

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই মাহেন্দ্রক্ষণে কারোরই হঠকারিতার কোনো অবকাশ নেই। বিচার ও সংস্কারের ধারায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথকে প্রশস্ত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনকে এই লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জনগণের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত, বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সমগ্র প্রশাসন ঢেলে সাজানো, গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাইফুল হক বলেন, দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য উপলব্ধিতে নিতে পারেনি; যে কারণে গত ১৪ মাসে বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপুল সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারের একাংশ নিজেরা যেমন লোভে পড়েছে, তেমনি গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যেও তারা লোভ আর ক্ষমতালিপ্সা জাগিয়ে তুলেছে। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অভাবে তারা রাজনৈতিক দল ও জনগণের নজিরবিহীন সমর্থনকে কাজে লাগাতে পারেনি, বরং এই সমর্থনকে তারা দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, গণভোট ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অনেকটা নির্ভর করছে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। এ কারণে একদিকে সরকারকে যেমন যাবতীয় পক্ষপাতমূলক ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, অন্যদিকে সবাইকে আস্থায় নিয়ে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়চিত্ত ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। ফেব্রুয়ারির সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনই কেবল এই সরকারকে মুক্তি দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনে আমরা আর কোনো টাকার খেলা দেখতে চাই না। অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও টাকার খেলা আর পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য চলতে দিলে আগামী সংসদও বিত্তবান আর ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত হবে। তিনি গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে দেশবাসীকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
সমাবেশে পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী বলেন, গত ১৪ মাসে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, চাকরিচ্যুতি ও না খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। বাজারের আগুনে মানুষ দিশেহারা। এই সময়কালে নারীবিদ্বেষ নতুন চেহারা নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে এবারও সংসদে নারীদের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, মাহমুদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবুল করিম টিপু, মাহমুদুল হাসান পিপলু, সজীব সরকার রতন, মাসুদুর রহমান মাসুদ, সাইফুল ইসলাম, জুঁই চাকমা, অরবিব্দু বেপারী বিন্দু, শেখ মোহাম্মদ শিমুল, মীর রেজাউল আলম, এমডি ফিরোজ, কবি জামাল সিকদার প্রমুখ।
সমাবেশের পর পার্টির নেতা-কর্মীদের গণমিছিল হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, দৈনিক বাংলা, নয়াপল্টন, বিজয়নগর হয়ে সেগুনবাগিচায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন