মৃত্যু জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। জন্ম নিলে একদিন মারা যেতে হবে। মায়াঘেরা দুনিয়ার রূপ-রঙ ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে—যেখানে কেউ কারও বন্ধু হবে না, হবে না শত্রুও। নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
সুরা আবাসাতে রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারও প্রতি লক্ষ্য করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ ( আয়াত : ৩৪-৩৭)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবীকে (সা.) বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা, সেদিনের পরিস্থিতি এত ভয়ংকর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।’ (মুসলিম : ৬৯৩৪)
মৃত্যুর পর পরকালীন জীবনের প্রথম মঞ্জিল হচ্ছে কবর। যারা এ মঞ্জিল থেকে সহজে মুক্তি পাবেন, তাদের বাকি মঞ্জিলগুলো সহজ ও আরামদায়ক হবে। আর যারা এ মঞ্জিলে শাস্তি পাবেন, তাদের পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও ভয়ংকর হবে।
হাদিসে এসেছে, কেউ মৃত্যু বরণ করলে দ্রুত তার গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের কাজ যথাসম্ভব সম্পন্ন করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মৃত ব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করবে। যদি সে নেক ব্যক্তি হয়, তবে তাকে তোমরা তার কল্যাণের নিকটবর্তী করে দিলে; আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে মন্দকে তোমাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলে। (সহিহ বোখারি : ১৩১৫)
তবে, অনেক সময় প্রবাসে কেউ মারা গেলে তাকে দ্রুত দাফন করা সম্ভব হয় না। কারণ, তার লাশ দেশে আনতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তির লাশ ফ্রিজিং করে রাখতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে অনেকে জানতে চান, লাশ ফ্রিজে রাখলে তার কবরের হিসাব কীভাবে নেওয়া হয়?
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, মানুষ মৃত্যুবরণের পর থেকে কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে আলমে বারযাখ বলে। এই বারযাখের জীবনে যে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে রুহ দান করে তার সওয়াল-জওয়াব নেবেন। অর্থাৎ কেউ যদি আগুনে পুড়ে মারা যায় অথবা বাঘের পেটের ভেতরও চলে যায়, তবু তার ধ্বংসাবশেষ যে অবস্থায় থাকবে ওই অবস্থাতেই তার সওয়াল-জওয়াব হবে। আল্লাহ তায়ালা জানবেন এবং মৃত ব্যক্তি তার রুহ ফিল করবে, তবে মানুষ এটা বুঝতে পারবে না।
আরও পড়ুন : আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর শোক
আরও পড়ুন : ভোরবেলার স্বপ্ন কি আসলেই সত্য হয়?
একজন মানুষ মারা যাওয়া পর যদি বিভিন্ন প্রসেসিংয়ের কারণে ৪-৬ মাস তার লাশ ফ্রিজিং করে রাখা হয়, তাহলে এ অবস্থায় তার হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যাবে নাকি কবর দেওয়ার পর হবে— এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। গায়েবের জগত সম্পর্কে কেবল আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। কাজেই ফ্রিজিংকালেই মৃত ব্যক্তির প্রশ্নোত্তর শুরু হয়ে যাবে নাকি কবর দেওয়ার পর শুরু হবে, এটা আল্লাহ ভালো জানেন।
মন্তব্য করুন