ঘুম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারাদিনের পরিশ্রম, দৌড়ঝাঁপ আর মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঘুমের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পায়। ইসলামে ঘুমকে শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, বরং আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ’। (সুরা নাবা : ৯-১০)
সুস্বাস্থ্যের জন্য রাতে নিয়মমাফিক ঘুমানো জরুরি। কিন্তু আমাদের আশপাশের অনেকেই মাগরিবের পরপরই ঘুমিয়ে যান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই প্রবণতা বেশি। তাই অনেকেই জানতে চান, এই সময়ে ঘুমালে কোনো ক্ষতি হয় কি না? আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, সন্ধ্যারাতে ঘুমানো শরিয়তের দৃষ্টিতে কি জায়েজ? চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নিই—
রাসুল (সা.) মাগরিবের পর ইশার আগ পর্যন্ত ঘুমানো অপছন্দ করতেন। এশার পর না ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করাও অপছন্দ করতেন। আবু বারজা আল আসলামি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (বোখারি : ৫৪১)
নবীজি (সা.) রাতে কখন ঘুমাতেন?
মহানবী (সা.) মাগরিবের পর কখনোই ঘুমাতেন না। এশার পর তিনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং এশার পর অহেতুক কথাবার্তা বা গল্পগুজব করে সময় নষ্ট করেননি। (সুনানে ইবনে মাজা : ৭০২)
হিশাম ইবনে উরওয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার বাবাকে (উরওয়া ইবনুয যুবায়ের) বলতে শুনেছি, একদিন এশার পর আমার খালা আয়েশা (রা.) আমাকে কথা বলতে শুনলেন। আমরা এমন একটি ঘরে ছিলাম যার ছাদ আমাদের ঘর ও তার ঘরের মাঝে ছিল। তিনি বললেন, হে উরওয়া! এখন কীসের গল্পগুজব? আমি রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো এশার নামাজের আগে ঘুমাতে দেখিনি, এশার নামাজের পর কথা বলতেও দেখিনি। তিনি হয় ঘুমিয়ে পড়তেন অথবা নামাজ পড়তেন। (শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি : ৪৯৩৫)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, মহানবী (সা.) মাগরিবের পর বা সন্ধ্যায় না ঘুমিয়ে এশার পর দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন। অহেতুক কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করতেন না। তিনি সন্ধ্যার ঘুম অপছন্দ করতেন এবং রাতের ঘুমকে গুরুত্ব দিতেন। তার জীবন ছিল রুটিনবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল।
সন্ধ্যার পর পর ঘুমানো কি জায়েজ?
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, মাগরিবের পর পরই ঘুমানো মাকরুহ। অনুচিত কাজ। কারণ এই সময়ে যারা ঘুমান তাদের অধিকাংশই এশার নামাজ আদায় করতে পারেন না। তাই বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া এই সময়ে ঘুম পরিহার করা প্রত্যেক মুমিনের ইমানি দায়িত্ব।
নবীজি (সা.) কতক্ষণ ঘুমাতেন?
ইমাম ইবনুল কাইয়িম তার ‘তিব্বুন-নববী’ গ্রন্থে বলেন, যদি কেউ নবীজির (সা.) ঘুম ও জাগরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, তবে সে দেখবে যে, তার ঘুম ছিল পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি রাতের প্রথম অংশে (এশার পরপর) ঘুমাতেন এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম অংশে (তাহাজ্জুদের সময়) জাগ্রত হতেন, তারপর মিসওয়াক করতেন, অজু করতেন এবং নামাজ আদায় করতেন। এতে তাঁর শরীর ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজনও পূর্ণ হতো এবং একইসঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও সওয়াবও লাভ হতো। নবীজি (সা.) কখনো অতিরিক্ত ঘুমাতেন না। নিজের শরীরের জন্য যতটুকু ঘুম প্রয়োজন, ততটুকুই ঘুমাতেন।
মন্তব্য করুন