বাংলাদেশের মানুষ কারও ধমকে ভয় পায় না; তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টায় শ্যামপুর থানার সম্মুখে বালুর মাঠ রাস্তায় শ্যামপুর-কদমতলী থানার অন্তর্গত ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৬০ ও ৬১নং ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাড. সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা। সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি সৈয়দ আহমেদ, সঞ্চালনা করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের অর্থ সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ সায়মন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক হাজী মুক্তার হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, রাজনীতিতে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের এই সময় পরিশ্রমী কর্মিবাহিনী একান্ত প্রয়োজন। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া পদ সর্বস্ব রাজনীতির দিন শেষ। এখন জেগে উঠার সময়।
তিনি বলেন, আমাদের সেই রকম আজকের প্রজন্মের নেতা-কর্মী দরকার যারা স্বপ্রণোদিতভাবে সক্রিয় থেকে নতুন ভোরের আলো ছড়াবে, নবসম্ভাবনা জাগ্রত করবে, নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। জনবিচ্ছিন্ন এবং নিষ্প্রভ কর্মিবাহিনী আমাদের কাম্য না। আমাদের কাম্য সেই নেতৃত্ব যারা নদীর মোহনা থেকে সাগর ডেকে এনে জনসমুদ্রতে রূপান্তরিত করবে। নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন তৃণমূল নেতৃত্ব আমাদের আজকের প্রত্যাশা। এই ওয়ার্ড সম্মেলনের মাধ্যমে আপনারা সেই নেতৃত্ব সৃষ্টি করবেন যাদের ডাকে জনসমুদ্র সৃষ্টি হবে, যে পর্বতসম বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পাহাড় চূড়ায় উঠার জন্য প্রস্তুত থাকবে। নেতৃত্বের সেই ভিত্তি আপনাদেরই সৃষ্টি করতে হবে আজকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি কঠোর পরিশ্রম করে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে হওয়া সত্ত্বেও একজন কর্মী হয়ে হেঁটে রাজনীতি করেছেন। কোনোরকম জাঁকজমক বা জৌলুশ ছিল না তার আচার-আচরণ, চাল-চলনে। অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে অনেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে। আমার প্রশ্ন ১৯৭১ সালে যখন রাজাকার, আলবদর, আল-সামস বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তখন এসব বিশ্ব বিবেকের ভূমিকা কী ছিল? তখন কি তারা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলেছিল? বা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল? এমনকি ২০০১ সালেও ওই জামায়াত-বিএনপি সরকার যখন সেই পাকিস্তানি কায়দায় আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের উৎখাত করেছিল, তখনো কি এই মানবিক মূল্যবোধের ধারক এবং বাহকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন? বাংলাদেশের প্রায় এক যুগের বেশি সময় যে অগণতান্ত্রিক মিলিটারি, স্বৈরশাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, সেই সময়ও কি তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে সরব ছিল? ১৫ আগস্ট যখন নারী-শিশু হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল কিনা, আমার তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। পরিষ্কারভাবে এখানে একটা পক্ষপাতিত্ব লক্ষণীয় এবং একটা দ্বিচারিতা বিরাজমান। এটা শেখ হাসিনার ওপর অন্যায় এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্যও খুবই দুর্ভাগ্যজনক অবিচার, যে এত প্রগতি এবং উন্নয়নের পরেও এসব সমাজের তথাকথিত বিবেকদের শাসন আমাদের বরদাস্ত করতে হয়। দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার! দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের হতভাগা জনগণের! বাংলাদেশের মানুষের যখন পরনে কাপড় থেকে বঞ্চিত, তখন তারা সবক দেয় নাই। বাংলাদেশের মানুষ যখন শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত তখন তারা নিষেধাজ্ঞা দেয় না। বাংলাদেশে মানুষ যখন দুর্ভিক্ষকবলিত তখন তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে খাদ্য জাহাজ মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন একটা সময় যখন এ দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়ে, এ দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন একটা সময় যখন বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নির্মূল করে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন আর এসব ধমকে ভয় পায় না। বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বাঙালি জেগে উঠবেই। শত বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালিকে টিকে থাকতে হয়। সুতরাং এসব সাময়িক মানুষ প্রদত্ত প্রতিকূলতা বাঙালি ভয় পায় না। এসব নিষেধাজ্ঞা এবং বঞ্চনাও বাঙালি বীরত্বের সাথেই মোকাবিলা করবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ওয়ার্ড পর্যায়ের যে নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে সেই নেতৃত্ব আমাদের সুখী-সমৃদ্ধ, শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। তার হাত ধরেই ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত রাষ্ট্রে। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যুবকদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথমত, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদেরই রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার যেন আবারও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে। সেই লক্ষ্যে আমাদের ৩টি কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমত, সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়াবার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনৈতিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, সর্বোপরি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ এবং গ্রুপিং বন্ধ করতে হবে।
মন্তব্য করুন