কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সাবেক আমলাদের অভিমত

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ

সেমিনারে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ। ছবি: কালবেলা
সেমিনারে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ। ছবি: কালবেলা

দেশের সংকট থেকে উত্তরণে ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার একমাত্র সমাধান হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা বলে অভিমত দিয়েছেন সাবেক আমলারা।

তারা বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল ১৯৯৬ সালে, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত একটি রাজনৈতিক সমঝোতার ফসল। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা-দাবি-আন্দোলন এবং সর্বোপরি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনই হচ্ছে এই সরকার ব্যবস্থা। কিন্তু তা বাতিল করে দেশে চরম রাজনৈতিক সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর এই সংকট থেকে উত্তরণে ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার একমাত্র সমাধান হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, সেটা যে নামেই হোক।

শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং বিদ্যমান সংকট উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘পলিসি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি (পিএমআরএস)’-এর উদ্যোগে এই সেমিনার হয়।

সংগঠনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাবেক কর কমিশনার কাজী ইমদাদুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক যুগ্ম-সচিব বিজন কান্তি সরকার।

তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের আদেশ প্রদান করেন। বিচারপতি খায়রুল হক বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের ইচ্ছা এবং দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ফসল হিসেবেই সংবিধানে স্থান পেয়েছিল। কিন্তু পরে ওই রায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ বাতিল করে দেশে চরম রাজনৈতিক সংকট তৈরি করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ বলেন, ২০১১ সালের ১০ মে তারিখে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে চারজন বিচারপতি দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীন হতে পারে মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন এবং তিনজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো সাতজন বিচারপতিই অন্তত দুই টার্ম অর্থাৎ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে একমত ছিলেন। অথচ এ বিবেচনা উপেক্ষা করে ৩০ জুন ২০১১ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় এ বাতিল আদেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মূলত এখান থেকেই সংকটের জন্ম।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে ন্যক্কারজনক বিষয় হলো ১০ মে ২০১১ তারিখে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের ১৬ মাস পরে অর্থাৎ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে প্রকাশিত লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে পরে দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার বিষয় থেকে সরে এসে সংসদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেন। যা ছিল প্রফেশনার মিসকনডাক্ট এবং ফ্রড অন দ্য কোর্ট। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইন অনুষদের সাবেক ডিন ড. বোরহান উদ্দিন খান। স্বাগত বক্তব্য দেন পিএমআরএস-এর মহাসচিব ও সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. আবদুল বারী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি মো. আব্দুল কাইয়ুম, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান প্রমুখ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশকে এ গভীর সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রে ফিরে আসা, প্রকৃত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা নিশ্চিত করা। আর এটা সম্ভব একটি ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার মাধ্যমে।

তারা আরও বলেন, দলীয় সরকারের অধীন এদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ইতিহাস মোটেই সুখকর নয়। কারণ দেখা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কখনও পরাজিত হয়নি। অন্যদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত ’৯১, ’৯৬ ও ২০০১ এর তিনটি নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে।

সেমিনারে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম, সাবেক সচিব আব্দুর রশিদ সরকার, মনিরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মকসুমুল হাকিম চৌধুরী, মো. আব্দুল জাহের, সাবেক যুগ্ম সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, ড. এ কে এম জাহাঙ্গীর, তপন চন্দ্র মজুমদার, মুন্সি আলাউদ্দিন আল আজাদ, মোস্তাইন বিল্লাহ, ড. মো. আব্দুস সবুর, মো. আব্দুল খালেক, ড. মোহাম্মদ ফেরদৌস হোসেন, সাবেক উপসচিব নেয়ামতুল্লাহ ভূঁইয়া, মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী, কাজী মেরাজ হোসেন, ড. মো. মশিউর রহমান, মো. আফতাব আলী, মোহাম্মদ জাকির হোসেন কামাল, মো. আব্দুল মতিন, এ কে এম এহসানুল হক, ড. মো. সুরাতুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, মেজবা উন নবী, মাহফুজুল হক, সাজ্জাদ হোসেন, সাবেক সিনিয়র এ এস পি মো. শোয়েব, সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা সামসুল আলম, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম জাহিদ, তারেকুল ইসলাম মঈন, গাজী ইব্রাহিমসহ শতাধিক সাবেক সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু

রওনা দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা প্রস্তুতি ভেনেজুয়েলার

১০

দেশে হবে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

১১

ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বললেই পাবেন না ভিসা

১২

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে হতাহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান

১৩

আশুলিয়ায় বিপুল অবৈধ সিগারেটসহ আটক ২

১৪

স্কুলছাত্র রনি হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১৫

সরকারি অনুদানে নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রের মানোন্নয়নে সহযোগিতা করা হবে : মাহফুজ

১৬

শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালকের পদায়ন স্থগিতের দাবি

১৭

সিলেটে পাথর লুটে ১৩৭ নাম

১৮

মির্জা ফখরুলের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানালেন ডা. জাহিদ

১৯

ইতালিতে বাড়ছে অনিয়মিত অভিবাসী, শীর্ষে যে দেশ

২০
X