দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তবে এবার তাদের মূল টার্গেট জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করা। ইতোমধ্যেই নানামুখী অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।
সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, আইজিপির সঙ্গে জুম মিটিংয়ের আগে ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন কমিশনার। সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। বৈঠক শেষে ডিএমপির উচ্চপর্যায়ের এক সূত্র জানায়, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে ডিএমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ধরনের সহায়তা চাইছে, তা দেওয়া হচ্ছে। নির্বিঘ্ন নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই প্যাট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে, বিশেষ করে মোটরসাইকেল টহলের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, শাহবাগে সার্বক্ষণিকভাবে এক প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ডেপ্লয়মেন্ট আরও বাড়ানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন, ডিএমপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়াতে। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডিএমপির সহকারী কমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, সোমবার বিকেল ৩টার পর থেকে তারা যেন একা চলাফেরা না করেন, প্রয়োজনে অবশ্যই ফোর্স সঙ্গে নিয়ে বের হন।
এই নির্দেশনায় আর কী কী আছে-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ যেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি মিডিয়া হাউজ স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসের সুবিধাজনক স্থানে এই মিডিয়া হাউজ থাকবে, যেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টরা এসে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে এবং যে কোনো মূল্যে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আওয়ামী লীগ যে মিছিল করেছে, তা-ও ছিল ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ওই মিছিলে অংশ নেওয়া ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকারও করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশনা এসেছে ভারত থেকে এবং সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ তারা করছেন। এই বৈঠকে বিষয়টি আইজিপিকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচন ভন্ডুলের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সমন্বয় সভায় কমিশনার এ কথা জানিয়েছেন। সেখানে আরও জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের সব নির্দেশনা অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত ডিএমপি।
সভায় শুরুতে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। পরে উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা মতামত প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম, হাসান মো. শওকত আলী, মাসুদ করিম, শফিকুল ইসলাম, জিললুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনসহ অনেকে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে চারটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও সব প্রস্তুতি চলছে। এগুলো হলো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকুস), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চকসু) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)।
সূত্র : দৈনিক যুগান্তর
মন্তব্য করুন