার মধ্য দিয়ে পঞ্চম সংশোধনী হয় এবং সেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হয়। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে আমরা ধারণ করি। বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। পরে দেশ গণতন্ত্রের যাত্রায় প্রায় হোঁচট খেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটান। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এভাবে যত গণতান্ত্রিক সংস্কার হয়েছে, তার সবকিছুই বিএনপির হাত ধরে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রায় শহীদদের প্রত্যাশা অনেক। তার মধ্যে অন্যতম আমরা যেন গণতান্ত্রিক রাজনীতি করি। আমাদের তরুণ বন্ধুরা (এনসিপি) তারা প্রমাণ করলেন মাঠে যতই বক্তব্য দিই না কেন? আমরা তর্কবিতর্ক করব কিন্তু পারস্পরিক সৌহার্দ্য রাজনীতিতে থাকবে। এটিই রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। এই সংস্কৃতি বিশেষ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী চর্চা যেন অব্যাহত থাকে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য যেন ধরে রাখি। এই গণতান্ত্রিক চর্চা যেন চালু থাকে সে জন্য সবার প্রতি আহ্বান।
তিনি বলেন, বহু দিনের প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে আমরা এমন জায়গায় যাব যখন কেউ আর গণতন্ত্রের যাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। আমরা কেয়ারটেকার সরকারের পুনঃপ্রবর্তন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেটা রক্ষা করতে পারব। এগুলোই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জয় হোক।
সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম। আমরা বিএনপির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। তারা জনগণের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে এটি প্রত্যাশা। কারণ শেখ হাসিনা বিগত শাসনে দেশের সকল কিচু শেষ করে দিয়েছে। আমরা আগামীতে দেশের সমৃদ্ধি কামনা করছি। দলগুলোর পারস্পারিক সৌহার্দ্য ছাড়া আগামীর কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। সেই দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। আগামীতের গণতন্ত্রের যাত্রায় আমরা এগিয়ে যাব।
সামান্থা শারমিন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রের যে যাত্রা তার মাইলফলক হলো আজকে বিএনপিকে শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিএনপি আগামীতে গণতান্ত্রিক চর্চায় আরও সামনে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা। তরুণ নেতৃত্ব উঠিয়ে আনার ব্যাপারে বিএনপি তাদের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। আমরা তার প্রতিফলন দেখতে চাই। বিশেষ করে রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূণ সম্পর্ক যেন বজায় থাকে, সেটি আমরা চাই। কেউ যাতে আদালতে ব্যবহার করে রাজনীনিতে প্রভাব খাটানো না হয়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন