বাংলাদেশের শাড়ির সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আয়োজিত হলো এক অনন্য বাংলাদেশি শাড়ি প্রদর্শনী।
মনোমুগ্ধকর এই আয়োজনে তুরস্কে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের পরিবারবর্গ, আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ হ্যান্ডলুম শিল্প ও বুননশৈলীর মোহনীয় জগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের শাড়ির রঙিন সমাহার
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা ঐতিহ্যবাহী শাড়ির এক মনোমুগ্ধকর সমাহার দেখা যায়। এর মধ্যে ছিল সূক্ষ্ম হ্যান্ডলুম বুনন, জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশায় তৈরি ইউনেস্কো স্বীকৃত জামদানি শাড়ি, যেখানে বিশেষভাবে প্রদর্শিত হয় ৭৫ বছরের পুরোনো এক অনন্য সংগ্রহ। পাশাপাশি ছিল উজ্জ্বল রঙ ও মসৃণ টেক্সচারের জন্য খ্যাত রাজশাহী সিল্ক, হালকা ও আরামদায়ক টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি, একসময় ইউরোপীয় রাজপরিবারের প্রিয় এবং বর্তমানে পুনর্জাগরণের পথে থাকা ঐতিহাসিক মসলিন।
এছাড়া উৎসব ও বিয়ের জন্য আদর্শ ঝলমলে কাতান, জরি ও রেশমের জটিল নকশায় সজ্জিত ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই বেনারসি, সিলেট অঞ্চলের রঙিন বুননশৈলীর প্রতিফলন মনিপুরী শাড়ি, দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী তাঁত শাড়ি, সূচিশিল্পে গ্রামের জীবন ও প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলা নকশিকাঁথা শাড়ি, আর সাদা বেসে সোনালি বা রুপালি বর্ডারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য জনপ্রিয় গরদ শাড়ি। প্রদর্শনীতে এসব শাড়ির ইতিহাস, বুননশৈলী ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে প্রদর্শিত ভিডিওচিত্র অতিথিদের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে জীবন্ত করে তোলে।
অতিথিদের উচ্ছ্বাস – শাড়িতে ফ্যাশন শো
বাংলাদেশি শাড়ির রঙ, নকশা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে উপস্থিত অতিথিরা নিজেরাই শাড়ি পরে ছোট্ট এক ফ্যাশন শোতে অংশ নেন। অনেকেই ‘বৌয়ের সাজে’ সাজেন এবং আনন্দের সঙ্গে ছবি তোলেন। অনেকে শাড়ি সংগ্রহ করে স্যুভেনির হিসেবে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণীর বক্তব্য
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তুর্কি ও বিদেশি বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের স্বাদে আপ্যায়ন
প্রদর্শনী শেষে অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। অতিথিরা বাংলাদেশি খাবারের স্বাদে যেমন মুগ্ধ হন, তেমনি বাংলাদেশের অতিথিপরায়ণতায়ও অভিভূত হন।
সংস্কৃতির সেতুবন্ধন
বাংলাদেশ দূতাবাসের এ উদ্যোগ কেবল একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয় বরং তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্পকে পরিচিত করার এক সফল পদক্ষেপ। বাংলাদেশের হ্যান্ডলুম শিল্পকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করার একটি কার্যকর মাধ্যম।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত বিদেশি অতিথিরা যখন সরাসরি বাংলাদেশের শাড়ির সৌন্দর্য, বুননশৈলী ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তাদের মধ্যে এই পণ্যগুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়ে। ফলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি শাড়ি ও হ্যান্ডলুম পণ্যের চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সঙ্গে এমন উদ্যোগ স্থানীয় তাঁতিদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করতে পারে, কারণ বিদেশি ক্রেতারা যখন এ ধরনের পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী হন, তখন গ্রামীণ পর্যায়ের তাঁতিরাও তাদের কাজের ন্যায্য মূল্য পান। দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম শিল্পের টিকে থাকা ও বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
মন্তব্য করুন