দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অবিলম্বে চলতি সংসদ বিলুপ্ত করে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন ও নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কর্মসূচি মোতাবেক আগামী ২৭ অক্টোবর সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ।
আজ শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ছাত্র ও যুবসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন ‘দিল্লি আছে তো আমরা আছি’ বলে দেওয়া বক্তব্যে প্রশ্ন আসে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করেন কি না? সরকার দেশে উন্নয়নের কথা বলে সঠিক, কিন্তু নির্বাচন আয়োজনে ভয় পায় কেনো? বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন হয়েছে, সরকারের বাবার টাকায় নয়। এ অবস্থায় আমরা বসে থাকলে চলবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ভোটাধিকার আদায় করে মান-সম্মান-ইজ্জত রক্ষায় সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন ডাকাতের নির্বাচন ছিল। উন্নয়নের নামে তারা মেগা, চুরি, ডাকাতি খুন করেছে। আবরারকে খুন করেছে। দেশকে লুটপাট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করব। ফিলিস্তিনিরা অধিকার আদায় করার জন্য বুলেটের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলে, অধিকার আদায় করার জন্য আমরাও ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত আছি। যখন আন্দোলনের আহ্বান আসবে তখনই আমাদের আন্দোলনের ময়দানে নামতে হবে। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হবে না। আগামী নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন হতে দেব না। দিল্লির গোলামী আমরা মানব না।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, যে কোনো ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে এই সরকারকে। ক্ষমতাকে ধরে রেখে দিনের ভোট রাতে করেছে। দিল্লির ভয় দেখিয়ে দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত ছাত্র যুবকদের ময়দানে থাকতে হবে।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের শাহাদাৎ কামনা করছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষ পেটনীতি করে না, তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। শিক্ষা সিলেবাসে নাস্তিকদের শিক্ষা প্রচলন করা হয়েছে। ইসলাম দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, মানুষের জীবন চরম অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। ছাত্ররা যখন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে তখন অন্য একটি ছাত্র সংগঠন লুটপাট ও দুর্নীতি করে অর্থপাচার করছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে এই সরকারের উন্নয়ন মানুষ গ্রহণ করবে না। অন্যান্য দেশে উন্নয়নে যে টাকা ব্যায় হয় শেখ হাসিনার আমলে তিন-চার গুণ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে তা জনগণ জানতে চায়। ভবিষ্যতে যাতে আর এক দফার আন্দোলন করতে না হয় সেজন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিসি- ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার অর্থ কি তাদের প্রলোভন দেওয়া নয়? ১৩ থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় কাজ করছে, কিন্তু আমার দেশের যুবকরা বেকার কেনো?
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে কোনো সময়ে বিস্ফোরণ ঘটবে। বাংলাদেশের মানুষ অবৈধ সরকার ও অবৈধ সংসদ দেখতে চায় না। তারা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। পীর সাহেব চরমোনাই জালিম সরকারকে নিরাপদে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছেন। ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী ১৪ ও ১৮ সালের মতো এবারও সংবিধানের দোহাই দিয়ে মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করতে চায়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ক্ষমতাকে ব্যবহার না করে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে জালিম সরকারের পতন ঘটাতে চাই। প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভোট দেওয়া যাবে না। ভোট দিতে হলে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে, বেলা ১১টায় শুরু হওয়া ছাত্র ও যুবসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাওলানা ইছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, জাতীয়তাবাদী যুব দল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
মন্তব্য করুন