দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করতে আগামী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
শনিবার (৮ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হলে দেশের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। এটা বর্তমানে আমাদের ভয়।’
দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাওয়ার বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে।’ এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি চাপ, তৎপরতা ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে জানতে তাইলে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সংলাপ হয় কিনা?’
তিনি বলেন, অতীতে সংলাপ করে কোনো লাভ হয়নি। তবে ভালো প্রস্তাব হলে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের ভেতরে জনগণের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের দেশগুলোতে ২৫-৩০ শতাংশ জনগণ ভোট দেয়। আর বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের নিচে ভোট পড়ে না। আমাদের দেশে নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ ভালো। বাংলাদেশে ১০০টির মতো রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে একটি বা দুটি দল অংশগ্রহণ না করলেও অধিকাংশই করে। যারা অংশগ্রহণ করেন না, তাদের আহ্বান করব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে।’
মোমেন বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা দেশে আসেন দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। কিন্তু অনেক সময় তারা এমন সব কথা বলেন, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল।’ তিনি বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা দেখায় উল্লেখ করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব দলকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই। যে দল অংশগ্রহণ করবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। কোনোদিন ভারতে সন্ত্রাসী দল নির্বাচনে আসেনি, যুক্তরাষ্ট্রে নাজি দল নাই এবং তারা গ্রহণযোগ্য নয়। এ দেশে সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে। তারা যদি নির্বাচনে না আসে, তা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। তবে কোনো সন্ত্রাসী দল যদি নির্বাচনে যোগ না দেয়, কোনো অসুবিধা নেই।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে? বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চায়, তবে আমাদের আপত্তি নেই। না এলেও দেশের ক্ষতি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারাই আসবেন তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের কোনো কিছুই লুকানোর নাই। বিদেশিরা এসে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ভালো বিষয়ে পরামর্শ দিলে আমরা স্বাগত জানাব। তারা আসুক, দেখুক। আমি আশা করি, তারাই তখন সার্টিফিকেট দেবে বাংলাদেশে দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘কিছু সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তাদের ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় পড়তে যায় এবং তারা সেখানে বাড়ি কেনে। ওরা একটু দুশ্চিন্তায় আছে। মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারও কারও ধারণা, আমরা চীনের দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছি। আমরা কারও লেজুড় না। আমরা কারও দিকে ধাবিত হচ্ছি না। সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকতে চায় না বরং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা যুদ্ধ ছাড়া সবকিছুই করেছি। তবে এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হয়নি।’
অনুষ্ঠানে ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন