কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়। ইসলামী শরিয়তে কোরবানির অর্থ হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে কোনো প্রিয় বস্তু তার দরবারে উৎসর্গ করা। কোরবানি কেবল পশু জবাই নয়; বরং এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের এক মহান নিদর্শন।
এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, কসাই বা সাহায্যকারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির মাংস দেওয়া কি শরিয়তসম্মত?
ইসলামি ফিকহ কী বলে?
ফতোয়ার কিতাব ‘কিফায়াতুল মুফতি’–তে (৮/২৬৫) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোরবানির পশু জবাইয়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেওয়া বৈধ, তবে কোরবানির পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না।
অর্থাৎ, কসাইকে তার শ্রমের পারিশ্রমিক দিতে হবে নগদ অর্থ বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে, কোরবানির মাংস, চামড়া, হাড় কিংবা কোনো অংশ দিয়ে নয়।
কোরবানির গোশত, চর্বি, হাড় ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে সেই অর্থ নিজের ব্যবহারে আনা যাবে না; বরং তা সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৮১)
পশুর চামড়া কোরবানিদাতা চাইলে নিজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে কেউ যদি তা বিক্রি করেন, তাহলে বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ সদকা করতে হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩০১)
পশুর দেহ থেকে চামড়া পৃথক করার আগে তা বিক্রি করাও নাজায়েজ। (দুররে মুখতার: ৬/৩২৯)
কোরবানির হাড় বিক্রি নিয়ে ভুল ধারণা
প্রতিবছর কোরবানির সময় দেখা যায়, কিছু মহাজন কোরবানির হাড় কিনে থাকেন এবং টোকাইরা বিভিন্ন বাসা থেকে হাড় সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করে দেন। সাধারণভাবে এই কেনাবেচা বৈধ হলেও, কোরবানিদাতা ব্যক্তি নিজ কোরবানির হাড় বিক্রি করতে পারেন না। যদি তা করেন, মূল্য সদকা করে দিতে হবে। এমনকি, যদি মহাজনেরা জেনে-বুঝে এসব হাড় টোকাইদের কাছ থেকে কিনে থাকেন, তাহলে সেটিও বৈধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২২৫; কাজি খান: ৩/৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩০১)
কোরবানি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ইবাদত। তাই এর প্রতিটি দিকেই ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি। কসাই বা কাজের লোকের হক আদায় করতে হবে অবশ্যই, তবে তা কোরবানির অংশ দিয়ে নয়- বরং যথাযথ পারিশ্রমিকের মাধ্যমে।
মন্তব্য করুন