কোনো দলের ‘অবৈধ-অসাংবিধানিক’ আবদার মেনে জাতিকে সংকটে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ব্রিটিশ ল স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা আইন-কানুন, সংবিধান এবং লিগালিটি মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়, তাদের প্রতি আহ্বান জানাব—কোনো রাজনৈতিক দলের অরাজনৈতিক, অবৈধ, অসাংবিধানিক যেকোনো রকমের আবদার মেনে এই জাতিকে সংকটে ফেলে দেওয়া যাবে না। আমাদের এই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় থাকতে হবে। এই সরকার সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার সরকার; সেটা প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বহুবার তার বক্তব্যে বলেছেন। এই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই আইনানুগভাবে ভবিষ্যতে এ রাষ্ট্রকে আইনের শাসনের রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের পরিচালিত এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, এই আইনের শাসনের রাষ্ট্রটা আমাদের প্র্যাকটিসে দেখাতে হবে, শুধু মুখে বললে হবে না। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ইন অল সেক্টার অব দি ইন অল অর্গানস অব দি স্টেট ইস্টাবলিস হবে ইনশাআল্লাহ। সেই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্য দিয়ে এভরি অরগান অব স্টেট শুড ফাংশন প্রোপারলি উইথন দি কনস্টিটিউশনাল বাউন্ডারি। ভবিষ্যতে সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা চারটা জিনিস পেতে যাচ্ছি, সেগুলো হলো—কমপ্লিট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইলেকশন কমিশন, কমপ্লিট ইন্ডিপেন্ডেন্ট জুডিশিয়ারি, কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট রিপ্লেস অ্যান্ড ফ্রিডম অব প্রেস।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিকতা এভুলিশ করার জন্য আমরা ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছি। যে কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এই সবগুলো বিবেচনায় আপনাদের সামনে নিশ্চয়ই এই জিনিসটা প্রতিভাত হচ্ছে যে, রাষ্ট্রে ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ কোনোদিন আর স্বৈরাচারের উদ্ভব হবে না। ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিকতা, রাজনৈতিক বা দলীয় স্বৈরতান্ত্রিকতা বা সাংবিধানিক অথবা সংসদীয় যেকোনো স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব বা ফ্যাসিস্টের উদ্ভব হওয়ার আর সুযোগ নেই। এগুলো এস্টাবলিশ করতে হবে আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আর আপনারা (আইনজীবীরা) হচ্ছেন সেটার গার্ডিয়ান-রক্ষক এবং আপনাদেরকে এই ভূমিকাটা পালন করতে হবে।
পিআর প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, সারা পৃথিবীতে যেখানে পিআর পদ্ধতি বিভিন্ন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন আদলে বিভিন্নভাবে চালু আছে—তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলা যায় যে, পিআর মানে হচ্ছে পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস—যেটার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা হচ্ছে নেপাল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে পিআর এর অভিজ্ঞতা আছে, তার একটা গবেষণাধর্মী-বিশ্লেষণধর্মী বক্তৃতা আজ এখানে এসেছে, আমরা খুব সমৃদ্ধ হয়েছি। তাতে করে দেখা যায় যে, এর মাধ্যমে কোথাও নির্বাচনের পরে এক-দেড় বছরও লেগে যায় শুধু সরকার গঠন করতে এবং কোনো রকমে সরকার গঠন করতে পারলেও সেই সরকারের স্থায়িত্ব হয়তো কয়েক মাস বা বছর হয়। বাংলাদেশে এটা যারা চালু করতে চাচ্ছে, তাদের পেছনে একটা উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে—যাতে কিছু সিট (আসন) বেশি পায়। আরেকটা উদ্দেশ্য আছে, বাংলাদেশে সবসময় যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকে এবং সরকার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না আসে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবসময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকলে যারা লাভজনক পর্যায়ে থাকবে, এই ব্যবস্থায় তাদেরই লাভ। তার মানে আমাদের পার্শ্ববর্তী কিছু দেশ আছে, যারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা-বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় না, যারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চায় না, তাদের লাভ হবে। কেন চায় না, সেটাতে তাদের স্বার্থ জড়িত আছে। বাংলাদেশে যদি সবসময় অনৈক্য-অস্থিতিশীলতা থাকে, তাহলে শেখ হাসিনার মতো আরেকটা ফ্যাসিস্টের উদয় হতে পারে এবং তাদের মধ্য দিয়ে তাদের (পার্শ্ববর্তী কিছু দেশ) সমস্ত স্বার্থ আদায় হতে পারে অথবা দুর্বল সরকারের কাছে যা কিছুই দাবি করা যাবে, সব দাবি আদায় করা যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে চলছে উল্লেখ করে সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু কেন গ্রহণযোগ্য নয়, তার সাংবিধানিক ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র সালাহউদ্দিন আহমদ।
সংগঠনের আহ্বায়ক ওয়াসি পারভেজ তাহসিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাগিব রউফ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন