বর্তমান সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শান্তিতে নোবেল বিজীয় বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসসহ, খ্যাতিমান আলোকচিত্রি শহীদুল আলম ও মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খানের মতো গুণীজনদের বিচারিক হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশবরেণ্য লেখক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা। তারা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মদদে অর্থ পাচারকারীরা করছে মাস্তি; আর ড. ইউনূসের মতো গুণীজনরা পাচ্ছে শাস্তি!’
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তারা। অব্যাহত রাজনৈতিক নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা, গুণীজন ও মানবাধিকার কর্মীদের বিচারিক হয়রানির প্রতিবাদে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ এবি মিলনায়তনে এই সংহতি সভার আয়োজন করা হয়।
দলের আহ্বায়ক সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় সংহতি সভায় বক্তব্য রাখেন; খ্যাতিমান লেখক ও আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম, বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মোজাহেরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মুহসিন রশীদ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু, মায়ের ডাকের আফরোজা ইসলাম আঁখি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নেতা দিদারুল ভূইয়া প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
২০১৮ সালে টাইম ম্যাগজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব ড. শহীদুল আলম বলেন, ক্ষমতাসীনরা কখনো চায় না কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াক। আদিলুর রহমানের অপরাধ কী? মানবাধিকার নিয়ে কথা বলায়, গুম, খুনের বিরুদ্ধে কথা বলায় আজ তাকে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা হলো। আমাকে জেলে দেওয়া হয় মিথ্যা হয়রানিমূলকভাবে। আজ পাঁচ বছরেও আমার বিরুদ্ধে তারা কোনো ডকুমেন্টস আদালতে হাজির করতে পারেনি। আমার বিরুদ্ধে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বা আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে কেনো এতো হয়রানি? সরকার কেনো এগুলো করছে? কারণ তারা অবৈধ সরকার, ভোট চুরি আর জালিয়াতি করে ক্ষমতায় আছে।
ড. মোজাহেরুল হক বলেন, আজ বাংলাদেশে মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত কিন্তু কেউ কথা বলছে না। আজ এবি পার্টি কথা বলছে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ড. ইউনূসকে বলা হয় সুদখোর। অথচ তিনি বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান যা বাংলাদেশের আর কেউ পারেনি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশের ৭৫ লক্ষ মহিলাকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। আজ তাকে অপদস্ত করা হচ্ছে বিচারিক হয়রানির মাধ্যমে।
মজিবুর রহমান মন্জু বলেন, নানাভাবে আজ সারাদেশের গুণীজনদের বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। আজ দেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান শুভ্রর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জেল জরিমানা করা হয়েছে। আমরা আজকের এই সভা থেকে এই বিচারিক হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাই। ড. ইউনূস ও বিখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী ড. শহীদুল আলমসহ সকল গুণীজনদের বিরুদ্ধে এই বিচারিক হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, শেখ হাসিনা মাফিয়াদের পাচারের সুযোগ আরো সুদৃঢ় করতে ডিজিটাল নির্যাতন থেকে এখন সাইবার নির্যাতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। আমরা এটা রুখে দিবোই, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকার যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে তাতে নাগরিকদের কারও সম্মান আর রক্ষা হচ্ছে না। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার এখন ড. ইউনূসসহ গুণীজনদের বিরুদ্ধে একতরফা অনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। জাতির জন্য এটা বড়ই হতাশার বিষয়। তিনি অবিলম্বে ড. ইউনূস, ড. শহীদুল আলম ও আদিলুর রহমান খানের মতো গুণীজনদের বিচারিক হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
মন্তব্য করুন