সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ১৫ বছরে ঢাকাসহ সারাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে জেলে নিয়েছেন, অবিচার-অনাচার করেছেন। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। এই জুলুম আর সইতে পারব না। আমরা আজ জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, এই অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে আজ সারাদেশ ফুসে ওঠেছে, সভা-সমাবেশ চলছে। আজকেও যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় জনতার ঝড় উঠেছে। এই ঝড় যদি শহরের দিকে, সচিবালয়ের দিকে রওনা দেয়- তাহলে এ সরকার টিকে থাকতে পারবে না। নেতাকর্মীদের বলব, আপনারা প্রস্তুতি নেন। এমন আন্দোলন কর্মসূচি আসবে যাতে এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতা তছনছ হয়ে যাবে। এই অত্যাচারী লুটেরা সরকারকে আমরা দেখতে চাই না।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোডে সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্বাস এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার নানা সময় নানা কথা বলেন। এরা পোড়ামাটির নীতি অবলম্বন করছে। দেশের মানুষ পুড়ে ছারখার হয়ে গেলেও তাদের কিছু আসে-যায় না। এরা মাটি চায়। গুম করে, খুন করে, জেলে ঢুকিয়ে, অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। অথচ, এখনো ক্ষমতার লোভ যায় না। কী আছে ক্ষমতায়! কোনো ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে মিছিল হলে সে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। অথচ আজ সারাদেশ এ সরকারকে না বলে দিয়েছে, তারপরও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। পৃথিবীর কোনো একনায়কতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসক টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না। পরে প্রত্যেককেই জনতার রোষাণলে পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ডিসি-এসপিদের উদ্দেশে বলেন- বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের কারো চাকরি থাকবে না। দলীয় কর্মীদের বলেন, বিএনপি এলে তোমরা কেউ বাঁচতে পারবে না। এগুলো বলে কর্মীদের ভয় দেখায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা হত্যা করে না। তারা কেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করবে। সবাই দেশের নাগরিক। তবে, ডিসি-এসপি রাষ্ট্রের কর্মচারী। তারা কোনো অন্যায় করলে প্রচলিত আইনে বিচার হবে, যেমনটা হয়েছে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। বিএনপি কাউকে হত্যা করার জন্য, চাকরি খাওয়ার জন্য, কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য আন্দোলন করে না। আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, চাল-ডাল-চিনিসহ এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি। দাম শুধু কমেছে মানুষের। ডেঙ্গুতে লোক মারা যাচ্ছে, সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। করোনায় মানুষ মারা গেল, সেখানে তারা ব্যবসা করলো। জনগণের প্রতি এদের কোনো মায়া-মমতা নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে শত শত সাংবাদিক থাকলেও সত্য লেখার ক্ষমতা নেই। ’৭৪ সালে যেভাবে চারটি বাদে সব গণমাধ্যম নিষিদ্ধ করেছিল, আজ একই কায়দায় গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। এরা আবার ক্ষমতায় আসলে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দিবে। আজকে কারো স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই আসুন সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জনগণের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করলে সরকারের কোনো লজ্জা নেই। তাই সরকারকে বলব, অবিলম্বে গণদাবি মেনে পদত্যাগ করুন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, আব্দুস সাত্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন