

বান্দরবানের পার্বত্য উপজেলা আলীকদমে পাহাড়ি কৃষকদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে মিষ্টিকুমড়া চাষ। অল্প পুঁজি, সহজ পরিচর্যা ও বাজারে ভালো দাম থাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ফসলটি।
উপজেলার কুরুকপাতা, চৈক্ষ্যং ও নয়াপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে ও সমতল জমিতে ঘন সবুজ কুমড়ার লতা ছড়িয়ে আছে চারপাশে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে বড় বড় মিষ্টিকুমড়া। কৃষকদের মুখে এখন মিষ্টি হাসি।
স্থানীয় রায় বাহাদুর ত্রিপুরা বলেন, আমি সাত কানি জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছি। শুরুতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি। আরও অনেক কুমড়া মাঠে আছে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। আরও বিক্রি করতে পারব।
মংচাপাড়ার বাসিন্দা লালা মার্মা বলেন, আলীকদমে প্রচুর মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদ হয়েছে। আমি তিন কানি পাহাড়ের ঢালু জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছি। এতে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৬১ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। আরও দুবার বিক্রি করতে পারব। সব মিলিয়ে আমার ৩০ হাজার মতো লাভ থাকবে। যদি পরিবহন খরচ কম হতো লাভবান হতাম।
আরেক কৃষক রিদুয়ান ইসলাম জানান, এ ফসলের যত্ন কম, ফলন বেশি। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কুমড়ার দাম ১৫ থেকে ২৫ টাকা, ফলে লাভও ভালো হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে কুমড়া চাষ করবেন। স্থানীয়ভাবে কুমড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের ব্যবস্থা হলে এ ফসল হতে পারে আলীকদমের অন্যতম অর্থকরী ফসল।
আলীকদমে আড়তদার আবুল কালাম বলেন, এবার আলীকদমে মিষ্টিকুমড়ার উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষকরা পরিশ্রম করে মানসম্মত কুমড়া তুলেছেন। বাজারে এখন প্রচুর সরবরাহ রয়েছে, ফলে দামও স্থিতিশীল আছে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পাইকাররা এসে কুমড়া নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় বাজারও চাঙ্গা হয়েছে। যদি পরিবহন ও সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা হয়, তাহলে আগামী বছর বেশি পরিমাণে মিষ্টিকুমড়া উৎপাদন ও বেচাকেনা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, আলীকদমের আবহাওয়া ও মাটি মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য উপযুক্ত। এবারে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদ হয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, মানসম্মত বীজ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই আগামীতে এ ফসল বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।
মন্তব্য করুন