আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ হলো নামাজ। নামাজ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নামাজ হলো দ্বীনের স্তম্ভ।’ অর্থাৎ, নামাজ ছাড়া ধর্মের ভিত্তি গড়ে ওঠে না।
রাসুল (সা.)-এর ভাষায়, ‘আমার চোখের স্নিগ্ধতা বা প্রশান্তি রয়েছে নামাজে।’ এ থেকেই বোঝা যায়, নামাজ শুধু শরীয়তের বিধান নয়, বরং তা একজন মুমিনের আত্মিক প্রশান্তির উৎস।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর এবং ফজরের নামাজ (কায়েম করো)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৭৮)
অন্য আয়াতে জামাতে নামাজ আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।’ (সুরা বাকারা : ৪৩)
কিন্তু যারা নিয়মিত বিভিন্ন অফিস-আদালত বা দোকানে কাজ করেন, তাদের অনেক সময় জামাত ছুটে যায়। একা নামাজ পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নামাজিই একটা সমস্যায় ভুগে থাকেন; সেটা হলো, ‘একাকী নামাজে আজান-ইকামত দেবেন কি না।’
চলুন, জেনে নিই একাকী নামাজে আজান-ইকামত জরুরি কি না-
মসজিদের বাইরে আপনি যখন একাকী নামাজ আদায় করবেন, তখন নিচু স্বরে আজান ও ইকামত দেওয়া মুস্তাহাব (উত্তম)। আর যদি আপনি আজান ও ইকামত না দেন, তাহলেও আপনার নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না এবং নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। এর কারণ হলো, আপনার এলাকার মসজিদের আজান-ইকামত ওই এলাকার সবার নামাজের জন্য যথেষ্ট বলে গণ্য হয়। অর্থাৎ, এলাকার মধ্যে যখন একবার আজান হয়ে যায়, তখন তা সেই এলাকার সব মুসল্লির জন্য প্রযোজ্য।
অতএব, আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি নিচু আওয়াজে আজান ও ইকামত দিয়ে নামাজ আদায় করেন। এটি সওয়াবের কাজ এবং নামাজের প্রস্তুতিতে বরকত বয়ে আনে। কিন্তু যদি কোনো কারণে আজান-ইকামত দিতে অসুবিধা হয়, তবে তা ছাড়াও আপনি নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং আপনার নামাজ পুরোপুরি সহিহ হবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ১/৫১০, বাদায়েউস সানায়ে : ১/২৭৭, আলবাহরুর রায়েক : ১/২৬৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫৩)
তবে, শরিয়ত অনুমোদিত কোনো অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গোনাহগার। (আবু দাউদ : ৪৬৪)
এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই। (বোখারি : ৬১৮)
মন্তব্য করুন