শুধু আমেরিকা নয়, এ দেশের জনগণও এই সরকারকে স্যাংশন দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক সমাবেশে এই মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু মার্কিন স্যাংশন নয়, এ দেশের মানুষ এখন স্যাংশন দিচ্ছে এই সরকারকে। এ দেশের মানুষ পরিষ্কার ভাষায় একবাক্যে বলছে, এখন অনেক হয়েছে, অনেক অত্যাচার করেছ, নির্যাতন করেছ, কারাগারে আটক করেছ আমাদের নেতাদের, আমাদের মাকে। আর আমরা সেটা হতে দেব না। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি। এখনো সময় আছে, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা ভেবে নিয়ে আপনারা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে এই রাজনৈতিক সংকট দূর করুন। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আপনারা যতই চেষ্টা করেন এই দেশের মানুষকে আর ঘরে ফেরাতে পারবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ আছি, শান্তিপূর্ণ থাকব, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করে যাব এবং আশা করব, এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা শুনে শেখ হাসিনার শুভবুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবেন। তা যদি না হয়, বাংলাদেশের মানুষ জানে কী করে দাবি আদায় করতে হবে। এ দেশের মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। টেনেহিঁচড়ে আপনাদের নামাবে। এটা আপনাদের জন্য ভালো হবে না।’
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। অনেক হাঁকডাক করে আমেরিকা গিয়েছেন। ভেবেছেন, ওখানে গিয়ে বাইডেনের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে পরিবারকে নিয়ে ছবি তুলে একটা সুরাহা বোধহয় করা যাবে। গেছে করা? উনি যখন আমেরিকায় বসে আছেন, ওই সময়ে আমেরিকার থেকে ভিসানীতি কার্যকর করা হলো। পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, যারা অতীতে দাঁড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, একটা সার্বভৌম দেশ ও জাতির জন্য যারা আমরা যুদ্ধ করেছি তাদের জন্য এটা খুব সম্মানজনক নয়। এই অসম্মান কে বয়ে আনল? এই অসম্মান বয়ে এনেছে এই ভয়াবহ দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকার। আজকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে, তারা একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে আজকে তারা জোর করে আবার একটা নির্বাচন করতে তৎপর।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একইভাবে আবার সেই একই কায়দায় সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি করছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা আবার অন্যায়ভাবে ব্যবহার করবে। আমাদের মানুষের যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, রাজপথের যে প্রতিবাদ- সেই প্রতিবাদকে তারা স্তব্ধ করে দেবে। আজকে দেশের কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহি পুলিশ কর্মকর্তা তারা আজকে আবারেও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, একটা বেআইনি সরকারকে আবার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য, গণবিরোধী সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য আপনারা দয়া করে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন না।’
বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকেল ৪টার মধ্যে নয়াপল্টনের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে ছড়াকার আবু সালেহ তার লেখা ছড়া ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা’ আবৃত্তি করে শোনান।
মন্তব্য করুন